সরকারী চাকরিজীবীদের জন্য নতুন জাতীয় বেতন ও পে-কমিশনের সুপারিশ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বুধবার সকালে পর্যবেক্ষণ কমিটি এ সুপারিশ অর্থমন্ত্রীর কাছে জমা দেন। সুপারিশগুলো প্রয়োজনীয় সংশোধন শেষে আসছে মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থাপন করা হতে পারে। অনুমোদনের পর প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে আগামী অর্থবছরের প্রথম দিন ১ জুলাই থেকে এটি কার্যকর করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মূল মাসিক বেতন সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২৫০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করেছে পে-কমিশনের প্রতিবেদন পর্যালোচনার জন্য গঠিত সচিব কমিটি। কমিটির প্রতিবেদনে বেতনের ধাপ ২০টি-ই বহাল রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। তবে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড থাকছে না। বুধবার সকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞার নেতৃত্বাধীন কমিটি সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেন। পরে দুপুরে ‘সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রতিবেদনের মূল বিষয় সাংবাদিকদের জানান। সচিব কমিটির প্রধান ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন ভূইঞা ও অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, বেতন ও চাকরি কমিশন সর্বোচ্চ ৮০ হাজার ও সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২০০ টাকা মূল বেতন ধরে নতুন বেতন কাঠামোর সুপারিশ করেছিল। সচিব কমিটি তাদের প্রতিবেদনে সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার এবং সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২৫০ টাকা সুপারিশ করেছে। এখন আমরা এটি মিনিস্ট্রিতে দেখবো, আমার কলিগদের সঙ্গে আলোচনা করবো। ৪ঠা জুনের আগে দেখবোই না। এটি কেবিনেটে যেতে যেতে মাস দুয়েক লাগবে। কিন্তু এটি ১লা জুলাই থেকে কার্যকর হবে। দুই ধাপেই এটা বাস্তবায়ন করা হতে পারে। আগেও তাই হয়েছে। নতুন পে-স্কেল পেয়ে সরকারি চাকরিজীবীরা সবাই খুশি হয়েছেন- সাংবাদিকদের এ কথার জবাবে তিনি বলেন, খুশি করার জন্য এটা দেয়া হয়নি। আগেরবার ৬২ শতাংশ বেতন বাড়ানো হয়েছিল। এবার কতটা বেড়েছে? প্রসঙ্গক্রমে সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের বেতন কি বাড়েনি? সময়ের সঙ্গে বেতন বাড়াটা খুব স্বাভাবিক। এ বিষয়ে পে কমিশন শতকরা হিসাবে অটো- বেতন বৃদ্ধির একটা সুপারিশ করেছে। এটা পর্যালোচনা করে দেখা হবে। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত বেতন কমিশন গত ২১শে ডিসেম্বর যে প্রতিবেদন দিয়েছিল তাতে ১৬টি গ্রেডে বেতন কাঠামো প্রস্তাব করা হয়েছিল। তবে পাঁচ সদস্যের সচিব কমিটির সুপারিশে আগের মতো ২০টি গ্রেড রাখার পক্ষে মত দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এখানে ২০টি ধাপই রয়েছে। আমার যেটা মনে হয়, এটাকে আর টাচ্ করা উচিত হবে না। নতুন এই বেতন কাঠামোর বাস্তবায়ন হলে প্রায় ১৩ লাখ সরকারি চাকরিজীবীর বেতন ৮৭ থেকে ১০১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে। এতে নিত্যপণ্যের বাজারে কতোটা প্রভাব পড়বে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, এটার কোন ইমপ্যাক্ট হয় না। অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকেরই বেতন বাড়ানো উচিত। প্রতিবছর অটোমেটিক্যালি হওয়া উচিত। প্রতিবেদনে এটি সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের বলেন, কমিটির সুপারিশ কমিশনের সুপারিশ থেকে কম হবে- এটাই স্বাভাবিক। অতীতেও তাই হয়েছে। কমিশনের রিপোর্ট দাখিলের পর বাজারের উপর কোন প্রভাব পড়েনি, তাই এ পর্যায়েও হওয়ার কোন যুক্তি নেই। এদিকে ফরাসউদ্দিনের বেতন কমিশনের প্রতিবেদন পাওয়ার পর তা পর্যালোচনার জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে আহ্বায়ক করে গত ১লা জানুয়ারি পাঁচ সদস্যের এই কমিটি করে সরকার। অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব এ কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন। আগের বেতন কাঠামোর মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের বেতন ও চাকরি কমিশন (অষ্টম কমিশন) গঠন করা হয়েছিল গত বছরের ২৪শে নভেম্বর। দায়িত্ব পাওয়ার প্রায় ১৩ মাস পর তারা প্রতিবেদন দেন। ওই প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, নতুন কাঠামো কার্যকর করতে সরকারের বেতন বাবদ খরচ বাড়বে ৬৩.৭ শতাংশ। এ জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সরকারের হাতে রয়েছে। এদিকে সচিব কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী চূড়ান্ত কাঠামো অনুমোদন করা হলে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা পদে যোগ দেয়া একজন চাকরিজীবীর মূল বেতন হবে মাসে ২৫ হাজার টাকার বেশি। আগের কাঠামোতে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের মূল বেতন ছিল ১১ হাজার টাকা। সর্বশেষ ২০০৯ সালে সরকারি কর্মকর্তা- কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো হয়। ওই অনুযায়ী বর্তমানে সরকারি চাকরিজীবীরা সর্বনিম্ন ৪,১০০ টাকা ও সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা মূল বেতন ধরে বেতন পাচ্ছেন। এর সঙ্গে তারা পাচ্ছেন মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে মহার্ঘ্য ভাতা, যা ২০১৩ সালের ১লা জুলাই থেকে কার্যকর করা হয়েছে। নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের দিন থেকে এই মহার্ঘ্য ভাতা বিলুপ্ত হবে।