নিজস্ব প্রতিবেদকঃ যমুনা নদীর অব্যাহত ভাঙন থেকে গাইবান্ধার সাঘাটা থানা সদর রক্ষা প্রকল্পের কাজ গত ৫ বছরেও শেষ হয়নি। এ পর্যন্ত প্রকল্পটির মাত্র ৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অথচ দু’বছরের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিলো। এর বাকী কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে কেউ তা সঠিক করে বলতে পারে না। এদিকে নদী ভাঙন রোধে গৃহীত এ প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময় শেষ না হওয়ায় উদ্বিগ্ন দিন কাটাচ্ছে সাঘাটা বন্দরবাসী। বর্ষা এলে প্রকল্প এলাকার বিভিন্ন স্থানে যমুনায় ভাঙন শুরু হলে তাদের উদ্বিগ্নতা আরও বেড়ে যায়। প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড় পেতে বিলম্বের কারণে ঢিমেতালে চলছে এর কাজ। সাঘাটা বণিক সমিতির সভাপতি সেলিম আহমেদ তুলিপ জানান, যমুনার অব্যাহত ভাঙনে থানা বন্দর বিপন্ন হয়ে পড়লে স্থানীয় জনগণ আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে। তারা মানববন্ধন,সভা সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ড,পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালায়।ইতিমধ্যে যমুনার ভাঙন এলাকা সাঘাটা থানা বন্দরের ২শ’ মিটারের মধ্যে এসে ঠেকে।এরই পরিপ্রেক্ষিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ২০০৭-২০০৮ অর্থ বছরে থানা বন্দর রক্ষায় প্রধান কার্যালয় জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণের আবেদন জানায়। এরপর উর্ধতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে পাউবোর স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ২০১০ সালের ১৫ জুলাই ডিপিপি তৈরী করে তা অনুমোদনের জন্য ঢাকায় প্রধান দপ্তরে পাঠায়। নানা প্রক্রিয়া শেষে ওই বছরই একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদন পায়।
এ প্রকল্পের আওতায় সাঘাটার উত্তরে মুন্সিরহাট থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণে হলদিয়া বাজার পর্যন্ত প্রায় ৫ কি.মি. এলাকা জুড়ে সিসি বক দ্বারা যমুনা তীর সংরক্ষণ কাজ হাতে নেয়া হয়। এজন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় ১৩৫ কোটি ৩৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা।এর মাধ্যমে প্রথম পর্যায় ১৭টি প্যাকেজে ৯০ কোটি ৬৫ লাখ ৪৬ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের মোট ৩ হাজার ৫শ’ মিটার অংশের কাজ সম্পন্ন করার পদক্ষেপ নেয়া হয়। সে অনুযায়ী ২০১২-১৩ অর্থ বছরের মধ্যে এ কাজ শেষ হওয়ার কথা। উলেখ্য, পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাইবান্ধা দপ্তর প্রণীত মূল ডিপিপিতে এ প্রকল্পে যমুনার ৫ হাজার ৫শ’ মিটার অংশে তীর সংরক্ষণের কাজ ধরা ছিলো। কিন্তু কারিগরি কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে তীর সংরক্ষণ কাজের দৈর্ঘ্য ৭০২ মিটার কমিয়ে ৪ হাজার ৭৯৮ মিটার নির্ধারণ করা হয়।২০১৩ সালের জুনের মধ্যে অর্থাৎ দু’বছরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।এ প্রকল্পের আওতায় যমুনা তীর শোপিং করে তাতে বালু, খোয়া এবং জিও টেক্সটাইল ফিল্টার ম্যাট্রেসিংয়ের পর তার উপর সিসি বক স্থাপন করার কথা।স্থান বিশেষে ৫ মিটার থেকে ১০ মিটার পর্যন্ত প্রশস্ত হয় এই সিসি বক স্থাপনের অংশ। এর পর থেকে নদীর ভেতর পর্যন্ত ২৬ থেকে ৩০ মিটার অংশে বালুভর্তি জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ও সিসি বক স্থাপনের মাধ্যমে লাঞ্চিং অ্যাপ্রোন সম্পন্ন করার কথা।কিন্তু অর্থ ছাড়ের মন্থর গতির কারণে প্রথম পর্যায়ে গৃহীত ১৭টি প্যাকেজের একটির কাজও সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি আজ পর্যন্ত। ভেস্তে গেছে দু’বছরের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা।
পরবর্তীতে দু’দফা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে সর্বশেষ ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত তা বর্ধিত করা হয়। এ পর্যায়ে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে প্রকল্পের অবশিষ্ট ১ হাজার ২৯৮ মিটার অংশের তীর সংরক্ষনের কাজের জন্য ৬টি প্যাকেজে টেন্ডার আহবান করে কার্যাদেশ দেয়া হয়। যার চুক্তি মূল্য ৪০ কোটি ৯৬ লাখ ২০ হাজার টাকা।কিন্তু সমুদয় প্রকল্প বাস্তবায়নে এ পর্যন্ত অর্থ ছাড় পাওয়া গেছে মাত্র ৫৩ কোটি ৮ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চলতি অর্থ বছরে নতুন করে আরও ১২ কোটি টাকা ছাড় পাওয়া গেছে। এ নিয়ে মোট অর্থ ছাড় পাওয়া যায় ৬৫ কোটি ৮ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। প্রকল্পের অবশিষ্ট ৭০ কোটি ৩১ লাখ ১১ হাজার টাকা কবে নাগাদ পাওয়া যাবে তা বলা যায় না। এদিকে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ এর বাস্তবায়ন কাজ ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত বর্ধিত করণের প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে প্রধান কার্যালয়ে।এদিকে প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতির কারণে প্রকল্প এলাকায় মুন্সিরহাট সংলগ্ন হাসিলকান্দি এবং হলদিয়া ও চিনিরপটল এলাকায় নতুন করে যমুনা নদীর ভাঙন শুরু হওয়ায় নদী ক্রমান্বয়ে ভেতরের দিকে অর্থাৎ পশ্চিম দিকে ঢুকে পড়ছে। এতে প্রকল্পের ডিজাইন পরিবর্তনের পাশাপাশি আরও অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজন দেখা দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। এদিকে প্রকল্পের সিসি বক নির্মাণ নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি প্রধান কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তোফায়েল হোসেনের নেতৃত্বে একটি টাস্কফোর্স প্রকল্প এলাকায় এসে সিসি বকের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং এসব বক বুয়েটে পরীক্ষার পর তা নদীবুকে ডাম্পিং করার নির্দেশ দেন। ফলে প্রকল্পের কাজ এখন থেমে রয়েছে।
এদিকে অর্থ সরবরাহের ধীরগতির কারণে ঠিকাদারদের কাজের গতিও শথ হয়ে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ সর্বশেষ মোট প্রকল্পের ৭০ ভাগ কাজের অগ্রগতি দেখালেও স্থানীয় বিভিন্ন মহলের মতে, কাজের অগ্রগতি হয়েছে সর্বোচ্চ ৬০ ভাগ। কাজের অগ্রগতির ঢিলেঢালাভাবের কারণে এলাকাবাসি উদ্বিগ্ন। কারণ বর্ষা এলেই প্রকল্প এলাকায় যমুনায় নতুন করে ভাঙন শুরু হয়। সামনে আবার বর্ষা আসছে।সাঘাটা বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গৌতম চন্দ্র মোদক বলেন,প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে বর্ষা এলেই সাঘাটাবাসির দুঃশ্চিন্তা বেড়ে যায়। তিনি দ্রুত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে এলাকাবাসিকে শংকামুক্ত করার জন্য পাউবো কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান।
গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ আরিফ উদ্দিন