,মালয়েশিয়ার উদ্দেশে সমুদ্রপথে পাচার হওয়া বাংলাদেশি ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে উঠেছে। খাবার-পানি ছাড়া নৌকায় ভেসে থাকা মানুষগুলো বাঁচার তাগিদে তীরে উঠতে চাইলেও মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দেনেশিয়া তাদের আশ্রয় দিচ্ছে না। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠনের হিসাবে এখনো সাগরের বুকে ভাসছে পাচার হওয়া প্রায় ছয় হাজার মানুষ। তাদের বহনকারী নৌকাগুলো এখন থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার কাছাকাছি উপকূল ও সাগরে এখনো ভাসছে। এদিকে, অবৈধ অভিবাসী ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে মালয়েশিয়ার সরকার। আর বাংলাদেশের কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সীমিত পাহারার কারণে মানবপাচার ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না তাদের। খবর:বিবিসি, এএফপি ও নিউ স্ট্রেইটস টাইমস অনলাইনের।
মালয়েশিয়ার উদ্দেশে বাংলাদেশি ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের পাচারের ঘটনা সাম্প্রতিককালে কয়েকগুণ বেড়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের শরণার্থ সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ মালয়েশিয়ার উদ্দেশে দেশ ছেড়ে গেছে। যাত্রা পথে নির্যাতন ও অনহারে প্রায় তিনশো জনের মৃত্যু হয়েছে। পাচার হওয়া এসব মানুষকে সাগরে কয়েক মাস নৌকায় ভেসে থাকতে হয়। এরপর থাইল্যান্ড হয়ে সীমান্ত দিয়ে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয় তাদের। সমপ্রতি মালয়েশিয়ার সীমান্তের কাছে থাইল্যান্ডের গভীর জঙ্গলে মানব পাচারকারীদের কিছু ক্যাম্প ও অভিবাসীদের গণকবর আবিষ্কারের পর পর বিষয়টি নিয়ে তোলপার শুরু হয়। থাই সরকার পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে।
ইতিমধ্যে দেশটিতে কয়েকজন পাচারকারী এবং কয়েক শ অবৈধ অভিবাসী আটক হয়েছেন। এ ঘটনার পর মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার সরকারও তাদের সমুদ্রসীমায় নজরদারি বাড়িয়েছে। গ্রেফতার এড়াতে মানব পাচার চক্রের সদস্যরা অভিবাসী বহরকারী নৌকা ছেড়ে চলে গেছে। নাবিকবিহীন নৌযানগুলো এখন সমুদ্রে ঘুরে-ফিরছে। এসব নৌকায় পর্যাপ্ত খাবার ও পানি নেই। গাদাগাদি করে থাকা এসব মানুষের অনেকেই অসুস্থ।
ইতিমধ্যে প্রায় তিন হাজার অভিবাসী মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার তীরে নেমেছে। তারপরও মালাক্কা প্রণালী ও আন্দামান সাগরে গত প্রায় দুই মাস ধরে ভেসে চলেছে আরো ছয় হাজারের মতো রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠনের আবেদন সত্ত্বেও এসব মানুষকে উদ্ধার ও আশ্রয়ে এগিয়ে আসছে না মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড। শনিবারও মালয়েশিয়ার নৌ-বাহিনী একটি অভিবাসী-ভর্তি নৌকা তাদের জলসীমা থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে।
একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে বলেন, এই নৌকাটি প্রথম থাইল্যান্ড যাওয়ার চেষ্টা করে তবে থাই নৌবাহিনী দুইবার তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়। তবে তারা নৌকার ইঞ্জিনটি মেরামত করে দেয় এবং আরোহীদের খাদ্য, পানি, জ্বালানি তেল ইত্যাদি দিয়ে মালয়েশিয়ার পথ দেখিয়ে সাগরে ছেড়ে দেয়। আর শুক্রবার থাইল্যান্ড-এর ফ্যাং এনগা প্রদেশে একটি দ্বীপে আরো ১০৬ জন অভিবাসীকে পাওয়া গেছে। অভিবাসীদের এই শোচনীয় পরিস্থিতির বিষয়ে ইউএনএইচসিআরের একজন কর্মকর্তা জেফরি স্যাভেজ রয়টার্সকে বলেন, সাগরে ভেসে থাকা এসব মানুষকে উদ্ধারে সমন্বিত তত্পরতার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তিনি অভিবাসীদের বাঁচাতে দেশগুলোতে একযোগে কাজ করার আহবান জানান।