সাতক্ষীরার কলারোয়ায় জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা থাকাকালে হত্যার উদ্দেশ্যে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার মামলায় ৫০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেছে আদালত। একইসঙ্গে বিচারক আগামি ২৮ জুন এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছেন।
মামলার বিবরণ থকে জানা যায়, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট খুলনার একটি কর্মসূচি সেরে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা কলারোয়ার হিজলদি ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী গনধর্ষনের শিকার মাহফুজা খাতুনকে সাতক্ষীরা হাসাপাতালে দেখতে আসেন। তিনি তাকে সান্ত্বনা দেন এবং সাতক্ষীরা শহরের হাসপাতাল মোড়ে এক পথ সভায় বক্তব্য দিয়ে এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। এরপর শেখ হাসিনা দুপুর ১২টার দিকে সাতক্ষীরা থেকে একদল সাংবাদিককে সাথে নিয়ে কলারোয়া হয়ে যশোর ফিরে যাবার সময় কলারোয়া বাজারে হামলার শিকার হন। সন্ত্রাসীরা খুব কাছ থেকে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়লেও তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এসময় উপর্যুপরি বোমায় কেঁপে ওঠে কলারোয়া।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাহস করে তার গাড়ি থেকে নেমে হামলাকারীদের কাছে দৃঢ়তার সাথে জানতে চান‘কি চাও তোমরা’। এ সময় তার নিরাপত্তাকর্মীরা দ্রুত তাকে গাড়ির ভিতরে নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এই হামলায় শেখ হাসিনা অক্ষত থাকলেও তার গাড়ির পতাকা স্ট্যান্ড ভেঙ্গে যায়। এ ছাড়া হামলার শিকার হয়ে আহত হন তার ৩০ সফরসঙ্গীর বেশ কয়েকজন । একই সময়ে আক্রান্ত হন সাংবাদিকরাও। তারা দ্রুত কলারোয়া থানায় আশ্রয় নিলেও সেখানেও হামলা করে যুবদল ক্যাডাররা। পরে থানায় বসে সাংবাদিকরা কারও নাম উল্লেখ না করেই পুরো বিষয়টি উদ্ধৃত করে একটি মামলা করেন। শেখ হাসিনার ওপর হামলার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের ডাকে ১ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরাসহ সারা দেশে হরতাল পালিত হয়।
এদিকে কলারোয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ মোসলেম উদ্দিন কলারোয়া থানায় শেখ হাসিনার ওপর হামলার বিষয়ে ২৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। পুলিশ মামলাটি রেকর্ড করতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি পরদিন আদালতে মামলাটি দেন। এই মামলায় ওসি গোলাম কিবরিয়া চার্জশিট না দিয়ে ফাইনাল দেন। সে সময় বর্তমান আওয়ামী লীগের কয়েক নেতা সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এবং কয়েকজন সাংবাদিক সাক্ষ্য দেন যে কলারোয়ায় শেখ হাসিনার ওপর হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। ফলে আদালত মামলাটি খারিজ করে দেয়। এ সময় বাদীর পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে এ মামলা পুনরুজ্জীবিত হবে’। এছাড়া সাংবাদিকদের দেওয়া মামলাটিও আদালত খারিজ করে দেয়।
এদিকে, ২০০৭ সালের ১৮ জুলাই উচ্চ আদালত কলারোয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেম উদ্দিনের মামলাটি পুনরুজ্জীবনের নির্দেশ দিলেও সে নির্দেশ সাতক্ষীরায় পৌছায় প্রায় ৮ বছর পর। সে অনুযায়ী গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর আদালত মামলাটি গ্রহণের জন্য কলারোয়া থানাকে নির্দেশ দিলে ১৫ সেপ্টেম্বর থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয় ( মামলা নং ১৫১/১৫)।
কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি ) আবু সালেহ মাসুদ করিম জানান, যে ৫০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে আরও রয়েছেন কয়লা ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রকিব, যুগিখালি ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম, যুবদল সভাপতি আশরাফ হোসেন, পৌর কাউন্সিলর আবদুল কাদের বাচ্চু, মির্জাপুরের তামিম আজাদ মেরিন, তুলশিডাঙ্গার জাভিদ রায়হান, ট্রলি শহিদুল, মনিরুল ইসলাম, ইয়াসিন আলি, শেলি, আলতাফ হোসেন, নাজমুল হোসেন, কনক, টাইগার খোকন, রিপন, মজিদ, সামাদ, খালেদুজ্জামান রোমেল, কামরুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, বিদার হোসেন, সোহাগ, মাহফুজ মোল্লা, মাহফুজুর রহমান, সনজু, কামরুজ্জামান, গোলাম রসুল, সাইফুদ্দিন, সাহেব আলি, সিরাজুল ইসলাম, আবদুর রাজ্জাক, আবদুস সামাদ, মফিজুল ইসলাম, হাসান আলি, ময়না, জহিরুল ইসলাম, আবদুল মালেক, মাজহারুল হক, নজরুল ইসলাম ও মো. আলাউদ্দিন ।