০১৫-১৬ অর্থবছরে ঘোষিত বাজেট ‘উচ্চাভিলাষী’ স্বীকার করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, এ উচ্চাভিলাষী বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। এজন্য এনবিআরও প্রস্তুত। এনবিআরের লোকবল বাড়ানো হয়েছে। এর সঙ্গে দক্ষতাও বেড়েছে। তিনি একই সঙ্গে নূ্যনতম আয়করের সীমা পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
সোমবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে কর কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
গত দুই অর্থবছরে বড় অঙ্কের ঘাটতির মুখেও আগামী অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের জন্য রাজস্ব আদায়ে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অঙ্কের লক্ষ্যমাত্রা_ এক লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা নির্ধারণ করে অসম্ভবকে সম্ভব করার সাহস দেখিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। শুধু রাজস্ব নির্ধারণই নয়, লক্ষ্যমাত্রা পূরণের সূত্রও তিনি এঁকে দিয়েছেন গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট পেশকালে।
তবে খোদ রাজস্ব বোর্ডেরই লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আপত্তি ছিল। তা আমলে না নিলেও বাজেট বক্তৃতাকালে আবুল মাল আবদুল মুহিত স্বীকার করেন, আগামী লক্ষ্যমাত্রা চলতিবারের তুলনায় ৩০.৬২ শতাংশ বেশি, যা সত্যি উচ্চাভিলাষী। আগামী দিনে দুই লাখ আট হাজার ৭৭০ কোটি টাকার রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রায় এনবিআর থেকে আদায় হবে এক লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১০.৩ শতাংশ।
প্রস্তাবিত বাজেটে আগামী অর্থবছরে আয় ও করপোরেট কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৬৫ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা। স্থানীয় মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) ৪৪ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা, স্থানীয় সম্পূরক শুল্ক ১৯ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা, আমদানি ও রপ্তানি পণ্যে শুল্ক ১৮ হাজার ৮৭৫ কোটি টাকা, ভ্যাট ২১ হাজার ৫১৮ কোটি টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ছয় হাজার ১৪৩ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমানের রাজস্ব আদায়ের প্রধান খাত হচ্ছে আয়কর। এই আয়কর আদায়ের মূল ভরসা হলো এনবিআরের সার্ভের মাধ্যমে যাদের তথ্য পাওয়া গেছে সেসব ব্যক্তির ওপর করারোপ। এবার ওখানেই আক্রমণ করা হবে। এছাড়া ঢাকার বাইরে জরিপ করে কর দিতে সক্ষম লোকদের খুঁজে বের করা হবে।
রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এবার একটি ধাক্কা দেয়া হবে বলে শুক্রবার বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সোমবার তিনি জানালেন, রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কর কর্মকর্তাদেরই ‘ধাক্কা’ দেয়া হবে।
তিনি বলেন, তার নিজের অফিসে, তার কর্মকর্তাদের ওপর ধাক্কা দেয়া হবে। কীভাবে আরো সুচারুভাবে রাজস্ব আহরণ করা যায়_ এটিই তো একটি ধাক্কা।
নূ্যনতম কর ৪ হাজার টাকা পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, সংসদে আলাপ-আলোচনার পর নূ্যনতম করের পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে। এক্ষেত্রে ঢাকা ও চট্টগ্রামের করহার অভিন্ন হবে। সিটি করপোরেশন ও দেশের অন্যান্য এলাকায় জন্য পৃথক হারে নূ্যনতম কর নির্ধারণ হবে।
অর্থমন্ত্রী জানান, ২০১৮ সালের মধ্যে দেশের সব উপজেলায় আয়কর অফিস করা হবে। এছাড়া এ সময়ের মধ্যে সম্পূরক শুল্ক উঠিয়ে নেয়া হবে বলে জানান তিনি।