গাইবান্ধা জেলার সাঘাটায় যমুনা নদীর ভাঙন রক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বরাদ্দকৃত ১শ ৩৫ কোটি টাকায় বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পের কাজে নিম্নমানের বালু, পাথরসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। এদিকে সিসি বক নির্মাণেও নিম্নমানের বালু ও পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া জিও টেক্সটাইল ব্যাগেও মোটা বালুর পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে বাধের পাশ থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে তোলা কাঁদা যুক্ত চিকন বালু। তাও আবার ধীর গতিতে এর ফলে ভাঙ্গ ঠেকানো কোনো ভাবেই সম্ভব হচেছ না । প্রতিদিন নতুণ নতুণ এলাকায় ভাঙ্গণ দেখা দিচ্ছে।
বর্তমানে সাঘাটা উপজেলার গোবিন্দি গ্রামে নদী ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারন করেছে গত এক সপ্তাহে এই যায় জায়গায় ভাঙ্গনের কবলে ৫ শতাধিক পরিবার বিভিন্ন বাধে আশ্রয় নিয়েছেন। সরোজমিনে গিয়ে দেখায় যায় গোবিন্ধি কবর স্থান ও ঈদগাহ মাঠ সহ প্রায় ৫০ বিঘা জমি নদী গর্ভে বিলিন হয় । ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা করতে কয়েক লাখ টাকা ব্যয়ে ১৯৯৭ সালে নির্মিত গোবিন্ধি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাত্র ৯১ হাজার টাকায় নিলামে/ওয়াকশনে বিক্রয় করা হয়েছে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড এই স্থানে ভাঙ্গন প্রতিরোধে কোন কাজ করতে দেখা যাচ্ছে না ।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সুত্রে জানা গেছে, যমুনা নদীর ভাঙন থেকে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার সাঘাটা বাজার, সাঘাটা থানা ভবন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রক্ষায় ভাঙ্গন প্রতিরোধ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১শ’ ৩৫ কোটি টাকা। এই টাকা দিয়ে যমুনা নদীর চার দশমিক আট কিলোমিটার এলাকায় সিসি বক, বালুভর্তি জিও টেক্সটাইল ব্যাগ স্থাপন করে সাঘাটা বাজারের উত্তরে মুন্সিরহাট হতে দক্ষিণে চিনিরপটল পর্যন্ত তীর সংরক্ষণ কাজ চলছে।
তিন পর্যায়ে দরপত্র আহবান করে ১৩ জন ঠিকাদার এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন। ২০১০ সালের জুলাই মাসে কাজ শুরু হয়। গত ৩০ মে পর্যন্ত ৭০ ভাগ কাজ হয়েছে। প্রাক্কলন অনুযায়ি সিসি বক তৈরিতে সিমেন্ট, বালু ও পাথর ব্যবহারের অনুপাত হবে ১ঃ৩ঃ৬ (একভাগ সিমেন্ট, তিনভাগ মোটা বালু ও ছয়ভাগ পাথর মিশ্রণ)। ৩৫. ৪০ ও ৪৫ ঘন সেন্টিমিটারের তিন আকারের সিসি বক তৈরি হচ্ছে। চিনিরপটল গ্রামের ব্যবসায়ী গোলাম হোসেন বলেন, জিও ব্যাগ পলি মাটি দিয়ে ভরাট করতে দেখা গেছে। এছাড়াও মোটা বালুর পরিবর্তে কাঁদা মিশ্রিত চিকন বালুও ব্যবহার করা হচ্ছে।
গাইবান্ধা জেলার ভাঙ্গন কবলিত এলাকা গুলো হচ্ছে , ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর ইউনিয়নের চন্দনস্বর, উত্তর খাটিয়ামারী, পূর্ব খাটিয়ামারী, পশ্চিম খাটিয়ামারী, কুচখালী, কাউয়াবাঁধা গ্রাম জুড়েই ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। একই উপজেলার উদাখালী ইউনিয়নের সিংড়িয়া, উড়িয়ার রতনপুর, কালাসোনা, গজারিয়ার কামারপাড়া, জিয়াডাঙ্গা, কি পাড়ার রসুলপুর, পূর্ব কি পাড়া, জোড়াবাড়ি, সাতারকান্দি, ফজলুপুর ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর ও খাটিয়ামারী গ্রামেও নদী ভাঙন অব্যাহত আছে।
সাঘাটা উপজেলার সাঘাটা ইউনিয়ন ও গোবিন্দী গ্রাম ও গজারিয়া ইউনিয়নের জিয়াডাঙ্গা গ্রাম ও ঘুরিদহ ইউনিয়নের চিনিরপটল হলয়িা ইউনিয়নের গোবিন্দ পুর গ্রাম ভাঙ্গনের কবলে।
এছাড়া তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদী তীরবর্তী সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুরসহ ৬টি ইউনিয়নের নিজামখাঁ, খোঁদ্দারচর, চরচরিতাবাড়ি, কানিচরিতাবাড়ি, রিয়াজ মিয়ারচর, উজান বুড়াইল, ভাটি বুড়াইল, কেরানির চর, কালাইসোতার চর, চর বিরহীম, ভোরের পাখি, কালিরখামার চর এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে নদী ভাঙ্গন অব্যাহত থাকায় গৃহহীন পরিবারগুলো খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ভাঙ্গন আতঙ্কে রয়েছেন শতশত পরিবার, স্কুল, আদর্শ (গুচ্ছ) গ্রাম, গো-হাট, বেসরকারী সংস্থাসহ অনেক স্থাপনা। তাদের একমাত্র ভরসা অন্যের বাড়ীতে আশ্রয় অথবা ওয়াপদা বাঁধে বাঁধ।
সাঘাটা ইউ পি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন সুইট জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলায় গোবিন্দিতে নদী ভাঙ্গন কোন ভাবেই বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না । যে সময়ে কাজ করার কথা ছিল সেই সময় যদি এই ভাঙ্গন প্রতিরোধে ব্যবস্তা নেয়া হতো তাহলে গোবিন্ধি কবর স্থান ও ঈদগাহ মাঠ নদী গর্ভে বিলিন হতো না । ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা করতে গোবিন্ধি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিলামে ৯১ হাজার টাকায় বিক্রয় করা হয়েছে।