আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বক্তব্যে দেশবাসীর মতো হতাশ বিএনপি। বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গতকাল দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির মুখপাত্র ও আন্তর্জাতিক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন এ হতাশা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, জনপ্রশাসনমন্ত্রী ও শাসকদলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বক্তব্যে দেশবাসীর মতো বিএনপিও হতাশ। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি নিরপেক্ষ সরকারের রূপরেখা নিয়ে শাসক দলের সঙ্গে আলোচনা করতে চায় বিএনপি। দেশবাসীর আশা, জেদাজেদি ভুলে দেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে শাসকদল আমাদের আহ্বানে সাড়া দেবে। কিন্তু সৈয়দ আশরাফ বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচনও শেখ হাসিনার অধীনে হবে।’ আমরা তার এ বক্তব্যে হতাশ। আশরাফের বক্তব্যে আমরা আশঙ্কা করছি, আগামী নির্বাচনও ৫ই জানুয়ারির মতো একতরফা ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচন হবে কিনা? ড. রিপন বলেন, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে শতকরা পাঁচজন লোকও ভোট দেননি। সে নির্বাচন ছিল ভোটারবিহীন। এ ধরনের নির্বাচনে গঠিত সরকার নির্বাচিত সরকার হিসেবে পরিগণিত হয় না। বিএনপির মুখপাত্র বলেন, সরকারের লোকেরা বলছেন- ‘সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে।’ আমার প্রশ্ন, সংবিধান তো আগেও ছিল। সেই সংবিধানকে বদলিয়ে শাসকদল দেশে বিষবৃক্ষ রোপণ করেছে। এ বিষবৃক্ষের ফলে রাজনীতি আজ জর্জরিত। ড. রিপন বলেন, আইনি বাধ্যবাধকতার নির্বাচন বলে দ্রুতই পরবর্তীতে সকল দলের অংশগ্রহণে আবার একটি নির্বাচন হবে বলে আওয়ামী লীগ যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা সে অবস্থান থেকে সরে আসায় দেশে শাসকদলীয় বিনাভোটের এমপিদের, শাসকদলীয় ক্যাডারদের দাপুটে বেপরোয়া আচরণে আজ দেশবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তাদের হাতে শিক্ষক, সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তারা পদে পদে নিগৃহীত ও লাঞ্ছিত হচ্ছেন। প্রশাসনের লোকজন সারাক্ষণ আতঙ্কে থাকেন, কখন তাদের ওপর শাসকদলের ক্যাডাররা হাত তোলে। সম্প্রতি জেলা প্রশাসক সম্মেলনে তারা এসব তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, সরকারের লোকেরা সন্ত্রাস ও দুর্নীতি করে সারা দেশ কাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন। মায়ের গর্ভেও আজ শিশুরা নিরাপদ নয়। সুশাসন না থাকায় দেশে অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এসব সরকারের জন্য সংকট। সরকার কেন এগুলো সংকট হিসেবে দেখছে না তা আমাদের বোধগম্য নয়। দেশে গণতন্ত্রের উত্তরণের জন্য গণফোরাম সভাপতি ড. কামালের উদ্যোগকে সমর্থন করে বিএনপির মুখপাত্র বলেন, তিনি সম্প্রতি দেশের গণতন্ত্রহীনতা থেকে উত্তরণে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন। গণতন্ত্রের প্রশ্নে তারা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন- তার সঙ্গে আমাদের দল সহমত পোষণ করে। আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় যে কোন উদ্যোগকে স্বাগত জানাই, সাধুবাদ জানাই এবং সমর্থন করি। বর্তমান এবং ভবিষ্যতেও আমাদের এ সমর্থন থাকবে। ড. রিপন বলেন, দেশের বিরোধী দলগুলোকে তাদের সাংবিধানিক অধিকার অনুযায়ী রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে বাধা না দিয়ে এবং দ্রুত একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সরকার এ সংকট থেকে বাঁচতে পারে। কারণ এটা প্রমাণিত যে, ক্ষমতাসীনদের অধীনে দেশে নিরপেক্ষ নির্বাচনের আর কোন পথ খোলা নেই। সেজন্য আমরা আবারও সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, দ্রুত একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে এখনই করণীয় নির্ধারণে সবার সঙ্গে আলোচনার একটি প্রক্রিয়া শুরু করা হোক। তিনি বলেন, বিএনপি শাসকদলকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে এবং আশ্বস্ত করছে যে, দেশে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আমরা ক্ষমতায় গেলে তাদের মতো প্রতিহিংসার রাজনীতি করব না। কারণ, বিএনপি কোন গেরিলা দল নয়, বিপ্লবী দলও নয়। নির্বাচনে পরাজিতদের সুপরামর্শ গ্রহণ করে সবাইকে সঙ্গে নিয়েই সরকার ও দেশ পরিচালনা করবে বিএনপি। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তসহ আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকে ‘কোণঠাসা’ আখ্যায়িত করে তাদের উদ্দেশ্য করে ড. রিপন বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি শাসকদলের ক্ষমতা হারানো কোণঠাসা কিছু ব্যক্তি বিএনপি ও তার নেতৃত্ব নিয়ে কটূক্তি করে মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণের মাধ্যমে পত্রিকার পাতায় নিজেদের বাঁচিয়ে রাখার নির্লজ্জ প্রয়াস চালাচ্ছেন। সুুরঞ্জিত ও গম কেলেঙ্কারির হোতাসহ অন্যদের দুর্গতির কারণ কি? তাদের মতো অন্যদেরও আয়নার সামনে দাঁড়াতে আমরা আহ্বান জানাই। একই সঙ্গে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তদের বিএনপির জন্য মায়াকান্না না করারও আহ্বান জানান দলটির মুখপাত্র।
৫২ হাজার মানুষের আনন্দে আনন্দিত বিএনপি: ছিটমহলের বন্দিজীবন থেকে মুক্ত হওয়া ৫২ হাজার মানুষের মুক্তির আনন্দে বিএনপিও আনন্দিত বলে জানিয়েছেন দলটির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, শুক্রবার রাত ১২টার পর বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ঐতিহাসিক ল্যান্ড বাউন্ডারি এগ্রিমেন্ট জাতীয় পার্লামেন্টে র্যাটিফাই হওয়ায় ১৬২টি ছিটমহল বিলুপ্ত হয়ে দু’দেশের পতাকা উড্ডীন হয়েছে সেখানে। ৫২ হাজার মানুষের ৬৮ বছরের কান্নাভেজা মুক্তির আনন্দে আমরাও আনন্দিত। বাংলাদেশের নতুন এসব নাগরিকরা আমাদের মূলধারায় মিশে যাবেন, এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাদের আনন্দে আনন্দিত। তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালে এসব ছিটমহল নিষ্পত্তিতে বাংলাদেশ-ভারতের সঙ্গে যে চুক্তি করেছিল-ভারত বহু বছর পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে তা অনুমোদন করা হয়েছে। এ জন্য আমরা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, তার সরকার ও ভারতের অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে আগেই অভিনন্দিত করেছিলাম। ড. রিপন বলেন, বাংলাদেশের নতুন ৫২ হাজার নাগরিক যাতে সংবিধান অনুযায়ী সমতার দৃষ্টিতে সকল সুযোগ-সুবিধা পান- তা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আমরা আহ্বান জানাই। বাংলাদেশের ভূখণ্ডে মিশে যাওয়া বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোর ওইসব অঞ্চলের মানুষদের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সকল উদ্যোগ নেয়ার জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান, সহ-আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, আবদুস সালাম আজাদ, আবদুল লতিফ জনি, শামীমুর রহমান শামীম, আসাদুল করিম শাহীন ও মোস্তাফিজুল ইসলাম বাবুল উপস্থিত ছিলেন।