ভোলায় এবছর আখ চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় আখের স্তুপে স্থানীয় বাজারগুলো ভরপুর রয়েছে। এদিকে আগেভাগে আখের বাজারে এনে অনেক চাষী লাভবান হলেও বর্তমানে আখের সংখ্যা বাজারে বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারমূল্য একটু কমতে শুরু করেছে। আবার কেউ কেউ ভালো দাম পাওয়ার আশায় এখন ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছেন। গত বছরের তুলনায় বাজার মূল্য এবার একটু ভালো থাকায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। ভোলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবছর ভোলা জেলার ৭ উপজেলায় ৬১৩ হেক্টর জমিতে আখের আবাদ হয়। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১২০ হেক্টর, দৌলতখান উপজেলায় ২০ হেক্টর, বোরহানউদ্দিনে ১২০ হেক্টর, তজুমদ্দিনে ৩২ হেক্টর, লালমোহনে ৬৫ হেক্টর, চরফ্যাশনে ২৫০ হেক্টর ও মনপুরা উপজেলায় ৬ হেক্টর জমিতে আখের আবাদ হয়। জানা গেছে, ভোলা জেলায় এবছর অনুকুল আবহাওয়ার পরিবেশ কিছুটা ভালো থাকায় জেলার বিভিন্ন স্থানে আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। জেলার বিভিন্ন উপজেলার হাট-বাজারে প্রতিদিন সকালে থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা থেকে আখ চাষীরা তাদের উৎপাদিত রসালো আখ বিক্রয়ের জন্য নিয়ে আসেন। জেলায় চিনি কল না থাকাই বড় বড় পাইকারি ও খুচরা ক্রেতারা কিনে নিয়ে স্থানীয় হাট-বাজার ও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশি লাভের আশায় চালান করছেন। আখ চাষীদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, গত ২/৩ বছর বন্যার ও জোয়ারের কারণে রোপা-আমন ধান, অন্যান্য ফসল সহ শাক-সবজির ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় বছরের এই সময়ে কৃষকদের কাজকর্ম না থাকায় তারা চরম অর্থ সংকটের কবলে পড়তে হয়। এখন থেকে কিছুটা উত্তরণের জন্য স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শক্রমে বিকল্প অর্থকারী ফসল হিসেবে অনেক কৃষকই আখ চাষে মনোযোগী হয়ে উঠছে। চরফ্যাশন উপজেলার এওয়াজপুর ইউনিয়নের আখ চাষী মো. হোসেন জানান, তিনি এবার ৪০ শংতাশ জমিতে আখের চাষ করেছেন। যদিও আখ চাষ ধানের চেয়ে বেশি সময় লাগে কিন্তু প্রাকৃতিক দূর্যোগের কবল থেকে একটু রেহাই পাওয়ার জন্য তারা আখ চাষে ঝোঁকে পড়ছেন। রসুলপুর ইউনিয়নের শশীভূষণ গ্রামের আখ চাষী মো.মাকসুদুর রহমান জানান, তিনি ২৪ শংতাশ জমিতে আখের চাষ করেছেন। প্রতি বছর আখ চাষের যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে প্রায় দ্বিগুণ লাভ হয়ে থাকে। এবছরও লাভবান হবেন বলে তিনি অনেকটা আশা প্রকাশ করেন। লালমোহন উপজেলার আসলী গ্রামের আখ চাষী আব্দুল খালেক জানান, তিনি ২০ শংতাশ জমিতে আখের চাষ করেছেন। প্রতি বছরের ন্যায় এবারো আখের ফলন ভালো হয়েছে। বছরের জুন হতে নভেম্বর মাস পর্যন্ত জমি হতে আখ কেটে বিক্রয় করার মৌসুম। আর এই সময়ে প্রতিদিন ভোর হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্থানীয় বাজারগুলোতে তিনি নিজেই আখ বিক্রি করে দামও ভালো পাচ্ছেন বলে জানান। আখ বিক্রির সঙ্গে জড়িতরা জানান, বাজারে পাইকারি হিসেবে প্রতিটি ভালো আখ ২৫ থেকে ৩০ টাকা করে বিক্রয় করা হয় আর খুচরা ব্যবসায়ীরা প্রতিটি আখ ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রয় করে থাকি। প্রতিদিন সকালে বিভিন্ন এলাকা থেকে বড় বড় পাইকারি ও খুচরা ক্রেতারা আখ কিনে স্থানীয় হাট-বাজার ও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশি লাভের আশায় চালান করছে। ভোলা থেকে উৎপাদিত আখ জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রতিবছরই বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হয়ে থাকে। এব্যাপারে ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ উপ-পরিচালক প্রশান্ত কুমার শাহা জানান, মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভোলায় প্রতিবছরই আখের ভালো ফলন হয়ে থাকে। গত বছর জেলায় ৫২৮ হেক্টর জমিতে আখ চাষবাদ করা হলেও এ মৌসুমে ৬১৩ হেক্টর জমিতে উন্নত জাতের আখের চাষ হয়েছে। আখ চাষে কৃষকরা অনেক লাভবান হওয়ায় এর প্রতি ঝোকছেন। এই বছর প্রতি হেক্টর জমিতে ৪৫ মেট্ট্রিক টন আখ উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও তিনি জানান। – See more at: http://www.priyo.com/2015/Oct/20/175361-.html#sthash.hkSEOq14.dpuf