নিরাপদ সড়ক দিবস আজ। সড়ককে নিরাপদ করার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় প্রতি বছর ২২ অক্টোবর এ দিবসটি পালিত করা হয়। ‘চালক-মালিক, যাত্রী-পথচারী ভাই ভাই, সড়ক দুর্ঘটনামুক্ত বাংলাদেশ চাই’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে ‘নিরাপদ সড়ক’ চাই (নিসচা) প্রতিবারের ন্যায় এবারো ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
এ উপলক্ষে নিরাপদ সড়ক চাইসহ (নিসচা) বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি নিয়েছে। সকাল ১১টায় নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর উদ্যোগে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি র্যালি অনুষ্ঠিত হবে। র্যালিটি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সামনে (সেগুনবাগিচা) থেকে শুরু হয়ে মৎসভবন, হাইকোর্ট, দোয়েল চত্বর হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে সমাপনী সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হবে।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) মো. আছাদুজ্জামান মিয়া। দুপুরে নিসচা নেতৃবৃন্দ বনানীতে জাহানার কাঞ্চনের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে কবর জিয়ারত ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বিকেলে বাদ মাগরিব নিসচা প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে মিলাদ মাহফিল।
দিবসটি উপলক্ষে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে নিসচার চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, চলতি বছরের ৯ মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ১৮৫ জনের। তিনি বলেন, এই মৃত্যু অনেক দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগে, এমনকি যুদ্ধ চলা দেশগুলোর মৃত্যুর চেয়ে বেশি। তিনি আরও জানান, গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় দেশে ৪ হাজার ৫৩৬ জন নিহত হয়েছে।
ইলিয়াস আরও কাঞ্চন বলেন, দেশে শুধু আইন করে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা যাবেনা, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার জন্য সরকার, গাড়ি চালক ও আইন শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর পাশাপাশি সচেতন হতে হবে সাধারণ মানুষকেও।
১৯৯৩ সালের এই দিনে চট্টগ্রামে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চন। ওই বছরই দেশব্যাপী ক্রমবর্ধমান সড়ক দুর্ঘটনা নিরসন ও সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে গঠিত হয় নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) সংগঠন। এরপর থেকে প্রতি বছর নিরাপদ সড়ক দিবস পালন করে আসছে নিসচা। ১৯৯৩ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত সাধারণ সামাজিক সংগঠন হিসেবে দিবসটি পালিত হলেও ২০০৩ সাল থেকে সরকারিভাবেও দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
বুয়েটের দূর্ঘটনা অনুষদের তথ্যমতে দুর্ঘটনায় নিহতের ৫৪ শতাংশই পথচারী। এদের ১৩ শতাংশ যানবাহনের মুখোমুখী সংঘর্ষে, ১২ শতাংশ পেছন থেকে গাড়ীর আঘাতে এবং ৯ শতাংশ গাড়ীর নিয়ন্ত্রন হারানোর কারণে মারা যান।
সড়ক দুর্ঘটনায় দেশে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান জিডিপির দেড় শতাংশ অর্থাৎ বছরে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা। আর দুর্ঘটনার শিকার মানুষগুলোই বোঝেন তাদের কি ক্ষতি হলো। দুর্ঘটনার সংখ্যা নিয়েও একেক সংস্থা একেক রকম তথ্য দিয়েছে।
দেশে কত মানুষ প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে তার হিসেবে গরমিল পাওয়া যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে মৃতের সংখ্যা বছরে ১৮ হাজার, তার থেকে ৪ হাজার কম বলছে বিশ্বব্যাংক। অথচ সরকারের হিসেবে সড়কে এই মৃত্যুর সংখ্যা সাড়ে তিন হাজারের বেশি নয়।