পবিত্র আশুরা উপলক্ষে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতি চলাকালে রাজধানীর পুরান ঢাকার হোসনি দালান এলাকায় ইমামবাড়ায় শিয়াদের সমাবেশে বোমা হামলায় সাজ্জাদ হোসেন নামের এক কিশোর নিহত হয়েছে। পুলিশ বলছে, আহত হয়েছেন ১০০ জনের বেশি। এদের মধ্যে ৫৭ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, ১৭ জন মিটফোর্ড হাসপাতালে ও ১৬ জন মগবাজারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
শুক্রবার রাত পৌনে দুইটার দিকে হোসনি দালান চত্বরে পরপর তিনটি বিস্ফোরণ ঘটে বলে চকবাজার থানার ওসি আজিজ আহমেদ জানিয়েছেন। তবে কোন কোন সংবাদমাধ্যম প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে দশ থেকে পনেরটি বিস্ফোরণের খবর দিয়েছে।
পুলিশ জানায়, নিরাপত্তার জন্য পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদাপোশাকে নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যরা এ সময় ওই এলাকায় মোতায়েন ছিলেন। নিহত কিশোর সাজ্জাদকে হাসপাতালে আনার আগেই মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানান।
তাজিয়া মিছিলে অংশ নিতে পুরান ঢাকার হোসনি দালানে আসেন নগরীর বিভিন্ন এলাকার মানুষ। এদের অধিকাংশই শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত। হযরত মুহাম্মদ (সা.) দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইনের (রা.) শহীদ হওয়ার দিনকে শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষেরা ত্যাগ ও শোকের প্রতীক হিসেবে পালন করে থাকে।
চকবাজার থানার ওসি আজিজ আহমেদ বলেন, ‘তাজিয়া মিছিলের জন্য শিয়া মতাবলম্বীরা হোসেনী দালানে সমবেত হলে বিস্ফোরণগুলো ঘটে। হামলায় ৭৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালসহ আশপাশের ক্লিনিকে নেওয়া হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকদের বরাতে প্রথম আলো জানিয়েছে, হাসপাতালে ৫৭ জন চিকিৎসাধীন।
এদিকে মিটফোর্ড হাসপাতালে আহত ৩১ জনকে নেওয়া হয় বলে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মাসুদুর রহমান জানান। আহতদের মধ্যে কারও অবস্থা আশঙ্কাজনক নয়। তবে তিন জনের বেশ জখম হয়েছে।
আহতদের অনেকে মিটফোর্ড হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছেন বলে চকবাজার থানার ওসি জানিয়েছেন। হামলায় জড়িত সন্দেহে দুজনকে আটক করা হয়েছে বলে চকবাজার থানার এসআই জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন।
হামলার স্থানে রক্তের দাগ। হামলার পর ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে পুলিশ। দিবসটি উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো শনিবার ভোররাতে তাজিয়া মিছিলের জন্য হোসেনী দালানে সমবেত হন শিয়া মতাবলম্বীরা।
এ সময় সেখানে ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ ছিলেন বলে ফিরোজ হোসেন নামে তাদের এক নেতা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মিছিল শুরুর আগে নিরাপত্তা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা হোসেনী দালানের চারপাশ পরিদর্শন করেন। এর পরপর বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।’
বিস্ফোরণের পরে হোসেনী দালান চত্বর থেকে দুটি বোমা উদ্ধার করা হয় বলে র্যাবের এক কর্মকর্তা জানান। তিনি বলেন, ‘নিষ্ক্রিয় করতে রাত সাড়ে ৪টার দিকে ঘটনাস্থলে একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয় এবং অন্যটি পরীক্ষার জন্য নেওয়া হয়েছে।’
হোসেনী দালান ছাড়াও রাজধানীর মোহাম্মদপুর, মিরপুর, মগবাজার ও পল্টন থেকেও তাজিয়া মিছিল বের করেন শিয়া মতাবলম্বীরা।
ওই হামলার পর মোহাম্মদপুরে শিয়াদের নিরাপত্তায় বাড়তি পুলিশ-র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে বলে মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ কমিটির সভাপতি রাশেদ হায়দার জানিয়েছেন।