সাংবাদিক ও গণমাধ্যম-সংশ্লিষ্টদের ওপর আক্রমণ কেবল ভিকটিমের ওপর আঘাত নয়। এটি স্বাধীন মত প্রকাশ এবং মুক্ত গণমাধ্যমের ওপর আঘাত বলে মনে করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। বিশ্বের দেশে দেশে সংঘটিত এমন আক্রমণের ঘটনাগুলোর কার্যকর, নিরপেক্ষ ও যথাযথ তদন্তের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপের ২৮ রাষ্ট্রের ওই জোট। গতকাল গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অপরাধের দায়মুক্তির বিলোপে পালিত আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি ফেদারিকা মগেরিনি এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান। এদিকে দিবসটি উপযাপন উপলক্ষে প্রদত্ত বাণীতে বৃটেনের মানবাধিকার বিষয়ক মন্ত্রী ব্যারেনেস অ্যানেলে ‘কার্যকর গণতন্ত্রে গণমাধ্যম সবচেয়ে প্রয়োজনীয়’ বলে মন্তব্য করেছেন। ইইউ প্রতিনিধি তার বিবৃতিতে বিভিন্ন দেশে সহিংসতা উসকে দেয়ার হোতা- রাষ্ট্রীয় বা অরাষ্ট্রীয় ব্যক্তিদের বিচার নিশ্চিত করার আহ্বানও জানান। বলেন, গণমাধ্যম আমাদের সমাজগুলোর আয়না, যদি তা মুক্ত এবং সমালোচক হয়। তবেই আমরা স্বাধীন এবং নিরাপদ। যে সময়ে এ দিবসটি পালিত হচ্ছে সেই সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হস্তক্ষেপ এবং সহিংসতার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে।
বৃটিশ মন্ত্রীর অঙ্গীকার: দিবসটি উপলক্ষে দেয়া বাণীতে বৃটেনের মানবাধিকার বিষয়ক মন্ত্রী ব্যারেনেস অ্যানেলে অঙ্গীকার করেন এই বলে, ‘আজকের দিনে আমরা কোনভাবেই গণমাধ্যমকে দুর্বল হতে দেবো না এবং অপরাধের শাস্তি থেকে রেহাই পাওয়া অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।’ বৃটিশ মন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকরা প্রায়ই তাদের কাজের জন্য অপরাধী, উগ্রবাদী গোষ্ঠী এবং নিবর্তনমূলক রাষ্ট্রের লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠে। যখন কেউ সাংবাদিকদের স্তব্ধ করে দেয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা সংঘটিত অপরাধের শাস্তি থেকে রেহাই পেয়ে যায়। এ বছরের শুরুটা ছিল হুমকি মোকাবিলার সাংবাদিকদের বিষাদময় স্মৃতিতে ভরা। গেল জানুয়ারিতে প্যারিসের চার্লি হেবডো পত্রিকায় কর্মরত সংবাদকর্মীদের ওপর নৃশংস হামলার ঘটনা ছাড়াও আফ্রিকা, আমেরিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশ, ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যে সাংবাদিক খুন হয়েছেন। চার্লি হেবডোর সাংবাদিকবৃন্দ দুর্নীতির ওপর আলোকপাত, নিজেদের অভিমত প্রকাশ এবং ব্যঙ্গাত্মক ভাবনা প্রকাশের জন্য খুন হন। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, এসব ঘটেছে বছরের শুরুতেই। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার উদ্যোগ না নিয়ে আমরা প্রায়ই এসব অপরাধের প্রতিবিধানকে জটিল করে তুলি। আমরা হরহামেশা এসব অপরাধকে অগ্রাহ্য করি এবং অদক্ষতা বা দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের কারণে এসব বিচারের পরিসমাপ্তি ঘটে না। কাউকে সেল্ফ-সেন্সরশিপে বাধ্য করা যাবে না অথবা মৌলিক অধিকার এবং আচার-আচরণ থেকে বিচ্যুৎ করা যাবে না, যা আমাদের জীবনাদর্শ ও মূল্যবোধের সারকথা। স্বৈরাচার এবং সন্ত্রাসী উভয়ই সাংবাদিকের কলমকে ভয় পায়। এজন্যই বৃটিশ মূল্যবোধে আমরা মুক্ত সংবাদ মাধ্যমের প্রতি দায়বদ্ধ।