দেশজুড়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) কাছে আবেদন জমা দেওয়ার প্রায় ৪৪ মাস পর আইএসপি লাইন্সেস পেল ৬ প্রতিষ্ঠান। ২০১২ সালের ১৭ মার্চ থেকে এ লাইন্সেস দেওয়া বন্ধ রয়েছে। এখনও প্রায় ৫ শতাধিক প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সের অপেক্ষায় রয়েছে বলে বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে। তবে আগামীতে ধারাবাহিকভাবে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইএসপি লাইসেন্স দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিটিআরসির লাইন্সেস বিভাগের ডিজি একেএম শহীদুজ্জামান। মঙ্গলবার যে ৬টি প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ ৪৪ মাস পর লাইসেন্স পেল’ কাওমী অনলাইন, হাজী অনলাইন, এমএ নেটওয়ার্ক সার্ভিস, জিপ সাইবার ক্যাফে অ্যান্ড টেকনোলজি, দি উইনার আইটি এবং স্কাই ভিউ অনলাইন সার্ভিসেস। এসব প্রতিষ্ঠানের আবেদনকারীদেরকে মঙ্গলবার ডেকে লাইসেন্স হস্তান্তর করেন একেএম শহীদুজ্জামান। এ সময় বিটিআরসি’র লাইন্সেস ডিভিশনের সহকারী পরিচালক বেলায়েত হোসেন, মো. আকরামুল হক, কোয়াবের সাধারণ সম্পাদক এ এম কামাল উদ্দীন আহমদ সেলিম, যুগ্ম সম্পাদক মো. অহিদুল্লাহ স্বপন, সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী মাহবুবসহ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ ব্যাপারে সাইবার ক্যাফে ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) সভাপতি এস এম জুলফিকার হায়দার বলেন, গত ১৯ অক্টোবর ৬ দফা দাবিতে বিটিআরসি কর্মসূচি ঘোষণা করে কোয়াব। এরপর থেকে বিটিআরসির টনক নড়ে। পরে নবনিযুক্ত চেয়ারম্যানের আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। বিটিআরসি দাবি মেনে নেওয়ার অংশ হিসেবে আজকে ৬টি লাইন্সেস দিয়েছে। কোয়াব ১৯৯৮ সালে এ দেশে ইন্টারনেট ব্যবসা শুরু করে। ২০০০ সাল থেকে কম মূল্যে গ্রাহক পর্যায়ে (বাসা-বাড়ি) ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে আসছে সংগঠনের সদস্যরা। দেশে প্রায় ৪ হাজার সাইবার ক্যাফে ও লোকাল ইন্টারনেট সংযোগকারী প্রতিষ্ঠান গত ১৫ বছর সাধারণ মানুষের কাছে ইন্টারনেট পৌঁছে দিতে কাজ করছে। এ খাতের সাথে সারাদেশে প্রায় লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ২শ’ কোটি টাকা। এ সব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব লাভ করে আসছে। বিটিআরসি ২০০৮ সালের ডিসেম্বর থেকে এ সব ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে আইএসপি লাইসেন্স দেওয়া শুরু করে। নিয়ম মেনে ব্যবসায়ীরা এরপর থেকে আইএসপি লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করে। কিন্তু বিটিআরসি কোন কারণ না দেখিয়ে ২০১২ সালের ১৭ মার্চ থেকে লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ রেখেছে। ঢাকায় প্রায় ২ হাজারের মধ্যে ১৭৫টির, ঢাকার বাইরে ২ হাজারের মধ্যে ৭০টি প্রতিষ্ঠানের আইএসপি লাইসেন্স রয়েছে। আরও প্রায় ৫ শতাধিক প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সের জন্য আবেদন করলেও বিটিআরসি ‘অজানা’ কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ রেখেছিল। এ ব্যাপারে কোন আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও দেয়নি বিটিআরসি। যদিও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন ২০০১ এর ১৮ নং আইনের ৩৬ এর ২ (খ) ধারা অনুসারে আবেদনের ১৮০ দিনের মধ্যে লাইসেন্স দেওয়ার বিধান রয়েছে। গত ১৯ অক্টোবর কোয়াব জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স প্রদান, আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানে র্যাব, পুলিশের অভিযান বন্ধ, গোয়েন্দা প্রতিবেদন জটিলতা নিরসন এবং কোয়াব’র সাথে আলোচনা সাপেক্ষে ইন্টারনেটের মূল্য নির্ধারণসহ সংগঠনের পক্ষ থেকে ৬ দফা তুলে ধরে। ২৭ অক্টোবরের মধ্যে দাবি না মানলে ২৮ অক্টোবর বিটিআরসি ঘেরাও এবং ডিজিটাল হরতালের (সারাদেশে একদিন ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা) হুমকি দেন সভাপতি। তবে গত ২৭ অক্টোবর সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটির একটি প্রতিনিধিদল বিটিআরসি’র নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাত করে। সাক্ষাত শেষে ছয় দফা দাবি তুলে ধরা হয়। চেয়ারম্যান দাবিগুলো বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন ও কর্মসূচি প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। এরই প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ৬ প্রতিষ্ঠান আইএসপি লাইসেন্স পেল।