প্রতিরক্ষা খাতের দুর্নীতি ও স্বচ্ছতার মানদন্ডে বাংলাদেশের অবস্থান ‘ডি’ সারিতে। যা দেশের প্রতিরক্ষা খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবাদিহিতার ক্ষেত্রে ‘উচ্চ ঝুঁকি’ নির্দেশ করে। এটা মানদণ্ডের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ এবং সর্মনিম্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হচ্ছে জনবল কাঠামো। যা ‘সি’ সারিতে অবস্থান করছে। এছাড়া আর্থিক, রাজনৈতিক ও ক্রয় সংক্রান্ত মানদণ্ডে বাংলাদেশের অবস্থান ‘ই’ সারিতে। এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় ১৭টি দেশের প্রতিরক্ষা খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঝুঁকি নিয়ে পরিচালিত এক আঞ্চলিক গবেষণায় বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাত ‘উচ্চ ঝুঁকি’ সম্পন্ন বলে অভিমত দিয়েছে বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতি বিরোধী বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই)। ‘দ্য গভর্নমেন্ট ডিফেন্স অ্যান্টি করাপশন ইনডেক্সে’ (সংক্ষেপে জিআই) শীর্ষক প্রতিবেদনে ৭৭টি নির্দেশকের ভিত্তিতে প্রতিরক্ষা খাতের পাঁচটি ঝুঁকির ক্ষেত্র বিশ্লেষণ করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঝুঁকি নিরূপণ করা হয়েছে। এই পাঁচটি ঝুঁকির ক্ষেত্র হলো : রাজনৈতিক, আর্থিক, জনবল, পরিচালনা এবং ক্রয়। লন্ডন থেকে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৪ সালে এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১৭টি দেশের প্রতিরক্ষা ব্যয়ের সম্মিলিত পরিমাণ প্রায় ৪৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। যা প্রতিরক্ষা খাতে বৈশ্বিক ব্যয়ের প্রায় এক চতুর্থাংশ। এই অঞ্চলের ৬টি দেশেরই প্রতিরক্ষা খাতে দুর্নীতির ঝুঁকি অতি উচ্চমাত্রা থেকে সঙ্কটাপন্ন। এই ছয়টি দেশ হলো : চীন, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, কম্বোডিয়া এবং মিয়ানমার। আর এগুলো বাংলাদেশের চেয়েও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আঞ্চলিক নিরাপত্তায় হুমকির সৃষ্টি হয়েছে বলে টিআই মনে করে। এই দেশগুলোর মধ্যে ঝুঁকির মাত্রা বিবেচনায় সবচেয়ে নিম্ন ঝুঁকিসম্পন্ন নিউজিল্যান্ড। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া, তাইওয়ান, জাপান এবং সিঙ্গাপুর নিজেদের প্রতিরক্ষা খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছে। এশিয়ার কয়েকটি দেশে নিয়ন্ত্রণহীন সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি এবং দুর্বল ক্রয় ব্যবস্থার কারণে সামরিক ব্যয়ের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থের অপচয় হয়। এ কারণেই গবেষণার আওতাধীন ৬৫ শতাংশ দেশের জনগণের সামরিক বাহিনীর প্রতি আস্থা অনেক কম বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়। বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ব্যয়ের ক্ষেত্রে সংসদীয় জবাবদিহিতার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়েছে টিআই। বিশেষত জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতির অনুপস্থিতি সত্ত্বেও ক্রমবর্ধমানহারে প্রতিরক্ষা রসদ ক্রয়ের ক্ষেত্রে তথ্যের অপ্রতুলতা এবং গোপনীয়তার সংস্কৃতি গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতার জন্য মঙ্গলজনক নয় বলে টিআই মনে করছে। প্রতিরক্ষা খাতের ঝুঁকি কমানোর জন্য টিআই’র পরামর্শ হচ্ছে- সংসদে স্বাধীনভাবে মতামত প্রদানের সুযোগ প্রসারিত করা, নিরীক্ষা এবং ঝুঁকি নিরুপণ হতে পারে বাংলাদেশে সরকারের দুর্নীতি দূরীকরণের প্রতিপাদ্য। জাতীয় দুর্নীতিদমন কৌশল প্রতিরক্ষা খাতেও প্রযোজ্য হতে পারে। দুর্নীতিদমন কমিশন জাতীয়ভাবে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। প্রতিরক্ষা খাতে স্বচ্ছতা আনার জন্য সরকার দুর্নীতিদমনের ক্ষেত্রে সংসদীয় অথবা সংসদের বাইরে স্বাধীনভাবে নিরীক্ষার মাধ্যমে ভুলগুলো সংশোধন করতে পারে। এটা সামরিক ও বেসামরিক উভয় ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতিরক্ষা বাজেট প্রণয়ণ কিংবা নীতিমালা প্রণয়ণে সংসদের অনুমোদনের বিষয়টি শক্তিশালী করতে হবে। যদিও এ বিষয়ে একটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটি রয়েছে, কিন্তু বাজেট প্রণয়ন, নীতিমালা প্রণয়ন, রসদ ক্রয় জনবল সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা খুবই কম। টিআই সুপারিশ করেছে, সংসদ বিশেষ ক্ষমতায় প্রতিরক্ষা ত্রুটি সংশোধনে এবং ব্যাপক উন্নয়নে তার ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারে। গবেষণার অন্তর্ভূক্ত ৭৭টি প্রশ্নের প্রতিটি উত্তরকে ০-৪ পর্যন্ত স্কেলে রূপান্তরের পর একটি দেশের অবস্থানকে ‘এ’ থেকে ‘এফ’ শ্রেণীতে বিন্যস্ত করা হয়। ‘এ’ শ্রেণী হলো সবচেয়ে কম ঝুঁকি সম্পন্ন এবং ‘এফ’ সবচেয়ে উচ্চ ঝুঁকি সম্পন্ন। সে হিসাবে, বাংলাদেশের মতো ‘ডি’ বা উচ্চ ঝুঁকি সম্পন্ন দেশের শ্রেণীতে এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অন্যান্য দেশ হলো : ভারত, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন এবং ইন্দোনেশিয়া। ২০১৫ সালের এশিয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক জিআই সূচকের সামগ্রিক মূল্যায়নের সমীক্ষায় অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা ছাড়াও বাংলাদেশ সরকার অংশগ্রহণ করেছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়। বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যয় গত এক দশকে ২০২ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার তথ্য উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাত সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছে জনবল ক্ষেত্রে (সি শ্রেণীভুক্ত) এবং সবচেয়ে কম নম্বর পেয়েছে অর্থ, ক্রয় এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে। – See more at: http://www.priyo.com/2015/Nov/04/177375-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%BE-%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%9A%E0%A7%8D%E0%A6%9B%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%93-%E0%A6%9C%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E2%80%98%E0%A6%89%E0%A6%9A%E0%A7%8D%E0%A6%9A-%E0%A6%9D%E0%A7%81%E0%A6%81%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%AA%E0%A7%82%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A3%E2%80%99-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6#sthash.dsySMx4e.dpuf