সংগীত তারকা আসিফ আকবর। নিজের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অসংখ্য জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন তিনি। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত নিজের জনপ্রিয়তা ও সফলতা ধরে রেখে কাজ করে যাচ্ছেন। মাঝে কয়েক বছরের বিরতি নিলেও এখন আবার গানে সরব হয়েছেন। নিয়মিত গান করছেন চলচ্চিত্র, অ্যালবাম, স্টেজে। শুধু গানের মাধ্যমেই নয়, বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী সাহসী কন্ঠস্বর হিসেবেও তিনি শ্রোতামহলে প্রশংসিত। বর্তমান কাজ, গানের বিভিন্ন দিকসহ নানা বিষয়ে আজকের ‘আলাপন’-এ কথা বলেছেন আসিফ আকবর। তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ফয়সাল রাব্বিকীন
কেমন আছেন? দিনকাল কেমন যাচ্ছে?
শারীরিকভাবে একটু অসুস্থ। মৌসুম বদলের ফলেই হয়তো জ্বর-ঠান্ডা লেগে আছে। চিকিৎসা চলছে। বাকি সব ঠিকঠাক আছে আলহামদুলিল্লাহ।
বর্তমান ব্যস্ততা কি নিয়ে?
বেশ কয়েকটি প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছি। ঠিক করেছি ১০ দিন পর পর একটি করে নতুন গান প্রকাশ করবো। ১০-১২ টি নতুন গান তৈরি হয়ে আছে। এগুলোর কাজ করেছেন মানাম আহমেদ, এস আই টুটুল, রাজেশ, শ্রী প্রিতম, ইয়ামিন এলান, জাকের রানা। এছাড়াও লাকী আখন্দ ভাইয়ের সুরেও গান করা রয়েছে।
এগুলো কি আকারে প্রকাশ পাবে, সিঙ্গেলস?
বাংলাদেশে ‘সিঙ্গেলস‘ নামে যা প্রকাশ পাচ্ছে সেটির ধারণা ভুল। যারা নিয়মিত গান করেন তাদের ‘সিঙ্গেলস’-এর কি দরকার? গান করেইতো শেষ করা যাবে না। আসলে যাদের কাজ নেই তারাই ‘সিঙ্গেলস’ নিয়ে ঢাকঢোল পেটাচ্ছেন। সে হিসেবে ‘সিঙ্গেলস’ মানে শাক দিয়ে মাছ ঢাকা। একজন শিল্পী যদি চার মাস পর পর একটি করে গান ভিডিও করে প্রকাশ করেন তবে বছরে তার গান দাঁড়ায় তিনটি। আর ১০ বছরে ত্রিশটি। তাহলে সে নিয়মিত শিল্পীর কাতারে কিভাবে পরে? হ্যা, কিছুদিন পর পর যদি একটি করে গান প্রকাশ করা হয় সেটা ‘সিঙ্গেলস’ হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে বর্তমানে ‘সিঙ্গেলস’-এর ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। তাই আমি বলবো আমাদের এখানে ‘সিঙ্গেলস’-এর কনসেপ্টটা ভুল।
ভারতের একটি প্রজেক্টেতো কাজ করছেন?
ভারতে আমার প্রচুর শ্রোতা রয়েছে। মুম্বইয়ের ফিল্মে গান গাইতে যাবো সামনে। তাছাড়া শ্রি প্রিতমের সুর-সংগীতে ভেনাস রেকর্ডের একটি অ্যালবাম করার কথা রয়েছে। এগুলো আটকে আছে কেবল আমার ভিসা জটিলতার কারণে। ভারত আমাকে ভিসা জটিলতায় আটকে রেখেছে দীর্ঘদিন ধরে। শেষ বার চেষ্টা করেও ভিসা পাইনি। তবে পরের বার ভিসা বাড়ি এসে দিয়ে যেতে হবে।
আপনার দৃষ্টিতে বর্তমান সংগীতের অবস্থা কেমন মনে হচ্ছে?
এটা ডিপেন্ড করে। তবে আমার দিক থেকে বলবো মিউজিকের অবস্থা এখন ভালো। কারণ আমি গ্রামীণফোন ছাড়া কাউকে গান দেই না। আমি সঠিক হিসেবটাই এখন পর্যন্ত পাচ্ছি। আর চলচ্চিত্রে এখন আমাকে কেউ গাওয়াতে পারবে না। বরং আমি গান তৈরি করবো ফিল্মের জন্য। আমাদের নিয়মিত গুণী সুরকাররাই এক্ষেত্রে কাজ করবেন। তবে হ্যা, রিংটোন এবং ইউটিউবের ক্ষেত্রে এখন বাটপারের আনাগোনা বেশি। এক্ষেত্রে কাইনেটিকসহ দু-একটি প্রতিষ্ঠান ভালো কাজ করছে। তবে আমি নিজের ইউটিউব চ্যানেল করবো। আমার যে পরিমান গান রয়েছে, তার থেকে রিংটোন, ওয়েলকাম টিউন এবং ইউটিউব থেকে কি পরিমান অর্থ আসতে পারে সেটা ধারণা করাই যায়।
ইউটিউব থেকে আয়ের পথটি কি পরিস্কার?
ইউটিউব থেকে বড় একটি অর্থ আসে। তবে আমাদের দেশে ইউটিউব থেকে আয়ের ধারনা, জ্ঞান এবং পথ এখনও পরিস্কার না। আমি নিজে ব্যাক্তিগতভাবে এই নিয়ে কাজ করছি। কয়েকজন লোকও আমি নিয়োগ দিয়েছি, যারা প্রতিনিয়ত কাজ করছেন এ বিষয়ে। আশা করছি জানুয়ারি-ফেব্রয়ারি নাগাদ একটি ভালো ফলাফল পাবো।
আপনার দৃষ্টিতে তরুণরা এখন কেমন করছে?
তরুণদের অনেকেই ভালো করছে। অনেক প্রতিভাবান রয়েছে, কিন্তু তারা প্রতিভার বিকাশ ঠিকভাবে করতে পারছে না। সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। আবার সিনিয়র অনেক শিল্পীর সঙ্গে অডিও কোম্পনির একটি মতবিরোধ রয়েছে, যেটার প্রভাব তরুণদের উপর পরছে। তবে আমি মনে করি শ্রোতাদের চিন্তা করে কাজ করতে হবে। অনেক শিল্পীই নিজে সুর করা কিংবা গান রচনার চেষ্টা করছেন। জ্ঞান থাকলে সেটা করলে অসুবিধা নেই। কিন্তু যাদের এসব বিষয়ে কোন ধারনা নেই তারা করলেতো ফলাফল ভালো হবে না। যার যেটা কাজ তার সেটাই করতে হবে। সব কাজ একজন করলে হবে না।
গানের বাইরেও বিভিন্ন দুর্নিতির বিরুদ্ধে আপনাকে সরাসরি প্রতিবাদী রূপে দেখা যায়। এই সাহসটা অনেকেই করেন না। আপনি একাই কেন করছেন?
যারা সুবিধাভোগ করেছে তারা প্রতিবাদ করে না। আমি আমার ক্যারিয়ারে অবৈধ কিছু করিনি। আমি যে পরিস্থিতিতে বড় হয়েছি, যে মূল্যবোধ ও পারিবারিক ঐতিহ্য রয়েছে সেদিক থেকে এই প্রতিবাদী রূপটা আমার সঙ্গে যায়। এছাড়া আমি এখনও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা করি। আমাকে কোন বিষয়ে বাধ্য করা যাবে না। এটা আসলে যার যার ব্যাক্তিত্বের উপর নির্ভর করে। এর জন্য আমার পরিবারের অবদানটাই বেশি।