আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার জন্যই তাৎক্ষণিকভাবে খুনিদের গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। তবে খুনিদের গ্রেপ্তারে সরকারের আন্তরিকতার কোন ঘাটতি নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। গতকাল ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সম্প্রতি বিভিন্ন খুনের ঘটনায় আসামিদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কারণে বা প্রযুক্তির স্বল্পতার কারণেই হয়তো অনেক সময় তাৎক্ষণিকভাবে বা খুব দ্রুত আসামিকে ধরা সম্ভব হয়নি। তার মানে এই নয় যে সরকার আন্তরিক নয়। সরকারের তরফ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগও মনে করে, এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেয়া হোক। তিনি বলেন, এসব মামলা দ্রুত তদন্ত করে নিষ্পত্তি করার জন্য আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বারবার বলেছি, চাপ দিয়েছি। এখনও বলছি, যত দ্রুত সম্ভব দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। মাহবুব-উল আলম হানিফ জোর দিয়ে বলেন, হত্যাকাণ্ডের পেছনে ‘সংগঠন’ ‘বড় ভাই’ বা যে কোন ‘শীর্ষ নেতাই’ জড়িত থাকুক না কেন, প্রত্যেককেই আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লন্ডনে বসে সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন- এমন দাবি করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, লন্ডনে বসে খালেদা জিয়া যেসব কথা বলেছেন, তার অধিকাংশই ছিল সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্যসংবলিত। অসত্য তথ্য ও কল্পকাহিনীর মাধ্যমে খালেদা জিয়া সরকারের ইমেজ নষ্ট ও সরকারকে বিব্রত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন। আমরা ভেবেছিলাম তিনি হয়তো অতীত ভুল শুধরে আত্মশুদ্ধি ঘটাবেন। কিন্তু সে ইচ্ছা তার নেই। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া জঙ্গি মানসিকতায় বিশ্বাসী। তার প্রভুদের নির্দেশে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তিনি জিহাদ ঘোষণা করেছেন। বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকতে যেসব অপকর্ম করেছিল এবং বিরোধী দলে থাকার সময় যেসব অপকর্ম করেছে, সেগুলোকে ঢাকার জন্য মিথ্যাচার করে একটা অপচেষ্টা চালিয়েছেন তিনি। এ কারণেই তারা (বিএনপি) সরকারের বিরুদ্ধে অনৈতিকভাবে কিছু অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। ‘আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতি করে’ বিএনপি চেয়ারপারসনের এমন বক্তব্যে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য রাজনীতি করে। আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতি করেছে এটি কখনও কেউ দেখেনি। হত্যা-ষড়যন্ত্রের রাজনীতি কাকে বলে সেটা বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন খালেদা জিয়া ও তার পুত্র তারেক রহমান দেখিয়েছিলেন। ‘ক্ষমতায় গেলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবো’ বেগম খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্যকে ‘ভূতের মুখে রাম নাম’ আখ্যা দিয়ে হানিফ বলেন, তিনি ক্ষমতায় থাকতে দেশকে জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন। দুর্নীতিতে দেশকে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছিলেন। আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছেন। খালেদা জিয়া এখন দেশের মানুষের কাছে আতঙ্কের নাম। হত্যা-খুনের রানী খালেদাকে মানুষ ক্ষমতায় দেখতে চায় না। খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘লেডি হিটলার’ বলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, এ বক্তব্যের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার হীন মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রী আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কঠোর। তার (খালেদা জিয়া) মতো মা-ছেলে মিলে সরকারের ভেতরে সরকার হাওয়া ভবন তৈরি করে দুর্নীতির উৎসবে বিশ্বাসী নন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আফজাল হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এ কে এম এনামুল হক শামীম, সুজিত রায় নন্দি প্রমুখ।