ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং করে একজন বোলার প্রতিপক্ষের ৫ ব্যাটসম্যানকে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠিয়েছেন, মাত্র ১২৮ রানেই প্রতিপক্ষকে অলআউট করতে মূল ভূমিকা রেখেছেন, প্রথমবারের মতো পেয়েছেন ওয়ানডেতে ৫উইকেট শিকারের স্বাদ। অথচ সেই ম্যাচেই তিনি ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ নন! কি বলবেন একে, দুর্ভাগ্য? আপাতদৃষ্টিতে তেমনটাই মনে হলেও এতে তীব্র আপত্তি জানাতে পারেন সেই অভাগা বোলারটিই, কারণ ভদ্রলোকের নাম যে সাকিব আল হাসান! তার এই ব্যক্তিগত দুর্ভাগ্যের মাঝেই যে লুকিয়ে আছে তার দীর্ঘদিনের আকাংক্ষা পূরণ ও দলীয় সৌভাগ্যের চাবিকাঠি! জানি, কথাগুলো বেশ গোলমেলে মনে হচ্ছে। আসুন সেই গোলমাল দূর করার চেষ্টা করি। শনিবার প্রথম ওয়ানডেতে ১০ ওভার বোলিং করে ৪৭ রান খরচায় ৫ উইকেট নিয়েছেন সাকিব, জিতেছে বাংলাদেশ। কিন্তু এ ম্যাচে ম্যাচ অফ দ্যা ম্যাচ তথা ‘ম্যাচসেরা’ নির্বাচিত হয়েছেন ১০৯ বলে ৯টি চার ও ১টি ছক্কায় ১০৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলা মুশফিকুর রহিম, এর সাথে যোগ করতে পারেন উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে নেওয়া ২টি ক্যাচও। তবে, ম্যাচে যদি সাকিবকে ম্যাচসেরা ঘোষণা করা হতো, তাতেও কি খুব অবাক হওয়ার কিছু থাকত? ছবিঃ শনিবার প্রথম ওয়ানডেতে ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ের পথে জিম্বাবুয়ের একটি উইকেট শিকারের পর সাকিবকে মুশফিকের অভিনন্দন -এপি জেনে হয়তো অবাক হবেন, ২০১৫ সালে ১৬টি ওয়ানডে খেলে ১টিতেও ম্যাচসেরা হননি সাকিব। যদি আরেকটু পেছনে তাকান তবে সর্বশেষ ৩ বছরেই ওয়ানডেতে মাত্র ১ বার ম্যাচসেরা হয়েছেন সাকিব! যদিও ২০১৩ ও ২০১৪ তে শিনবোনের ইনজুরি, ডেঙ্গুজ্বর ও নিষেধাজ্ঞার কারণে বেশ কিছু ম্যাচ খেলা হয়নি সাকিবের। তাই ক্যারিয়ারের প্রথম ৭ বছরেই যিনি ১৩ বার(২০০৬ সালে ১ বার, ২০০৭ সালে ২ বার, ২০০৮ সালে ১ বার, ২০০৯ সালে সর্বোচ্চ ৩ বার, ২০১০ সালে ২ বার, ২০১১ সালে ২ বার, ২০১২ সালে ২ বার) ম্যাচসেরা হয়েছেন সর্বশেষ ৩ বছরে(২০১৪ তে ১ বার, ২০১৩ ও ২০১৫ তে একবারও নয়) সেই সাকিবই যেন হঠাৎ করেই ম্যাচ সেরা হতে ভুলে গেছেন! বিশেষ করে ২০১৫ সালে ওয়ানডেতে সাকিবের এখনো একবারও ম্যাচসেরা না হওয়াটা কিছুটা বিস্ময়করই বলা যায়! কারণ এই সময়ে ব্যাট ও বল হাতে সময়টা বেশ ভাল কেটেছে সাকিবের, আর ১৬ টির মধ্যে ১১টি ম্যাচেই জিতেছে বাংলাদেশ! অথচ বছরের প্রথম ওয়ানডেতেই বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষেই ম্যাচসেরা হতে পারতেন সাকিব। ফেব্রুয়ারির সেই ম্যাচে ৫১ বলে ৬৩ রান ও ৮.৫ ওভার বোলিং করে ৪৩ রানে ২ উইকেট নিয়ে দলকে জেতালেও ম্যাচসেরা নন সাকিব। আর সেদিনও তার বদলে ম্যাচ সেরার পুরষ্কার উঠেছিল মুশফিকুর রহিমের হাতে, ৫৬ বলে ৭১ রানের ঝড়ো ইনিংসের বদৌলতে। ছবিঃ বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সময় মুশফিক ও সাকিব এরপর দেশের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজটার দিকেই তাকাই। প্রথম ওয়ানডেতে ৫২(৬৮) রান ও ৮ওভারে মাত্র ৩৩ রান খরচায় ২ উইকেট শিকারের পরও ম্যাচ সেরা হননি সাকিব, অভিষেকেই ৫ উইকেট শিকার করে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া মুস্তাফিজের হাতে উঠেছে ম্যাচসেরার পুরষ্কার। দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও মিতব্যয়ী বোলিং ও দলীয় সর্বোচ্চ রান করেও মুস্তাফিজের ৬ উইকেটের আড়ালে ঢাকা পড়ে যান সাকিব। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শেষ দুই ওয়ানডেতে ১০ ওভারে ৩০ রান দিয়ে উইকেটশুন্য ও ৮ ওভারে ৩৩ রানের বিনিময়ে গুরূত্বপূর্ণ ৩ উইকেট শিকার করে তাদেরকে মাত্র ১৬২ ও ১৬৮ রানে আটকে রাখতে দারুণ ভূমিকা রাখেন সাকিব। কিন্তু দুম্যাচেই দারূণ ব্যাটিংয়ে ৮৮*(৭৯) ও ৯০(৭৫) রানের ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হয়েছেন সৌম্য সরকার। ছবিঃ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩য় ওয়ানডেতে হাশিম আমলার উইকেট নেওয়ার পর বাংলাদেশ দলের মধ্যমণি সাকিব তাই ব্যাটে-বলে দারুণ অবদান রেখেও বার বার অন্য কারো পারফরম্যান্সের আড়ালে ঢাকা পড়ছেন সাকিব। আর এটাকে যে তিনি ‘দুর্ভাগ্য’ হিসেবে মেনে নিতে আপত্তি করতে পারেন, তার সবথেকে বড় কারণ এতে যে লাভবান হচ্ছে বাংলাদেশ দলই! এমন একটা সময় ছিল যখন ম্যাচের পর ম্যাচ ব্যাট ও বল হাতে দারুণ পারফরম্যান্স করেও সতীর্থদের যোগ্য সহায়তার অভাবে দলকে জেতাতে পারেননি সাকিব। আর সেই সাকিবই এখন সতীর্থদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের আড়ালে ঢাকা পড়ছেন।  বাংলাদেশ দলের এমন সুদিনের স্বপ্নের কথাই তো বিভিন্ন সময়ে বলে এসেছেন সাকিব। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ১৪ বার(দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মাশরাফি বিন মুর্তজা ১০ বার) ম্যাচ সেরা হবার রেকর্ডটা এখনো তার দখলে। দলীয় খেলা ক্রিকেটেও মোটামুটি একক প্রচেষ্টাতেও জিতিয়েছেন বেশ কিছু ম্যাচ। জয়ের কাছে গিয়েও অনেক ম্যাচে পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ বরণ করতে হয়েছে দলের অন্য কারো ‘দ্বিতীয় সেরা’ পারফরম্যান্সের অভাবে। এই সাকিব যদি এখন ম্যাচের পর ম্যাচ ‘দ্বিতীয় সেরা’ পারফরমার হয়েই থাকেন, আর জিততে থাকে বাংলাদেশ দল, তাতে সাকিবের চেয়ে বেশি খুশি আর কেউ কি হবেন? তাই সাম্প্রতিক সময়ে ওয়ানডেতে তার ম্যাচসেরা না হওয়াটা ‘সাকিবের দুর্ভাগ্য’ নয়, বরং ‘বাংলাদেশের সৌভাগ্য’! – See more at: http://www.priyo.com/2015/Nov/08/177927-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A6%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BF-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A7%8C%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%AF#sthash.YI7lwacl.dpuf