ময়মনসিংহে স্কুলছাত্রী নাদিরা সুলতানা আইরিন (১১) হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ঘণ্টাব্যাপী অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী। গতকাল ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের মূল ফটকের সামনে সকাল ১০টা থেকে ১১টা প্রর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে। স্কুলের ছাত্রছাত্রীসহ এলাকার বিভিন্ন পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা দাবি জানান, হত্যার সঙ্গে জড়িত গাড়িচালক হাবিব মুন্নাসহ (২৩) যারা জড়িত তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে ফাঁসির দাবি জানান তারা। সূত্র জানায়, স্কুলছাত্রী নাদিরা সুলতানা আইরিন (১১) হত্যাকাণ্ডে ময়মনসিংহ-৯ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিনের গাড়ি ব্যবহার করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ সংসদ সদস্য (এমপি) তুহিনের গাড়িচালক হাবিব মুন্নাকে (২৩) গ্রেপ্তার করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমারত হোসেন গাজী জানান, হাবিবকে গ্রেপ্তারে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন সহায়তা করেছেন। এ কারণে হত্যাকাণ্ডের পাঁচ ঘণ্টার মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। এ ঘটনায় হাবিবের মা হাফিজাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। নিহত নাদিরা ময়মনসিংহ শহরের মাসকান্দা এলাকার ভ্যানচালক ইউনুছ আলীর মেয়ে। গ্রেপ্তার হওয়া হাবিব, নাদিরার ফুফাতো ভাই। নাদিরা ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ উচ্চ বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীতে পড়তো। বৃহস্পতিবার সকালে স্কুলে গিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি নাদিরা। নাদিরার পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকায় নাদিরাদের বাসায় হাবিবের যাতায়াত ছিল। কিন্তু তার ঘন ঘন যাতায়াত বাবা ইউনুছ আলীর পছন্দ হয়নি। এ কারণে মেয়ে নাদিরাকে হাবিবের সঙ্গে মিশতে বারণ করেন তিনি। নাদিরার বাবা ইউনুছ আলী বৃহস্পতিবার বিকালে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, তার বোনের ছেলে হাবিব দুপুরে নাদিরাকে প্রাইভেট কারে (এমপি তুহিনের গাড়ি, নম্বর ঢাকা মেট্রো গ ১৪-৮০৯৯) করে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করে তার পরিবার। পরে বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় শহরের বাইপাস সড়কের পাশের বাদেকল্পা এলাকা থেকে পুলিশ নাদিরার ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে। ওই ঘটনায় শুক্রবার দুপুরে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন ইউনুছ আলী। মামলা তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ইউনুছ আলী অভিযোগ করেন, মেলামেশা করতে বারণ করায় ভাগ্নে হাবিব তার মেয়ে নাদিরাকে হত্যা করতে পারে। এদিকে নিহত নাদিরার সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মুনসুর আহাম্মদ জানান, নাদিরার গলায় একাধিক ছিদ্রযুক্ত কাটা এবং কোমরের ডানপাশে ধারালো অস্ত্রের ১৩টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়ার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে গতকাল দুপুর থেকে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল হাবিবকে নিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে ডিবি পুলিশ।