1. ccadminrafi@gmail.com : Writer Admin : Writer Admin
  2. 123junayedahmed@gmail.com : জুনায়েদ আহমেদ, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর : জুনায়েদ আহমেদ, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর
  3. swadesh.tv24@gmail.com : Newsdesk ,স্বদেশ নিউজ২৪.কম : Newsdesk ,স্বদেশ নিউজ২৪.কম
  4. swadeshnews24@gmail.com : নিউজ ডেস্ক, স্বদেশ নিউজ২৪.কম, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর: : নিউজ ডেস্ক, স্বদেশ নিউজ২৪.কম, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর:
  5. hamim_ovi@gmail.com : Rj Rafi, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান : Rj Rafi, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান
  6. skhshadi@gmail.com : শেখ সাদি, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান: : শেখ সাদি, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান:
  7. srahmanbd@gmail.com : এডমিন, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান : এডমিন, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান
  8. sumaiyaislamtisha19@gmail.com : তিশা, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান : তিশা, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান
কান নিয়েছে চিলে… - Swadeshnews24.com
শিরোনাম
সোনার দাম আরও কমল রাজধানীতে পানি, স্যালাইন ও শরবত বিতরণ বিএনপির জায়েদ খানের এফডিসিতে ফেরা হবে কিনা, জানালেন ডিপজল কক্সবাজার জেলায় কত রোহিঙ্গা ভোটার, তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট সিনেমা হলে দেওয়া হচ্ছে টিকিটের সঙ্গে ফ্রি বিরিয়ানি ঢাকায় বড় জমায়েত করতে চায় বিএনপি ১৫ বছর পর নতুন গানে জেনস সুমন যশোরে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে জমি দখলের অভিযোগ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে মিশা-ডিপজল প্যানেলের জয়লাভ গোবিন্দগঞ্জে অটোচালক দুলা হত্যার মূল আসামি আটক চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু পলাশবাড়ীতে উপজেলা নির্বাচনে অনলাইন মনোনয়নপত্র দাখিলের বিষয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাথে মতবিনিময় ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিলেই বিএনপি বলে বিরোধীদল দমন’ এবার বুবলী-শাকিবের ‘কোয়ালিটি টাইম’ নিয়ে মুখ খুললেন অপু বাংলাদেশের সফলতা চোখে পড়ার মতো: সিপিডির রেহমান সোবহান

কান নিয়েছে চিলে…

  • Update Time : রবিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৫
  • ৫৮৭ Time View

লেজ কাটা শিয়ালের গল্পটা হয়তো সবার মনে আছে। এক কৃষকের ঘরে ঢুকে চুরি করে খাবার খেতে গিয়ে ধরা পরে শেয়ালটি। কৃষককে কথা দিয়েছিল আর কখনো চুরি করবে না সে। কিন্তু পরে চুরি করতে আসলে তাকে চেনা যাবে কীভাবে? তাই কৃষক তার লেজটা কেটে দিল। যাতে তাকে চেনা যায় সহজে। যথারীতি শিয়ালটাকে ছেড়ে দিল। শিয়াল পণ্ডিত বলে কথা। লেজ কাটা শিয়ালটা বনে গিয়ে অন্য শিয়ালগুলোকে লেজ কাটতে বলল। অন্য শিয়ালদের সে বলল, লেজ কাটলে কৃষকের ঘরের খাবার চুরি করে খেলেও কেউ কিছু বলবে না। তার কথামতো অন্য শিয়ালগুলো একে অপরের লেজ কেটে দিল। মনে পড়ে গেল ২০০০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বেদনাবিধুর ঘটনার কথা। ওইদিন মেহেরচন্ডী এলাকার আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সংঠনের কতিপয় নেতাকর্মীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিবিরকর্মীদের বচসা হয়। এ নিয়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া থেকে শুরু করে রীতিমতো মারামারি। ওইদিন ছিল শুক্রবার। ঘটনার সময় অধিকাংশ ছাত্রই জুম্মার নামাজে ছিল। নামাজ শেষে ঘটনা ব্যাপক আকার ধারণ করে। দলে দলে ছাত্র স্টেশন বাজারের দোকানপাট ভাঙচুর করে। অপরদিকে, স্থানীয়রা ছাত্রদের দমাতে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। এ সময় কে বা কারা রটিয়ে দিল ‘আমাদের চারজন ছাত্রকে তারা মেরে ফেলেছে, লাশ গুম করেছে’। ব্যাস, রণক্ষেত্রে পরিণত হলো পুরো ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি হলো একমাসের। ছুটির পর ক্যাম্পাসে ফিরে দেখলাম সব স্থবির। স্টেশন বাজার শুধু ছাই। জানলাম ঈদে মেহেরচন্ডী এলাকার কোনো ঘরেই কোরবানি দিতে পারেনি কেউ।  সোর্সের মিথ্যা সংবাদের উপর ভর করে র‌্যাব গুলি চালায় ঝালকাঠির লিমনের পায়ে। এরপর এ নিয়ে রচিত সবগুলো নাটক দেখেছেন দেশবাসী। ক্ষমা, ক্ষতিপূরণ কিংবা ভুল বলে যাই বোঝানো হোক না কেন, লিমন তার পা ফিরে পাবেন না।  মানুষ চাঁদে গেছে ১৯৬৯ সালে। চাঁদে সর্বপ্রথম পা রেখেছিলেন নীল আর্মস্ট্রং। কিন্তু তার মুখ চাঁদে দেখা যায় না। অথচ নির্বাচনী ইস্যুতে আন্দোলন চলাকালীন ২০১৩ সালের ২ মার্চ দিবাগত রাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়, ‘দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে। আপনারা রাস্তায় বেরিয়ে আন্দোলনে অংশ নিন।’ সহজ মানুষগুলো ওই ঘোষণা শুনে ইসলাম ধর্মকে রক্ষার নামে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। কিন্ত বাস্তবতা কিংবা যুক্তি ছিল ভিন্ন। পুলিশের বুলেটের আঘাতে প্রাণ দিতে হয় অনেককে। অনেক শিশু এবং বৃদ্ধও আহত হন ওই ঘটনায়। দেশের শেয়ারবাজারে ২০১০ সালের মহাধ্বস আমি খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেছি। এর মূল কারণ ছিল কানকথায় বিশ্বাস করা। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে অনেকে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। ব্যাস, জমি জায়গা বিক্রি করে অনেকে শেয়ারবাজারে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কিন্তু বাস্তবতা তাদের আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল অন্যের কথায় ভরসা নয়। লাখ লাখ বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হয়ে পড়লেন। তাও ভালো সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক প্রণোদনা দিয়েছে। এ ঘটনায় ১১ জন আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা গেছে।  ২০১৩ সালের শুরুর দিকের ঘটনা। দেশের বিভিন্ন স্থানে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল ও কৃমিনাশক ট্যাবলেট খেয়ে অনেক শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গা থেকে আমার অফিসে ফোন আসতে লাগল। সবারই এক কথা। শিশু মারা যাচ্ছে আপনারা নিউজ দেন না কেন। আমি তখন শেয়ারনিউজের বার্তা সম্পাদক। সঙ্গে সঙ্গে আমি তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ফোন দিলাম। ওনার পিএস ফোন ধরে বললেন, ‘খবরটা ঠিক না।’ উনি আমাকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নম্বর দিয়ে যোগাযোগ করতে বললেন। আমি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের এক ডাক্তারকে পেলাম ফোনে। নাম মনে নাই। তিনি জানতে চাইলেন কোন কোন এলাকায় শিশু মারা যাচ্ছে? আমি বললাম, নোয়াখালী, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এসব এলাকায়। তিনি আধ-ঘন্টা পর ফোন দিতে বললেন। আমি ফোন দিলাম। তিনি বললেন, ‘মাঠ লেভেলে যারা কাজ করছেন তাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি। কোথাও কোনো মৃত্যুর খবর নেই। তবে বেশ কয়েকটি শিশু দুর্বল হয়ে পড়েছে। এর কারণ হলো, তারা এমনিতে শারীরিকভাবে দুর্বল। এ সময় কৃমির ঔষধ খাওয়ার কারণে আরো দুর্বল হয়ে পড়েছে।’  ওই সময় ফেনী দাগনভূইঞা থেকে এক ব্যক্তি ফোন করলেন। তিনি আমাকে জানালেন যে, ওখানকার সদর হাসপাতালে চারজন শিশু মারা গেছে। আমি জানতে চাইলাম, ‘আপনি এখন কোথায়?’ লোকটি বললেন, ‘আমি থানা হেল্থ কমপ্লেক্সে প্র্রধান চিকিৎসকের সামনে।’ তার কথা সন্দেহ হলো, আমি তাকে বললাম, ‘ওই চিকিৎসকের মোবাইল নম্বরটা দেন তো।’ সঙ্গে সঙ্গে লোকটি ফোন কেটে দিলেন। পরে তার মোবাইলে ফোন দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। ওই সময় অনেক অনলাইন পত্রিকায় শিশু মৃত্যুর খবর ছাপানো হয়েছিল। কিন্তু আমি সত্যতা যাচাইয়ের ব্যাপারে অটল থাকায় সত্য সংবাদটি পরিবেশন করতে পেরেছিলাম এবং অনেকের ধন্যবাদও পেয়েছিলাম। বিশেষ করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের। উপরের সব ঘটনার সঙ্গে এবার সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া একটি স্পর্শকাতর ঘটনার উদাহরণ দিতে চাই। চৌকিদার ময়না মিয়া ওরফে বড় ময়না রাজনকে বলাৎকার করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাজন তাতে বাধা দেওয়ায় ‘চোর’ বলে চিৎকার করে আশেপাশের লোকজনকে একত্রিত করা হয়। কয়েকদিন আগে সেখানে একটি ভ্যান চুরি যায়। অনেকে ওই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ভেবে রাজনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। কামরুলসহ তার তিন ভাই, চৌকিদার ময়না, তাজ উদ্দিন বাদল ও জাকির হোসেন পাভেল ঘটনার আগামাথা যাচাই না করেই রাজনকে অমানবিকভাবে প্রহার করতে থাকে। তখন উপস্থিত অনেকে ঘটনা উপভোগ করেন। তাদের একজন ঘটনাটি ভিডিও করেন। কিন্তু রাজনের মৃত্যুর পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। সংবিত ফিরে পায় আসামিরা। তাই লাশ গুম করার চেষ্টা চালায় তারা। কিন্তু অপরাধ করে পার পাওয়ার নজির এখনো সৃষ্টি হয়নি, তাই হয়তো তারা গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারেনি। আসামী পক্ষের আইনজীবী আদালতকে বলেছেন, তারা রাজনকে হত্যা করার পরিকল্পনা নিয়ে প্রহার করেনি। কথাটা সত্য বটে! কিন্তু রাজনকে ‘চোর’ বলা হলো আর অমনি ঝাঁপিয়ে পড়লেন আসামিরা! তখন হয়তো নিজেদের অতি বিবেকসম্পন্ন কিংবা সৎ লোক হিসেবে জাহির করতে চেয়েছিলেন তারা। বাহবা পেতে চেয়েছিলেন গ্রামবাসীর কাছে। কিন্তু বিবেকসম্পন্ন মানুষগুলো কি অন্যের দ্বারা চালিত হয়? নাকি নেহায়েত মন্দ আবেগ তাড়িত মানুষগুলো এমন? বিশিষ্ট কলামিস্ট আবুল মকসুদের লেখা ‘গুজবের মনস্তত্ত্ব’ নামক একটা লেখায় তিনি গুজব সম্পর্কে লিখেছিলেন। বছর দুয়েক আগে হবে হয়তো। এতে তিনি বাঙালি জাতির বৈশিষ্ট্যের ব্যবচ্ছেদ করেছেন এভাবে, অন্য জাতির মানুষগুলোর মধ্যে কেউ হয়তো বানর, কেউ শিম্পোঞ্জী, কেউ গরিলা থেকে এসেছে। আর বাঙালিরা এসেছে উল্লুক থেকে। আমি কোনো যুক্তিতে যাব না, আবার তার কথাকে হেয় করার যুক্তিও দেখি না।  আমরা যারা অন্তত এসএসসি পাস করেছি তারা প্রয়াত কবি শামসুর রাহমানের পণ্ডশ্রম কবিতাটি পড়েছি- ‘এই নিয়েছে ঐ নিল যা! কান নিয়েছে চিলে, চিলের পিছে মরছি ঘুরে আমরা সবাই মিলে।’ কান চিলে নিয়ে গেছে। দিনভর চিলের পেছনে ছুটে অবশেষে দেখা গেল, কান কানের জায়গাতেই আছে। যদি আগে হাত দিয়ে পরখ করে দেখা যেত কানটা আদৌ জায়গামতো আছে কি-না? একবার যদি ভাবা হতো লিমন আসলে অপরাধী কি-না, একবার যদি ভাবা হতো চাঁদে আদৌ কাউকে দেখা যাওয়া সম্ভব কি-না? যদি একবার ভাবা হতো রাজন আসলেই চোর কি-না? তাইতো কথায় বলে, বাঙালি জাতি ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না। আরো কত নেতিবাচক গল্প আছে বাঙালি জাতিকে নিয়ে। সেগুলো মোটেও অহেতুক নয়। পড়ালেখা শিখে কেউ সত্যিকার অর্থে বিবেকবোধ সম্পন্ন হয়েছেন এমন লোকের সংখ্যা খুব কমই দেখি আমি। বরং যে যেমন সংস্কৃতি ও কুসংস্কার নিয়ে বড় হয়েছেন, তিনি সেরকমই রয়ে গেছেন। সেদিন আমার কাজিন কি যেন একটা নাটক দেখছিল। সংলাপগুলো হাস্যকর মনে হওয়ায় কাছে ভিড়লাম। দেখলাম ‘কানপড়া’ নামে একটি নাটক হচ্ছে। এক প্রেমিকাকে নিয়ে দুই প্রেমিকের যুদ্ধ। আর তৃতীয় পক্ষের কিছু দুষ্টু ছেলে ‘কানকথা’ ছড়িয়ে দুই প্রেমিককে ঘায়েল করে মজা লুটছে। অবশেষে তৃতীয় পক্ষের কানকথায় পুলিশও দুই প্রেমিককে গ্রেফতার করে। পরে যখন জানতে পারে ঘটনা মিথ্যা তখন তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এরকম চমকপ্রদ নাটক দেখেও কি কেউ শিক্ষা নিয়েছে? আমার মনে হয় না। বরং যারা নাটকটি দেখেছেন তাদের অনেকেই তৃতীয় পক্ষে নিজেদের অবস্থান কল্পনা করে মজা নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ব্যক্তিজীবনে।  ঘটুক না ওমনি। যেটা হাস্যরসের সৃষ্টি করবে কিন্তু কারো ক্ষতি করবে না। তাহলে লিমন পা হারাবে না, রাজন পৃথিবীর বাকি আলোটুকু দেখার সুযোগ পাবে কিংবা শেয়ারবাজার থেকে কেউ নিঃস্ব হবেন না। একদল ‘কানকথা’ ছড়িয়ে ফায়দা হাসিল করেন এবং আরেক দল তাদের কথায় বিশ্বাস করে অন্যের ক্ষতি করে নিজেই বিপদে পড়েন। এ প্রবণতা থামানোর কোনো কার্যকরী পদ্ধতি আমার জানা নেই। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, যদি কোনো সূত্র থেকে রটিয়ে দেওয়া হয় যে, মঙ্গল গ্রহ থেকে ভালুকের মতো দেখতে বিয়াল্লিশটি প্রাণী গত অমাবস্যার রাতে ভাওয়াল গড়ে নেমে এসেছিল। এসেই শালবনের গাছের মধ্যে মিশে যায়। মানুষ তা বিশ্বাস করবে। প্রশ্ন করবে না, কালো প্রাণীগুলো এলো অমাবস্যার অন্ধকারে, কেমন করে তা দেখা গেল? একটুও ভিন্নমত দিয়ে কোনো টকশো থেকে সন্দেহ পোষণ করা হবে, গুনে দেখা যেহেতু অন্ধকারে সম্ভব হয়নি, তাই ৪২টি নাও হতে পারে, ৩২টি হওয়া সম্ভব, তা-ও নয়। আমাদের চিন্তাশক্তি ও বিচার-বিবেচনা আজ এই পর্যায়ে এসেছে।  গুজব বা ‘কানকথা’ ছড়ানোর মনস্তাত্ত্বিক কারণ সম্পর্কে দীর্ঘকাল গবেষণা করেছেন মনোবিজ্ঞানী ‘অলপোর্ট’ ও ‘পোস্টম্যান’। তারা বলেছেন, ‘গুজব মানুষের চাহিদা বা আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ’। অর্থাৎ যে গুজব ছড়ায় সে চায় যেন সত্যিই এমন কিছু ঘটুক।  তাই কানকথায় বিশ্বাস করে কোনো কিছু করার আগে আসুন যাচাই করার মানসিকতা অর্জন করি। আসুন ‘ভাবিয়া করি কাজ’। একটি ঐতিহাসিক ঘটনার কথা বলি। ১৭০০ সালে স্পেন আক্রমণ করে স্কটল্যান্ড। যুদ্ধের খরচ যোগাতে স্কটল্যান্ড ইংল্যান্ডের কাছে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণ নেয়। কিন্তু স্কটল্যান্ড সেই ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় শর্ত অনুযায়ী ইংল্যান্ডের অধীনে থেকে যায় দ্বীপ রাষ্ট্রটি। রাজার অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে স্কটল্যান্ডের জনগণ পরাধীন থেকে গেল শত শত বছর।  এবার আসি অন্য একটি ঘটনায়, এক গ্রামের এক চাষীর মেয়েটি ছিল খুবই সুন্দরী। মেয়েটিকে দেখে এক সিংহের বিয়ে করার সাধ হলো। একদিন চাষীকে গিয়ে সে তার ইচ্ছের কথা জানাল। চাষী বেচারা পড়ল মহাফাঁপড়ে। হিংস্র সিংহের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে? কিন্তু না বললেই তো সিংহ তার ঘাড় মটকাবে।  সিংহকে কি জবাব দেয়, এ কথা ভাবতে ভাবতে চাষীর মাথায় বুদ্ধি এসে গেল। সে সিংহকে বলল, তুমি হলে পশুদের রাজা। তোমার সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ে হলে সে হবে রাণী। এ তো খুব সুখের কথা। তবে কি-না একটা কথা– মেয়ে তো বড় হয়েছে। তার মতামতটাও শোনা দরকার। সিংহ খুশি হয়ে বলল, তা বেশ তো। বাড়ির ভিতর থেকে তার মতামতটা তুমি জেনে এসো ততক্ষণ আমি এখানে বসছি।  সিংহকে উঠানে বসিয়ে রেখে চাষী গেল বাড়ির ভেতরে। কিছু সময় পরে ফিরে এসে সিংহকে বলল, মেয়ে তো শুনে মহাখুশি। তবে তার একটা শর্ত আছে। সিংহ উৎসাহের সঙ্গে বলে উঠল, বেশ, বেশ শর্তটা কী শুনি?  চাষী বলল, মেয়ে বলেছে, তোমার নখ আর দাঁতগুলোকে তার বড় ভয়। যদি নখগুলো উপড়ে ফেলো আর দাঁতগুলোকে তুলে ফেলতে রাজি থাকো, তাহলে তোমাকে বিয়ে করতে তার কোনো আপত্তি নেই। চাষীর মেয়ের রূপ দেখে সিংহ এমনই মুগ্ধ হয়েছিল যে, সঙ্গে সঙ্গে শর্তে রাজি হয়ে গেল। সে বলল, এ আর এমন কী বড় কথা। আমি এখুনি দাঁত নখ ফেলে আসছি।  এই বলে সে বনে গিয়ে দাঁত দিয়ে টেনে টেনে এক এক করে প্রথমে চার থাবার সব নখ উপড়াল। তারপর নানান কায়দায় বহু কষ্টে খসিয়ে ফেলল মুখের সব দাঁত। সে এক রক্তারক্তি কাণ্ড। কিন্তু বিয়ের আনন্দে কষ্টকে সিংহ কষ্ট বলে মনেই করল না।  নখ ও দাঁত সাফ করে সিংহ চাষীর কাছে এসে বলল, এবার তোমার মেয়েকে নিয়ে এসো। এই বেলা তাড়াতড়ি বিয়েটা সেরে নেওয়া যাক।  বাহ বাহ বেশ করেছ, বলতে বলতে চাষী সিংহকে খাতির দেখিয়ে দাওয়ায় বসতে দিল। তারপর মেয়েকে আনতে বাড়ির ভেতর ঢুকল। শরীরের যন্ত্রণায় এমনিতেই সিংহের নাজেহাল অবস্থা। দু’দণ্ড বসেই তার মনে হতে লাগলো অনেক সময়।  চাষী ভেতরে গেছে কিন্তু বাড়ি থেকে আর বের হওয়ার নাম নেই। সিংহ কেবলই উসখুশ করতে থাকে। তবু মনকে সে এই বলে প্রবোধ দেয়, বিয়ের কনে তো তাই সাজিয়ে-গুজিয়ে আনতে সময় লাগছে। আশায় আশায় তাই সে ধৈর্য ধরে বসে থাকে।  কিছু সময় পরে হাতে একটা বড়সড় মুগুর নিয়ে চাষী এলো বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর সেই সাথে মুগুরের দমাদম পিটুনি পড়তে লাগল সিংহের পিঠে। দাঁত নেই নখ নেই এখন সিংহ তো অসহায় ছাগলের মতো। চাষীকে ঘায়েল করার সব অস্ত্রই সে খুইয়েছে। তাই মুগুরের বেধড়ক পিটুনি খেয়ে বেচারার কেবল ঘন ঘন গর্জন তোলা আর মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়া ছাড়া আর কিছু করার উপায় ছিল না। শেষে প্রাণটা নিয়ে কোনোমতে টেনে দিল পিঠ টান।  বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের আরেকটি ছোট ঘটনার কথা বলে শেষ করব। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যকে বলা হয় ‘অন্ধকার যুগ’। একমাত্র বড়ু চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো সাহিত্য রচনা হয়নি সে সময়। তাই যেসব বিষয়ে বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগ নিয়ে পড়তে হয় তাদের জন্য এই একটি প্রশ্ন ছিল গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যেসব ছাত্র কম পরিশ্রম করত তারা অন্যের নোট নিয়ে পড়ত। একে অন্যের কাছে যেতে যেতে ফটোকপি নোটগুলো দিনের পর দিন অস্বচ্ছ হয়ে যায়। অস্বছ নোট দেখে একছাত্র বলল, এটা বুড়া চণ্ডীদাস হবে। তো সে পরীক্ষার খাতায় বুড়া চণ্ডীদাস লিখল। তার নোট নিয়ে আরেক ছাত্র ভাবল, বুড়া চণ্ডীদাস ভাষাটা ঠিক হবে না। সে পরীক্ষার খাতায় লিখল বৃদ্ধ চণ্ডীদাস।  পরিশেষে বলতে পারি, না ভাবলে বড়ু একদিন বৃদ্ধ হয়ে যায়। তাই আসুন কিছু করার আগে একবার ভাবি।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020 SwadeshNews24
Site Customized By NewsTech.Com