ডট বিডি নিবন্ধন ও ইন্টারনেটের বাজার নিরাপত্তা

internetমাননীয় প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম তাঁর মন্ত্রণালয়ভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে সম্প্রতি বেশ কিছু প্রশংসনীয় পদক্ষেপ নিয়েছেন। এই পদক্ষেপগুলো যদি সত্যি সত্যি বাস্তবায়িত হয় ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের অনেক শর্ত নিজে থকেই পুরণ হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

মাননীয় মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে সবিনয়ে জানাতে চাই যে, বাংলাদেশের টপ লেভেল ডোমেইন নিবন্ধন ও ব্যবহারের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে বিদ্যমান জটিলতা নিরসনে তাঁর ও তাঁর মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগী হওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। কেন জরুরি হয়েছে তার সংক্ষিপ্ত পটভূমি ও ব্যাখ্যা দিচ্ছি-

১। বাংলাদেশের জন্যে বরাদ্দ বা নির্ধারিত কেন্দ্রীয় ডোমেইন ডট বিডি নিবন্ধনের একমাত্র বৈধ কর্তৃপক্ষ বা অপারেটর ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের হয়ে এই নিবন্ধনের কাজটি করে বিটিসিএল।

২। নিবন্ধনের জন্যে বিটিসিএল যেসব নিয়ম-কানুন তৈরি করে রেখেছে দুনিয়ার কোথাও এরকম নিয়ম নেই! উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার বুঝা যাবে। যেমন কেউ যদি ডট বিডি যুক্ত করে দেশীয় পরিচয়ে তার প্রতিষ্ঠান বা উদ্যোগের ডোমেইন ঠিক করতে চায় তাহলে নির্ধারিত দুই পাতার একটি ফরম পূরণ করে সঙ্গে পূর্ব স্বাক্ষরকৃত চার পাতার একটি চুক্তিপত্রের কপি যুক্ত করে যেতে হবে বিটিসিএল ঢাকায় মগবাজার কার্যালয়ে। দরখাস্ত মঞ্জুর হলে বিটিসিএল একটি ‘ডিমান্ড নোট’ জারি করবে, যেখানে লেখা থাকবে কত টাকা জমা দিতে হবে। সে অনুযায়ী নির্ধারিত ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে সেই কাগজ নিয়ে আবারও যেতে হবে মগবাজার কার্যালয়ে। সেটা জমা হলে কয়েক টেবিল ঘুরে এসে জারি হবে ডোমেইন বরাদ্দপত্র।
এই কাজের জন্যে বিটিসিএল কিছু কিছু এজেন্ট নিয়োগ করেছে বলে জানা যায় কিন্তু এদের স্বাধীনভাবে নিবন্ধনের সুযোগ নেই। সকল ক্ষেত্রে একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতেই হয়।

৩। ডোমেইন হোস্টিং করতে নেম সার্ভার ঠিক করে নিতে হয়। বিটিসিএল-এর ডোমেইন নিবন্ধনের ফরমের বিধানে আছে সে তথ্য আপনাকে আগেই দিতে হবে! এখন কেউ যদি মনে করে সে বিটিসিএল থেকে হোস্টিং করাবে তাহলে যেসব বিধি বিধান আর প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয় কেউ সে পথে যেতে চাইবে না। বিশেষ করে হোস্টিং নিবন্ধন ফি আর স্পেস অনুযায়ী বার্ষিক খরচ যেটা বিটিসিএল ওয়েবসাইটে উল্লেখ আছে তা দেখলে কেউ সরকারি সেবা নিতে যাবে না।

মাননীয় প্রতিমন্ত্রী নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, দুনিয়াব্যাপী ডোমেইন নিবন্ধনের হার ক্রমান্বয়য়ে উর্ধ্বমুখী যার চিত্রটি ২০১৫ সালের প্রথম তিন মাসে এরকম- শুধু ডোমেইন নিবন্ধন হয়েছে ৬ মিলিয়ন। ২০১৫ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত নিবন্ধিত একটিভ ডোমেইনের সংখ্যা ছিল ২৯৪ মিলিয়ন। ২০১৪ সালের নিবন্ধন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় নতুন ডোমেইন নিবন্ধনের বার্ষিক বৃদ্ধির হার গড়ে প্রায় ৭% ভাগ (ভেরিসাইন-নাসডাকের ৩০ জুন ২০১৫ তারিখের প্রতিবেদন)।

এই ইন্টারনেট অর্থনীতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের তরুণ সমাজের ভবিষ্যৎ। খোঁজ-খবর নিয়ে যতদূর জানা গেছে, ডট বিডি নিবন্ধনের সংখ্যা তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। প্রথমদিকে উৎসাহী হয়ে অনেকে ডোমেইন নিবন্ধন করে নিলেও পরে এই পথে এখন কেউ সহজে যেতে চান না।

পত্র-পত্রিকায় ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে সরকার ডোমেইন নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করতে অনলাইন প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে। আমাদের সুপারিশ হলো, সরকার এই নিবন্ধনের কাজে তরুণ সমাজকে উৎসাহী করবেন। আমাদের দেশে নিবন্ধিত ডোমেইন ও হোস্টিং সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। কেবল এই দুটি খাতে অংশ নিয়ে তরুণদের একটি বড় অংশ সরকারের কাজে সহায়তা করেও নিজের কর্মসংস্থান করে নিতে পারে। ওয়েব ডিজাইন, কারিগরি ব্যবস্থাপনা, ক্লাউড বা দূর ইন্টারনেট তথ্য ব্যবস্থাপনায় আমাদের সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। কিন্তু সুযোগের অভাবে বা সরকারি পদ্ধতির দীর্ঘ সূত্রিতার জন্যে এই কাজে যাদের যুক্ত হবার কথা তাদের একটি বড় অংশ বাধ্য হয়ে বিদেশে অর্থ খরচ করে দেশের জন্যে কাজ করছে। অথচ দেশের পদ্ধতি কিছুটা সহজ ও যুগোপযোগী করে নিলেই বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করে দেশের ইন্টারনেট অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখা সম্ভব। আর এতে করে ইন্টারনেট নিবন্ধনে আমাদের দেশে বেসরকারি খাতে ‘শেয়ারড রেজিস্ট্রি মডেল’ চালু করা সুগম হবে। এ ক্ষেত্রে সরকার যদি বাজারে একটি উৎসাহমূলক প্রতিযোগিতা তৈরি করে দেন (বিক্রয় কমিশন ও সার্ভিস এক্সটেনশন অনুমোদন দিয়ে) তাহলে শত শত তরুণ ডোমেইন বিপণনে ভুমিকা রাখতে পারে। মনে রাখতে হবে ডট বিডি ব্যবহার ইন্টারনেটে শুধুমাত্র দেশীয় পরিচয়ের জন্যে নয়, কেন্দ্রীয় নিবন্ধনের স্মার্ট পদ্ধতি চালু হলে নিরাপত্তা বিষয়টিও সামনে চলে আসবে আর তা নিশ্চিত করা এখনকার চেয়ে অনেক সহজ হবে।

নিরপত্তাজনিত কারণ ছাড়াও অনেক দেশে ইন্টারনেট বাজারে এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তিবর্গ অনৈতিক কাজে যুক্ত, যাদের পদচারণা বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে। এদের অনেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ডোমেইন কিনে রাখে ও পরে সুযোগ বুঝে চড়া দামে বিক্রি করে, ইন্টারনেট সমাজে এরা খুবই ধিক্কৃত ও ‘স্কোয়াটার’ নামে পরিচিত। বাংলাদেশে ডোমেইনের কেন্দ্রীয় নিবন্ধনের ব্যবস্থা করে কার্যকরী নিরাপত্তা পদ্ধতি চালু হলে আমাদের দেশে এই শ্রেণির উৎপাত বন্ধ হবে।

আরও বড় পরিসরে, সরকারকে যদি সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেট নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়, তাহলে এর সঙ্গে সেবাদানকারী আইএসপি-সহ সবগুলো প্রতিষ্ঠানকেও একটি স্মার্ট চেইন অফ কমান্ডের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ডট বিডি নিবন্ধনের কাজ ছাড়াও একে জনপ্রিয় করতে সবার সম্মিলিত উদ্যোগ ও ভুমিকা থাকা জরুরি। সরকারকে সে পথ সুগম করে দিতে হবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *