২০১২ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে ১০ রানে ৯টি উইকেট নিয়ে রেকর্ড গড়েছিলেন নেত্রকোনার আবু হায়দার রনি। ৩টি বছর পার হয়ে এখন তার বয়স প্রায় কুড়ি। এরই মাঝে ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রিমিয়ার লীগ, জাতীয় ক্রিকেট লীগে খেললেও আলোতে আসতে পারেননি। কিন্তু প্রথমবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল) খেলেই ঝরাচ্ছেন আলোর দ্যুতি। অথচ বিআরবি বিপিএল শুরু হওয়ার আগে তিনি ছিলেন না কোনো আলোচনাতেই। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে এ পর্যন্ত ৭ ম্যাচে শিকার ১৩টি উইকেট। তার চেয়ে একটি ম্যাচ কম খেলে সমান উইকেট নিয়ে সাকিব রয়েছেন শীর্ষে। জাতীয় ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফির নেতৃত্বে এসে নিজেকে যেন খুঁজে পেয়েছেন এই আবু হায়দার। শুধু মাশরাফিই নয়, দলের লঙ্কার তারকা নুয়ান কুলাসেকারাও তাকে দিচ্ছেন ব্যাটসম্যানদের গুঁড়িয়ে দেয়ার দীক্ষা। এরই মধ্যে অধিনায়ক মাশরাফি বলে দিয়েছেন খুব দ্রুতই জাতীয় দলে দেখা যেতে পারে তাকে। কারণ সেই যোগ্যতা রনির আছে। বৃহস্পতিবার খেলার আগে নিজের বিপিএল অভিজ্ঞতা ও লক্ষ্য নিয়ে কথা বলেছেন মানবজমিনের স্পোর্টস রিপোর্টার ইশতিয়াক পারভেজের সঙ্গে। তার কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-
প্রশ্ন: প্রথম বিপিএলে বল হাতে দারুণ পারফরম্যান্সের পিছনে রহস্য কি?
আবু হায়দার রনি: রহস্য তেমন কোনো কিছুই না, আমি প্রতিটি ম্যাচেই নিজের সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করি। কখনও সম্ভব হয় কখনও সম্ভব হয় না। কিন্তু আমি হাল ছাড়ি না। আমি চেষ্টা করি ভুলগুলো শুধরে আরও ভালো বল করার।
প্রশ্ন: অনেকেই বলেন মাশরাফির সংস্পর্শেই আপনার এত পরিবর্তন..
আ. হা. রনি: অনেকটাই সত্যি। কারণ আমি যখন মাঠে বল করি প্রতিটি মুহূর্তে তিনি আমাকে সাপোর্ট দেন। খারাপ বল করলে সাহস দেন, ভেঙে পড়তে না করেন। ভালো বল করলে সেখানেও তিনি খুশি হয়ে প্রশংসা করেন। ম্যাচের কোন মুহূর্তে কেমন বল করতে হবে, কাকে কি ধরনের বল করতে হবে এ সবই আমি তার কাছ থেকে শিখতে পারছি। সেই সঙ্গে আমারও চেষ্টা থাকে তার কথা মতো যেন বল করতে পারি। মাশরাফি ভাই আসলেই অন্যরকম একজন মানুষ যিনি পাশে থাকলে ভীষণ সাহসও পাওয়া যায়।
প্রশ্ন: মাঠে অধিনায়ক মাশরাফিকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
আ. হা. রনি: মাঠে ও মাঠের বাইরে মাশরাফি ভাই অসাধারণ একজন মানুষ। তার অন্যতম বড় গুণ হলো সবাইকে প্রচণ্ড সাহস দিতে পারা।
প্রশ্ন: দলে অনেক বিদেশি ক্রিকেটার আছে, তাদের কাছ থেকে কতটা সাহায্য পাচ্ছেন?
আ. হা. রনি: দলের সব বিদেশিই বেশ আন্তরিক। আর আমাদের দলে মাশরাফি ভাই ছাড়াও শ্রীলঙ্কান পেসার কুলাসেকারা আছেন। তিনিও আমাকে বেশ সাহায্য করেছেন বোলিংয়ে উন্নতি করাতে। অনেক টিপস পেয়েছি তার কাছে যেগুলো আমার বোলিংয়ের উন্নতিতে বেশ সাহায্য করবে।
প্রশ্ন: বিপিএলে এখন পর্যন্ত সেরা উইকেট শিকার কোনটি?
আ. হা. রনি: দুটি আছে, একটি সাঙ্গাকারাকে বোল্ড করেছিলাম। আরেকটি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ভাইকেও বোল্ড করেছিলাম। আমি জানি হয়তো আরও উইকেট পাবো কিন্তু এই দুটি সারাজীবন মনে থাকবে।
প্রশ্ন: ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগ ও জাতীয় ক্রিকেট লীগের সঙ্গে বিপিএলের পার্থক্য কি মনে হয়?
আ. হা. রনি: আমরা যখন ঢাকা প্রিমিয়ার লীগ খেলি বা এনসিএল খেলি তখন এত দর্শক- এত হইচই থাকে না। কিন্তু বিপিএলে সেটি আছে। এত মানুষের মাঝে পারফরম্যান্সের রোমাঞ্চটাই আলাদা।
প্রশ্ন: বোলিং আপনার অন্যতম শক্তি কি?
আ. হা. রনি: আমার অন্যতম শক্তি হলো লাইন লেন্থ ঠিক রেখে বল করা। ভালো জায়গাতে ব্যাটসম্যানের দুর্বলতা বুঝে বল করা।
প্রশ্ন: ক্রিকেটে আসার অনুপ্রেরণা কে?
আ. হা. রনি: আমাদের নেত্রকোনায় একজন কোচ ছিলেন, তার নাম সজল। তাকে আমি দাদা ডাকতাম। যদিও এখন তিনি বেঁচে নেই। কিন্তু তার কারণেই আমি ক্রিকেটার হতে পেরেছি। তিনি বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতেন।
প্রশ্ন: জাতীয় দল নিয়ে ভাবছেন?
আ. হা. রনি: না, এখনও অনেক সময় আছে। জাতীয় দল নিয়ে কোন তাড়াহুড়া নেই। বল করতে থাকি, ভালো করলে হয়তো একদিন সুযোগ আসবে।
এবারের বিপিএল- একনজরে রনি
ম্যাচ ইঃ ওভার মেডেন রান উই. গড় সেরা ইকো. স্ট্রাইক
৭ ৭ ২৭.৪ ০ ১৮৯ ১৩ ১৪.৫৩ ৪/২৮ ৬.৮৩ ১২.৭