আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে তিন সাংসদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে পারলেও মন্ত্রীদের বেলায় এসে পিছু হটেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তারা দুই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আমলে নিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ছেড়ে দিয়েছে।
কমিশন সচিবালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, কমিশন মন্ত্রীদের সতর্ক করে তাঁদের বিব্রত করতে চান না এবং নিজেরাও বিব্রত হতে চান না। সে জন্য নতুন করে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এখন থেকে সরাসরি কমিশন থেকে কাউকে সতর্ক করে কোনো চিঠি দেওয়া হবে না। যেকোনো ধরনের আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কমিশন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেবে।
জানতে চাইলে কমিশন সচিবালয়ের সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেন, দুই মন্ত্রী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ আছে। তাঁদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে কমিশন থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে।
এর আগে আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে কমিশন গত রোববার সাংসদ এম এ মালেক (ঢাকা-২০), শফিকুল ইসলাম (নাটোর-২) ও শওকত হাচানুর রহমানকে (বরগুনা-২) কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। জবাবে তাঁরা দুঃখ প্রকাশ করে ভবিষ্যতে আচরণবিধি মেনে চলার অঙ্গীকার করেন।
কিন্তু মন্ত্রীদের বেলায় এসে ভিন্ন সিদ্ধান্ত নিল কমিশন। আজ বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহের ফুলপুর পৌরসভার রিটার্নিং কর্মকর্তাকে (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা-ইউএনও) পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ময়মনসিংহের ফুলপুর পৌরসভায় গত ৭ ডিসেম্বর তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে তা কমিশনকে জানানোর অনুরোধ করা হলো।
কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে সঠিক বলে মনে করেন না কমিশন সচিবালয়ের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা। তাঁরা বলেন, মন্ত্রীরা মন্ত্রণালয়ের প্রধান নির্বাহী। তাঁরা কোথাও আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে রিটার্নিং কর্মকর্তারা তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে সাহস পাবেন না। কারণ, কর্মকর্তাদের পদোন্নতি অনেকাংশেই নির্ভর করে মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের ওপর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফুলপুরের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ইউএনও সুব্রত পাল প্রথম আলোকে বলেন, এ সংক্রান্ত কোনো চিঠি এখনো পাননি। তিনি বলেন, ৭ ডিসেম্বর শেরপুর থেকে ফেরার পথে তথ্যমন্ত্রী ফুলপুরে একটি পথসভায় রাজনৈতিক বক্তব্য দেন। এতে তিনি কারও জন্য ভোট চাননি। তবে কিছুক্ষণ পর ধর্মমন্ত্রী ওই সভায় যোগ দিয়ে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোট চান।
এ ছাড়াও মাঠ পর্যায়ে সবাই যাতে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলে, সে বিষয়ে সহযোগিতা চেয়ে কমিশন আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দিতে বলা হয়েছে।