দিনাজপুরের ইসকন মন্দিরে হামলার ঘটনায় রাজধানীর প্রেস ক্লাবে ও শাহবাগে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন হিন্দু মহাজোটের নেতাকর্মীরা। তারা অবিলম্বে ইসকন মন্দিরে হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানান। নইলে কঠোর আন্দোলনের হুমকি প্রদান করেছেন। গতকাল সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সনাতন ধর্মের বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও ইসকন বাংলাদেশ নামে তিনটি সংগঠনের প্রায় পাঁচশত নেতাকর্মী বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। এ সময় তারা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। বিক্ষোভ সমাবেশ বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কাজল দেবনাথ বলেন, দেশের মানুষ দেখতে পাচ্ছে দেশে একের পর এক সনাতন ধর্মের লোক ও উপাসনালয়গুলোর ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির আওতায় আনতে ব্যর্থ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এভাবে আর চলতে দেয়া যায় না। তিনি আরও বলেন, আমাদের ধারণা সংক্ষালুঘদের ওপর প্রত্যেক হামলায় দেশের সাম্প্রদায়িক শক্তি জামায়াত-শিবির জড়িত। তারা এ হামলা করে দেশকে বিশ্বের কাছে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসাবে উপস্থাপন করতে চাই। আমাদের বিশ্বাস এই সরকার স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার। ওই প্রতিক্রিয়াশীল সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে যতো দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে ততো বেশি দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল হবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে বর্তমানে যে হামলা শুরু হয়েছে ওই হামলা বন্ধ করা যাবে না।
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সদস্য সচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামানিক বলেন, কয়েকদিন আগে ফরিদপুর জেলার হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলোক সেনের ওপর হামলা চালিয়ে আহত করা হয়েছে। এর কিছুদিন আগে পাবনায় এক ধর্মযাজকের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। গতকাল দিনাজপুরে ইসকন মন্দিরে হামলা চালানো হলো। এগুলো কিসের আলামত? সরকারের দায়িত্ব কারা ওইসব হামলা করছে এবং তাদের ওই হামলায় উদ্দেশ্য কি শুধু সনাতন ধর্মের লোক নয় গোটা জাতি জানতে চায়। সরকারের দায়িত্ব তাদের চেহারা জাতির সামনে উন্মোচন করা। ইসকন বাংলাদেশের উপদেষ্টা স্বাধীন বাংলা বেতারের শিল্পী শ্রী মনরোঞ্জন ঘোষাল বলেন, ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। আমরা এদেশের নাগরিক। অথচ আমাদের বিশ্বাসের ওপর এভাবে হামলা হচ্ছে। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আর প্রতিবাদ নয়, এবার সময় এসেছে রুখে দাঁড়াবার। আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে হামলাকারীদের ধরা না হলে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া হবে। বিক্ষোভ সমাবেশে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত কুমার, জাতীয় হিন্দু মহাজোটের প্রেসিডিয়াম সদস্য কালীপদ মজুমদার, ইসকন বাংলাদেশের উপদেষ্টা গৌরি দাস ব্রক্ষাচারী ও কৃষ্ণকৃপা দাস বক্তব্য রাখেন। পরে দুপুর ১২টায় তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
ওই মিছিলটি হাইকোর্ট হয়ে শাহবাগে যান। বিক্ষুব্ধ ওই সংগঠনটির নেতাকর্মীরা শাহবাগে গিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এতে ওই সড়কে যান চলাচল সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে তারা সেখান থেকে ঘটনাস্থলে আসেন। তাদের দাবি দাওয়া উচ্চ মহলে জানানো হবে বলে পুলিশ তাদের আশ্বাস দিলে তারা অবরোধ তুলে নেয়। এ সময় রমনা জোনের পুলিশের সহকারী কমিশনার শিবলী নোমান সাংবাদিকদের বলেন, তাদের কর্মসূচি সম্বদ্ধে পুলিশ আগে থেকে অবগত ছিল না। দিনাজপুরে হামলার ঘটনায় তারা হঠাৎ করে ওই বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছিলেন। কর্মসূচিকে ঘিরে যেন কোনোরকম অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে এজন্য পুলিশ সতর্ক ছিল।