রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক একেএম শফিউল ইসলাম হত্যাকান্ডের এক বছর পর আলোচিত এই হত্যা মামলার চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। রাজশাহী জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন উজ্জলসহ ১১জনকে অভিযুক্ত করে গত ৩০ নভেম্বর রাজশাহীর চীফ মেট্রোপলিটিন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক রেজাউস সাদিক। বৃহস্পতিবার বিকেলে সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন পরিদর্শক রেজাউস সাদিক।
চার্জশিটে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে- রাজশাহী জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন উজ্জল, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দপ্তরের সেকশন অফিসার নাসরিন আখতার রেশমা, তার স্বামী যুবদল নেতা আবদুস সামাদ পিন্টু, পিন্টুর সহযোগী আরিফুল ইসলাম মানিক, সিরাজুল ইসলাম ওরফে কালু, সবুজ শেখ, আল মামুন, ইব্রাহিম খলিল ওরফে টোকাই বাবু, আরিফ, সাগর ও জিন্নাত আলী। এদেরমধ্যে উজ্জল, আরিফ, সাগর ও জিন্নাত পলাতক রয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক রেজাউস সাদিক বলেন, মামলার আগের তদন্তকারী কর্মকর্তারা রেশমার দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে তদন্ত করেন। আমার তদন্তেও একই বিষয়টি ওঠে এসেছে। রেশমার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের জেরে পিন্টু ও তার সহযোগীরা শফিউলকে পরিকল্পিতভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। এই খুনের ঘটনা জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন উজ্জল পরিকল্পনা মোতাবেক হয়েছে। এতে রেশমা তার স্বামীকে প্ররোচিত করেন বলে আদালতে দেয়া জবানবন্দীতে স্বীকার করেছেন।
তিনি আরো জানান, এ হত্যাকান্ডের ৫ ঘণ্টার মাথায় ফেসবুক পেজে হত্যার দায় স্বীকার করে স্ট্যাটাস দেয় কথিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২। এ বিষয়ে ব্যাপক তদন্তের পরও তদন্তে জঙ্গি সম্পৃক্ততার কোন প্রমাণ মেলে নি। হত্যাকান্ডের মোটিভ ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতেই ওই স্ট্যাটাসটি দেয়া হয়েছিল।
সূত্র মতে, ২০১৪ সালের ১৫ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ চৌদ্দপাই এলাকায় নিজ বাড়ির সামনে দিনদুপুরে রাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক একেএম শফিউল ইসলামকে ধারালো চাপাতি দিয়ে নৃশংসভাবে কোপানো হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে নেয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনার ৫ ঘণ্টার মাথায় ফেসবুকে পেজে হত্যার দায় স্বীকার করে স্ট্যাটাস দেয় জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২। ঘটনার পরের দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এন্তাজুল হক বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে নগরীর মতিহার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। প্রথমে মামলাটির তদন্ত করেন মতিহার থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন। এরপর ২৩ নভেম্বর এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে যুবদল পিন্টুসহ ৬ জনকে আটক করে ঢাকা নিয়ে যায় র্যাব।
সে সময় সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব জানায়, আটক যুবদল নেতা পিন্টুর স্ত্রী রেশমার দ্বন্দ্বের জের ধরে হত্যাকান্ড ঘটনার কথা স্বীকার করেছে আটকৃতরা। তবে ২৫ নভেম্বর আটক ৬ জনকে আদালতে হাজির করা হলে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এই মামলার তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ায় চলতি ২১ জানুয়ারি মামলাটি মহানগর গোয়েন্দা শাখায় স্থানান্তর করা হয়। সেখানে মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আসিকুর রহমান। গোয়েন্দা পুলিশ এ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে যুবদল নেতা পিন্টুর স্ত্রী রেশমাসহ ২০ জনকে আটক করে। চলতি বছরের ৭ মার্চ রেশমাকে রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর রেশমাকে রিমান্ডে নেয়া হয়। রিমান্ড শেষে ১৯ মার্চ রেশমা হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেয়। দীর্ঘদিন তিনি মামলাটি তদন্ত করার পর পরিদর্শক আসিকুর রহমানকে আরএমপি থেকে বদলি করার পর গত অক্টোবর মাসে তদন্তের দায়িত্ব পান রেজাউস সাদিক।