চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ইপিজেড-এর নৌবাহিনীর ঈশা খাঁ ঘাঁটি এলাকার একটি মসজিদে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন কয়েকজন। আহতদের চট্টগ্রাম নেভি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গতকাল জুমার নামাজের সময় এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় দুইজনকে আটক করা হয়েছে। নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আটককৃতদের মধ্যে একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তার নাম মিজান। তিনি সেখানকার ব্যাটম্যান হিসেবে দুই বছরের বেশি সময় ধরে নিয়োজিত রয়েছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অন্যদিকে এই ঘটনায় আহত হয়েছেন নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম মেরিন ফিশারিজ একাডেমির নেভিগেশন অফিসার রায়হান রউফ। তিনি ঘটনার সময় মসজিদে পেছনের সারির দিকে ছিলেন। যখন বোমা বিস্ফোরিত হয় তখন তার মাথার পেছনে ৩টি স্প্লিন্টার লাগে। এরপর তাকে নেভি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শী একজন জানান। ঘটনার পরপরই মসজিদে নামাজ আদায় বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ ঘটনায় অন্তত ১৫ জন আহত হন।
গতকাল বিকালে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (বন্দর শাখা) হারুনুর রশিদ হাজারী বলেন, ঘটনার পরপরই নৌবাহিনী থেকে আমাকে ফোন করা হয়েছিল। আমি দ্রুত সেখানে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি নৌবাহিনীর একটি হাসপাতাল আছে সেখানে। তার পাশেই একটি মসজিদ। তবে একে ইবাদতখানাও বলতে পারেন। সেখানেই ঘটেছে এই ঘটনা। তিনি আরও বলেন, দুপুর দেড়টার সময় এই ঘটনা ঘটেছে। মসজিদের খতিব যখন সূরা ফাতিহা পাঠ শুরু করেন তখনি মসজিদে বিকট আওয়াজ হয়। তবে ঠিক একই সময়ে পাশে আরেকটি বিস্ফোরণ এর আওয়াজ শোনা গেছে। আমরা ধারণা করছি কোন দুষ্কৃতিকারী পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।’ ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করার বিষয়ে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, তিনটি অবিস্ফোরিত হাতবোমা আমরা মসজিদের বাইরে থেকে উদ্ধার করেছি। একজনকে হাতেনাতে আটক করেছে মুসল্লিরা। এই ঘটনায় আমরা ৬ জনকে গুরুতর আহত দেখেছি। বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার পরপরই নেভি এলাকায় জোরদার করা হয় সব ধরনের নিরাপত্তা। এই সময় বাইরের কোন লোকজন সেখানে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ভেতরে ঢুকতে পারেনি। একই সময়ে ভেতরে আটকেপড়া অনেকের আত্মীয়-স্বজনও বাইরে বেরুতে পারেননি। নগর পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, একজনকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে, আরেকজনকে সন্দেহজনক হওয়ায় আটক করা হয়েছে। তাদেরকে নৌবাহিনীর ঘাঁটির ভেতরেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। নৌবাহিনীর ওই মসজিদে অন্তত ১৫০ থেকে ২০০ জন মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন। সাধারণ সময়ে এখানে গড়ে ৫০ জন মুসল্লি হয় প্রতি ওয়াক্তে। তবে শুক্রবার হওয়ায় বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও সেখানে কর্মরত নৌবাহিনীর সদস্যদের আত্মীয়-স্বজনরা জুমার নামাজে জড়ো হন। হাসপাতালের নিচে যে মসজিদে এই ঘটনা ঘটেছে তার পাশে আরও দু’টি মসজিদ রয়েছে। ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম পুলিশ কমিশনার আবদুল জলিল মণ্ডল। এই সময় তার সঙ্গে ছিলেন পুলিশের আরও দু’টি গাড়ি। ঘটনার বিষয়ে আবদুল জলিল মণ্ডল বলেন, ঘটনা খোলাসা না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, দু’জনকে আটক করা হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যারা আহত হয়েছেন তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আমরা অবিস্ফোরিত বোমার ধরন ও নমুনা দেখে বলতে পারবো ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বোমা উদ্ধারের খবর পেয়ে বিকাল সোয়া ৪টায় সেখানে হাজির হন গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার কুসুম দেওয়ান ও মোক্তার আহমেদ। উল্লেখ্য, এর আগে শিয়া মসজিদে বোমা হামলা হলেও এবারই প্রথম সুন্নী মসজিদে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলো।