,আজ ১২ রবিউল আউয়াল, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের এই দিনে আরবের পবিত্র মক্কা নগরীতে বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারি রহমাতুলি্লল আলামিন সাইয়েদুল মুরসালিন খাতামুন্নাবিয়ীন তাজদারে মদীনা জগৎকুল শিরোমণি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) জন্মগ্রহণ করেন। ৬৩ বছর পর একই দিনে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। তাই মুসলিম উম্মাহর জন্য এ দিনটি যেমন আনন্দের তেমনি শোকের।
আইয়ামে জাহেলিয়াতের অন্ধকার দূর করে তৌহিদের মহান বাণী নিয়ে এসেছিলেন এই মহামানব। প্রচার করেছেন শান্তির
ধর্ম ইসলাম। তার আবির্ভাব এবং ইসলামের শান্তির ললিত বাণীর প্রচার সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
ইসলাম ধর্মমতে, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সা.) নবুয়তের সিলসিলায় শেষ নবী। সারা আরব বিশ্ব যখন পৌত্তলিকতার অন্ধকারে ডুবে গিয়েছিল, তখন মহান আল্লাহ পাক তার পেয়ারা হাবিব বিশ্বনবী (সা.)-কে বিশ্বজগতের রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছিলেন। তিনি ৪০ বছর বয়সে নবুয়ত লাভ করেন। এরপর বিশ্ববাসীকে মুক্তি ও শান্তির পথে আহ্বান জানান। সব ধরনের কুসংস্কার, গোঁড়ামি, অন্যায়, অবিচার ও দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে মানবসত্তার চিরমুক্তির বার্তা ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু অসভ্য মূর্খ জাতি তার দাওয়াত গ্রহণ না করে রাসূলের (সা.) উপর নির্যাতন শুরু করে, সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিভিন্নমুখী চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করতে থাকে। আল্লাহর সাহায্যের ওপর ভরসা করে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জীবনবাজি রেখে সংগ্রাম চালিয়ে যান তিনি। ধীরে ধীরে সত্যান্বেষী মানুষ তার সাথী হতে থাকে। অন্যদিকে কাফেরদের ষড়যন্ত্রও প্রবল আকার ধারণ করে। এমনকি এক পর্যায়ে তারা রাসূলকে (সা.) হত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। রাসূল (সা.) আল্লাহর নির্দেশে জন্মভূমি ত্যাগ করে মদীনায় হিজরত করেন। মদীনায় তিনি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করেন এবং মদীনা সনদ নামে একটি লিখিত সংবিধান প্রণয়ন করেন। মদীনা সনদ বিশ্বের প্রথম লিখিত সংবিধান নামে খ্যাত। এ সংবিধানে ইহুদি, খ্রিস্টান, মুসলমানসহ সবার অধিকার স্বীকৃত হয় যথার্থভাবে। এদিকে মক্কার কাফেরদের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় লেবাসধারী মুনাফিকচক্র। এরা ইসলামের চরম ক্ষতি সাধনে লিপ্ত হয় মহানবী (সা.)-এর বিরুদ্ধে। মুহাম্মদ (সা.)-এর নেতৃত্বে ওহুদ যুদ্ধে এক হাজার মুসলিম সৈন্য রওনা করলে পথিমধ্যে মুনাফিক সর্দার আবদুল্লাহ ইবনে উবাইর নেতৃত্বের ৩শ’ জন সরে পড়ে এবং ওহুদ যুদ্ধে বিপর্যয় ঘটানোর অপচেষ্টা চালায়। এ যুদ্ধে একটি ভুলের কারণে মুসলমানরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এতে অনেক সাহাবা শহীদ হন। স্বয়ং রাসূল (সা.)-এর দন্ত মোবারক শহীদ হয়। ২৩ বছর শ্রম সাধনায় অবশেষে রাসূলে পাক (সা.) দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বিজয় অর্জন করেন। মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে তা পূর্ণতা লাভ করে। অতঃপর বিদায় হজের ভাষণে তিনি আল্লাহর বাণী শুনিয়েছেন মানবজাতিকে। ‘আজ থেকে তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন তথা জীবন ব্যবস্থাকে পরিপূর্ণ করে দেয়া হলো। তোমাদের জন্য দ্বীন তথা জীবন ব্যবস্থা হিসেবে একমাত্র ইসলামকে মনোনীত করা হয়েছে।’
বাণী: ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন। এসব বাণীতে তারা দেশবাসীসহ মুসলিম উম্মাহর সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। একই সঙ্গে তারা মহানবী (সা.)-এর জীবনাদর্শ অনুসরণ করে ভ্রাতৃত্ববোধ ও মানবকল্যাণে ব্রতী হওয়ার আহ্বান জানান।
কর্মসূচি : ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে যথাযথ মর্যাদায় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের জন্য সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মহানবী (সা.)-এর ওপর আলোচনা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল।
এ উপলক্ষে ধর্ম মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া সরকারি, আধা সরকারি ভবন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ভবন ও সশস্ত্র বাহিনীর সব স্থাপনায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় পতাকা ও ‘কালিমা তায়্যিবা’ লেখা ব্যানার ঢাকা মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ ট্রাফিক আইল্যান্ড ও লাইট পোস্টে প্রদর্শনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে রাতে সরকারি ভবনসমূহ ও সামরিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহে আলোকসজ্জা করা হবে। এ উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন পক্ষকালব্যাপী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনের ওপর আলোচনা সভা, মাহফিলসহ বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার যথাযোগ্য গুরুত্বসহকারে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। জাতীয় দৈনিকগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্রও প্রকাশ করেছে। আজ সংবাদপত্রসমূহে ছুটি পালিত হবে। তাই আগামীকাল শনিবার দৈনিক পত্রিকাসমূহ প্রকাশিত হবে না।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, বৃদ্ধ নিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্রে উন্নত খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।