টেনশনে আওয়ামী লীগ

মানিকগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে শেষ মুহূর্তে ভোটের সমীকরণ নিয়ে চলছে চুলচেড়া বিশ্লেষণ। এখানে  জোট ও ভোটার হিসাবে বিএনপি প্রার্থী সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন। টেনশন আওয়ামী লীগে। আর এই টেনশনের অন্যতম কারণ নিজ দলের শক্তিশালী বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে আওয়ামী লীগের মূল প্রার্থীকে পাশ কাটিয়ে বিএনপি প্রার্থীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলেও অবাক হবার কিছু থাকবে না। ভোটের মাঠে এ রকম আওয়াজ বেশ জোরেশোরেই বইছে। বিগত নির্বাচন গুলোর  প্রেক্ষাপট আর এবারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্র্ণ ভিন্ন। দেখা গেছে, মানিকগঞ্জ পৌরসভায় এ পর্যন্ত  চারবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান মেয়র ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মো. রমজান আলী। তার রাজনৈতিক পরিচয় কখনোই এক জয়গাতে সীমাবদ্ধ ছিল না। রাজনৈতিক যাত্রা শুরু করেছিলেন বিএনপি দিয়ে। এরপর সুযোগ বুঝে জাতীয় পার্টির পালে থেকেছেন বহুদিন। জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। ১৯৯৭ সালে বিএনপি‘র সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন খানের মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী অবপ্রাপ্ত কর্নেল আবদুল মালেকের সাথে রমজান আলী জাতীয় পার্টির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তবে সে নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট ওহাব আলী খান জয়লাভ করেন। জাতীয় পার্টির  অবস্থা যখন নড়বড়ে তখন রমজান আলী যোগ দেন আওয়ামী লীগে। এছাড়া জরুরি অবস্থার সময় দুর্নীতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলায় তাকে কারাবরণ করতে হয়। সর্বশেষ ২০০৮ সালের পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে তাকে সমর্থন না দেয়ায় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভ করেন। সে নির্বাচনে মূলত  বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির বড় একটা অংশের ভোট পেয়ে সহজ জয় পান। কিন্তু গত নির্বাচনের প্রেক্ষপট আর এবারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্র্ণই ভিন্ন। এ নির্বাচনে রমজান আলী আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার কারণে আগের ভোটের হিসাবের সমীকরণই পাল্টে গেছে। সরাসরি ধানের শীষ ও নৌকা প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় রমজান আলী  বিএনপি ও জামায়াতের বড় একটি অংশের ভোট পাওয়া থেকে সম্পূর্ণই বঞ্চিত হচ্ছেন এতে কোন সন্দেহ নেই। নির্বাচনের ব্যালটে যখন ধানের শীষ প্রতীক রয়েছে সেখানে বিএনপি’র সমর্থিত ভোটার ও ২০ দলীয় জোটের শরিক দল জামায়াত তাদের প্রতীকের বাইরে ভোট প্রয়োগ করবেন এটাই বর্তমানে  ভোটের মাঠের বাস্তব চিত্র। ভোটের সমীকরণে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ প্রার্থী রমজান আলীর বড়  টেনশন আওয়ামী লীগের ঘরে শক্তিশালী বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল হুদা সেলিমকে নিয়ে। গণজাগরণ মঞ্চসহ আরও কয়েকটি সংগঠন গাজী কামরুল হুদা সেলিমকে সমর্থন দিয়েছেন। ফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রমজান আলীর বড় টেনশন দলের এই বিদ্রোহী প্রার্থীকে নিয়ে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী রমজান আলী বলেন, দলের ভেতর বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে আমি চিন্তিত নই। আমি পৌর এলাকায় কোটি কোটি টাকার কাজ করেছি। তাই জনগণ আমার সঙ্গে আছে।
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী গাজী কামরুল হুদা সেলিম বলেন, মানিকগঞ্জ প্রথম শ্রেণীর পৌর সভা হলেও তা শুধু কাগজে-কলমে। এখানকার মানুষ নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাই এবারকার নির্বাচন মানুষজন নিচ্ছে, সুন্দর-অসুন্দরের বিরুদ্ধে, ন্যায়-অন্যায়ের বিরুদ্ধে, ভাল-মন্দের বিরুদ্ধে। এ লড়াই হবে পরিবর্তনের লড়াই। তাই পরির্বতনের প্রতীক হিসেবে আমি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। পরিবর্তনের ঢেউ বইছে সবখানেই। মানিকগঞ্জ পৌরসভায় মোট ভোটার  ৪৯ হাজার ৪৩২ জন। এর মধ্যে ২৫ হাজার ১৩জন ভোটারই নারী।  জাতীয় নির্বাচনের প্রতীক হিসেবে এবার মেয়র পদে ধানের শীষ প্রতীক দেয়ায় এ নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের মতোই দেখছেন বিএনপি সমর্থিত সাধারণ ভোটাররা। তার মধ্যে নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোটের ভেতর কোন ধরনের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব না থাকায় তাদের মনোনীত প্রার্থী নাসির উদ্দিন আহমেদ যাদু ভোটের রাজনীতিতে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। আর এই ঐক্য বদ্ধ বিএনপি গঠনের প্রধান সেনাপতির দায়িত্বে রয়েছেন জেলা বিএনপি’র সভাপতি আফরোজা খান রীতার দক্ষ নেতৃত্ব। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী নাসির উদ্দিন আহমেদ যাদু বলেন, ভোটের মাঠে আমি যেখানেই যাচ্ছি সবাই আমাকে গ্রহণ করছেন। এদিকে মানিকগঞ্জ পৌরসভার ভোটাররা বেশকিছু কারণে বর্তমান মেয়র মো. রমজান অলীর ওপর ক্ষুব্ধ।  কাগজে কলমে মানিকগঞ্জ পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণির হলেও উন্নয়নের চিত্র খুবই নাজুক। ফলে দির্ঘদিন ধরে পৌরসভার দুই লক্ষাধিক মানুষ তাদের ন্যায্য  অধিকার থেকে বঞ্চিত।  রমজান আলী ৩৮ বছর পৌর সভার নেতৃত্ব দাবিদার হলেও এই পৌরসভাকে বলা হয় প্রদীপের নিচে অন্ধকার। যানজট, গ্যাস, বিদ্যুৎ, অপর্যাপ্ত পানি সরবরাহ, অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণ, নোংরা পরিবেশ, মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বল্পতা, খেলার মাঠ, শিশুদের বিনোদন কেন্দ্রের অভাব, মাদকের ভয়াবহতা এবং  বখাটেদের উৎপাতসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত এই পৌরসভা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *