দিল্লি, কাঠমান্ডুর পর কেরালার ত্রিবান্দ্রামেও একই চিত্রনাট্যের মঞ্চায়ন। যথারীতি ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করে সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায়। আগের ম্যাচে চ্যাম্পিয়ন আফগানিস্তানের বিপক্ষে লজ্জার হারের পর গতকাল মামুনুলরা হেরেছে মালদ্বীপের কাছে। ভুটানকে হারিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করা মালদ্বীপ, বাংলাদেশকে ৩-১ গোলে হারিয়ে ‘বি-গ্রুপ থেকে প্রথম দল হিসেবে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে। অবশ্য পরের খেলায় ভুটানকে হারিয়ে দ্বিতীয় দল হিসেবে সেমিতে জায়গা করে নেয় আফগানিস্তান।
নৈস্বর্গিক সৌন্দর্য্যের শহর ত্রিবান্দ্রামের ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের সঙ্গে ৪-০ গোলে হারা একাদশে চারটি পরিবর্তন এনেছিলেন কোচ মারুফুল হক। ডিফেন্ডার নাসিরউদ্দিন চৌধুরীর বদলে মালদ্বীপের বিপক্ষে শুরুর একাদশে ছিলেন তপু বর্মণ। রাইটব্যাক নাসিরুল ইসলাম নাসিরের যায়গায় রায়হান হাসান, মিডফিল্ডার সোহেল রানার বদলে জামাল ভূঁইয়া ও ইয়ামিন মুন্নার জায়গায় এ ম্যচে খেলেছেন ওয়ালী ফয়সাল। একাদশে পরিবর্তনের সঙ্গে এ ম্যাচে খেলার ধরনে পরিবর্তন ছিল। মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শুরুতেই বেশ কয়েকটি সুযোগও তৈরি করেছিল বাংলাদেশ। ভালোই খেলছিলেন ওয়ালী ফয়সাল। লেফটব্যাক থেকে ওভার ল্যাপ করে বারবার উপরেও উঠছিলেন। ম্যাচের ৪১ মিনিটে সেই ওয়ালী ফয়সালই হয়ে গেলেন ভিলেন। বক্সে বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে হাতে লাগিয়ে ফেলেন এই ডিফেন্ডার। হলুদ কার্ড আর পেনাল্টি দিতে ভুল করেনি ভিয়েতনামের রেফারি ভু মিন ট্রি। ওই পেনাল্টি থেকেই দলকে এগিয়ে নেন আলী আশফাক (০-১)। শেষ দিকে তপুর হেডে সমতায়ও ফিরেছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু সেটা ধরে রাখতে পারেননি ডিফেন্ডাররা। উল্টো অতিরিক্ত সময়ে আরও দুই গোল হজম করলে বিদায়ের সুর বাজে বাংলাদেশের শিবিরে। অথচ গতকালের ম্যাচে আগে গোল পেয়ে যেতে পারতো বাংলাদেশ। সবচেয়ে সহজ সুযোগটা আসে ম্যাচের ২৮ মিনিটে। টুর্নামেন্টের প্রথম কর্নার থেকে জামালের ক্রস ফাকায় বল পেয়েছিলেন শাখাওয়াত হোসেন রনি। গোলরক্ষককে একাপেয়েও তার গায়ে মারেন এই ফরোয়ার্ড। এর ঠিক তিন মিনিট আগে জাহিদের হেড সাইড পোস্টে লেগে ফিরে এলে গোল বঞ্চিত হয় মামুনুল বাহিনী। পুরো ম্যাচে কমপক্ষে ১০টি কর্নার পায় বাংলাদেশ। সুবিধা করতে না পারলেও সবগুলো কর্নার মামুমুলই করেছেন। ম্যাচের ৩৪ মিনিটের মধ্যেই বিপদজনক স্থানে ৬টি ফাউল করে বাংলাদেশ। সবচেয়ে বিপদজনক স্থানে ফাউলটি করেন মোনায়েম খান রাজু। বক্সের ঠিক উপরে তার করা ফাউলে আলি আশফাকের ফ্রি-কিক অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। দ্বিতীয়ার্ধে তুলনামূলক গুছিয়ে খেলতে শুরু করে মারুফুল হকের শিষ্যরা। শুরুর বিশ মিনিটে চার চারটি কর্নারও পায় বাংলাদেশ। পরে আরও কমপক্ষে সাত আটটি কর্ণার পায় বাংলাদেশ। মামুনুলের নেয়া ওইসব কর্নার থেকে গোলের দেখা মেলেনি। উল্টো ৫৭ মিনিটে আরও একটি গোল হজম করতে পারতো লাল সুবজের প্রতিনিধিরা। তবে এ যাত্রায় দলকে রক্ষা করেন গোলরক্ষক সোহেল। ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পরে অসাধারণ দক্ষতায় ফ্রি-কিকটি রুখে দেন। ৭৪ মিনিটে মামুনুলের ফ্রি-কিকে হেমন্তের হেড কর্নারে রক্ষা করেন মালদ্বীপ। মামুনুলের নেয়া ওই কর্র্নার থেকে বলার মতো কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি বাংলাদেশ। ৭৭ মিনিটে আবদুল্লাহ আসাদুল্লাহর শট কর্নারে রক্ষা করেন তপু বর্মণ। এরপর প্রায় চার পাঁচ মিনিট বাংলাদেশের সীমানায় বল ঘোরাফেরা করে। জামাল ভূঁইয়াকে উঠিয়ে নাবীব নেওয়াজ জীবন ও শাখাওয়াত হোসেন রনিকে উঠিয়ে জুয়েল রানাকে মাঠে নামান মারুফুল। তার এই পরিবর্তনও মাঠে কোনো প্রভাব ফেলেনি। শেষদিকে তপু বর্মণের কল্যাণে ম্যাচে সমতা ফিরলেও তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি (১-১)। ম্যাচের শেষ মিনিটে হাসান নিয়াজের অসাধারন এক গোলে ২-১ এ এগিয়ে যায় মালদ্বীপ। অতিরিক্ত সময়ে বাংলাদেশের কফিনে শেষ পেরেকটি ঢুকে দেন নাসিদ আহাম্মেদ (৩-১)। ২০১১ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সাফেও মালদ্বীপের কাছে একই ব্যবধানে হেরেছিল মামুনুলরা। এতে টানা তিন সাফে জয়হীন থেকেই গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিলো বাংলাদেশ।
মালদ্বীপের সেমির সঙ্গী আফগানিস্তান
আগের ম্যাচে বাংলাদেশকে ৩-১ গোলে হারিয়ে ‘বি’ গ্রুপ থেকে প্রথম দল হিসেবে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে মালদ্বীপ। গতকাল একই ভেন্যুতে ভুটানকে হারিয়ে তাদের সঙ্গী গতবারের চ্যাম্পিয়ন আফগানিস্তান। ত্রিবান্দ্রাম ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে আফগানরা জিতেছে ৩-০ গোলে। তিন গোলের দুটিই করেছেন খায়বার আমিনি, অপর গোলটি এসেছে মাসিয়া সায়গানি।