‘জঙ্গি’ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে ২৭ বাংলাদেশী নির্মাণ শ্রমিককে গ্রেপ্তার ও দেশে ফেরত পাঠিয়েছে সিঙ্গাপুর। তা সত্ত্বেও সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশী শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে। বিভিন্ন নিয়োগকারী বলেছেন, তারা বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া অব্যাহত রাখবেন। কারণ এক্ষেত্রে তাদের হাতে অপশন বা সুযোগ সীমিত। বাংলাদেশী শ্রমিকদের ভূয়সী প্রশংসা করছেন তারা। বলছেন, তারা কঠোর পরিশ্রমী। অন্য নিয়োগকারীরা বলেছেন, কিছু মানুষের জন্য একটি পুরো দেশের পুরো শ্রমিক সমাজকে দায়ী করা ঠিক হবে না। সিঙ্গাপুর থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিক ইংরেজি পত্রিকার আজকের অনলাইন সংস্করণে এসব কথা বলা হয়েছে। সেখানে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে দ্য সিঙ্গাপুর কন্ট্রাক্টরস এসোসিয়েশন। নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক গ্রেপ্তারের ফলে এ খাতে কি প্রভাব পড়তে সে বিষয়ে তারা মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তবে তারা বলেছে, এ বিষয়টি স্পর্শকাতর। তাদের কাছে এ বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য নেই। অন্যদিকে জিয়ান হুয়াং কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিস অ্যানি গান বলেছেন, নির্মাণ খাতে এখনও বাংলাদেশ ও ভারতীয় শ্রমিকের অব্যাহত চাহিদা আছে। কারণ, তারা কঠোর পরিশ্রম করেন। অন্য শ্রমিকদের চেয়ে তাদের কাজের মান ভাল। তিনি বলেন, মাত্র একটি ঘটনার জন্য আমরা বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক আমদানি বন্ধ করে দেবো- এটা হতে পারে না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কোম্পানি তার শ্রমিকদের কল্যাণে কতটুকু কাজ করছে, যাতে শ্রমিকরা তাদের কোম্পানি ও সিঙ্গাপুরকে নিজেদের মনে করতে পারেন। এ ছাড়া হাউজিং বোর্ড এস্টেটে ময়লা পরিষ্কারের জন্য বাংলাদেশী শ্রমিক আমদানি করছে পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক কোম্পানিগুলো। এসব হচ্ছে অবকাঠামো খাতগুলোতে। রামকি ক্লিনটেক সার্ভিসেস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিলটন নগ বলেন, টাউন কাউন্সিল সংক্রান্ত কাজের জন্য বিদেশী শ্রমিকের জন্য এটাই (বাংলাদেশ) একমাত্র উৎস। তাই অনুমোদিত অন্য কোন উৎস না থাকা পর্যন্ত তাদেরকে আমরা আমদানি করা অব্যাহত রাখবো। সিঙ্গাপুর চাইনিজ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট থমাস চুয়া বলেন, অভিযুক্ত শ্রমিকদের সঙ্গে শ্রম শক্তিকে এক করে দেখা ঠিক নয়। ওদিকে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ হাই কমিশনার মাহবুব উজজামান বলেন, সিঙ্গাপুরে বর্তমানে প্রায় এক লাখ ৬০ হাজারের মতো বাংলাদেশী শ্রমিক রয়েছেন।
সাম্প্রতিক এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে সিঙ্গাপুরে শ্রমিকরা কেমন পরিবেশে থাকেন তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। শ্রমিকরা যেসব ডরমেটরিতে থাকেন তার পরিচালকরা বলছেন, শ্রমিকদের থাকার জায়গাগুলো যদি ভাল মানের হতো তাহলে তা তাদেরকে জঙ্গি কর্মকা-ের দিকে ঝোঁকার প্রবণতা থেকে ফেরাতে পারতো। মিনি এনভায়রনমেন্ট সার্ভিসের প্রধান নির্বাহী ও প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আবদুল জলিল বলেন, ডরমেটরিগুলো কিভাবে পরিচালিত হচ্ছে তার ওপর শ্রমিকদের আচরণ অনেকাংশে নির্ভর করে। তিনি বলেন, একটি দেশে নাগরিকরা একত্রে থাকাটাই পছন্দ করেন। তবে তাদের জন্য সব সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। তাদেরকে খেলাধুলার সুযোগ দিতে হবে। দিতে হবে চিত্তবিনোদন। আবদুল জলিল বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য তিনটি ডরমেটরি পরিচালনা করেন। সেখানে অবস্থান করেন ২৩ হাজার ৫০০ বিদেশী শ্রমিক। এর এক তৃতীয়াংশ অর্থাৎ প্রায় ৮ হাজার শ্রমিক বাংলাদেশী। আবদুল জলিল বলেন, এসব শ্রমিকের নামাজ আদায়ের জায়গা রয়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকদের আটক ও ফেরত পাঠানোর ঘটনায় তিনি ডরমেটরির স্টাফদের ডেকে বলে দিয়েছেন শ্রমিকদের সঙ্গে কি রকম আচরণ করতে হবে। সেঞ্চুরিয়ন ডরমেটরির প্রধান অপারেটিং অফিসার কেলভিন তিও বলেন, বিদেশী শ্রমিকদের সঙ্গে কি রকম আচরণ করতে হবে তা অপারেটরের ওপর অনেকটা নির্ভর করে। তিনি বলেন, এসব শ্রমিককে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাতারে নিয়ে আসতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গত বছর আমরা একশ শ্রমিককে দ্য স্টেইট টাইমস রান-এ অংশগ্রহণের জন্য নিয়ে গিয়েছিলাম। মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার্স সেন্টার হলো বিদেশী শ্রমিকদের পরামর্শদাতা একটি গ্রুপ। এর চেয়ারম্যান ইয়েও গুয়াত কাওয়াং নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ ও সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যেন তারা সাম্প্রতিক ওই গ্রেপ্তার নিয়ে বিদেশী শ্রমিকদের মূল্যায়ন না করেন। তিনি বলেন, বেশির ভাগ বিদেশী শ্রমিক আইন মেনে চলেন। তারা কঠোর পরিশ্রমী। তাদেরকে যেন আমরা এক করে না দেখি।