বইটি পাঁচটি অধ্যায়ে বিভক্ত:
১.‘ব্যাঙাচি থেকে সাপ: একজন মহান কবির আবির্ভাব ও উত্তরণ’ অধ্যায়ে নজরুলের জন্ম-তাঁর বংশ পরিচিতি, লেটো দলে প্রবেশ এবং সেখান থেকে ধীরে ধীরে একজন কবি হয়ে ওঠার গল্প বর্ণিত।
২.প্রেমিক নজরুলের জীবনে ফুটেছিল ভালোবাসার অনেক রঙিন ফুল। প্রেম প্রীতি, রাগ অনুরাগ আর সুখ দুখের বিচিত্র ধারায় তাঁর জীবন ছিল প্রথিত। তাঁর দিগন্ত বিস্মৃত প্রেম পিয়াসী মনের তৃষ্ণা কখনো তাই মিটেনি। প্রিয়াকে তিনি দেহের কিনারে পেয়েও হারিয়েছেন। এক নারীর প্রেমের বন্ধনে নজরুলের প্রেমিক হৃদয় বাধা পড়ে থাকেনি কখনোই। তাঁর অতুল অসীম প্রেম তাই তিনি বিলিয়েছেন জনে জনে। নজরুলের জীবনে যেসব নারী প্রেমের বারতা নিয়ে এসেছিলেন, ‘পরশ পাথরের ছোঁয়ায় কিছু সাধারণ নারীর দেবী হয়ে ওঠা’ অধ্যায়টি তারই আখ্যান।
৩.‘নজরুল সাহিত্যে মানবিক প্রেম’ অধ্যায়টি নজরুলের সাহিত্যের উপর আগাগোড়া এক অসাধারণ পর্যালোচনা। প্রেমিক নজরুলকে চিনতে হলে তাঁর সাহিত্যে প্রবাহিত প্রেম রসের জোয়ারে ভেসে যাবার উপযোগীতা সমন্ধে আলোচনা করা হয়েছে অধ্যায়টিতে।
৪.‘নজরুলের ঐশী প্রেম’ অধ্যায়ে এসেছে কবির আধ্যাত্ম ভাবনা। সামগ্রিক নজরুলকে চিনতে হলে, তাঁর ঐশী প্রেমের স্বরূপ বুঝতে হলে পাঠককে প্রেমিক হতে হবে। নিরস ধর্মাচারে যারা অভ্যস্ত, কিংবা নিছক তত্ত্বকথায় যারা তুষ্ট, তারা নজরুলকে, নজরুলের ঐশী প্রেমের স্বরূপ উদ্ঘাটন করতে ব্যর্থ হবেন। ।
৫.সর্বশেষ অধ্যায় ‘কিছু সংশয় নিরসন’। অধ্যায়টিতে নজরুল সম্পর্কে কিছু অপপ্রচারের দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেয়া হয়েছে।
একথা দিবালোকের মতো সত্য যে, চারপাশের কোন ধরনের অসঙ্গতি বিনা বাক্যে মেনে নেবার মতো মানুষ তিনি ছিলেন না। তাঁর কবিতা প্রশ্নে মুখর, প্রতিবাদে ক্লান্তিহীন। নজরুল যে কোন বিশ্বজয়ী স¤্রাটের সভাকবির হতে পারতেন, নোবেল জয়ের মালাও তাঁর গলায় শোভা পেতে পারতো। কিন্তু কখনো কোন এসটাব্লিসমেন্টের কাছে মাথা নত না করার কারণে নজরুলের ভাগ্যে তা জুটেনি। দুই হাতে হাতুড়ি-শাবল নিয়ে তিনি অচলায়তনকে ভাঙতে চেয়েছেন নিরন্তর, প্রচলিত রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থা, রীতিনীতি, সংস্কার ইত্যাদি সব কিছুর বিরুদ্ধেই তিনি সর্বদা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বলতেই হয়, এ সবই বিদ্রোহের লক্ষন। তাই বলে যদি তাঁর একমাত্র পরিচয় ‘বিদ্রোহী কবি’ হয়ে যায়, তাহলে নজরুলের কবি প্রকৃতির ওপর খুব অবিচার করা হয়।
নজরুলের প্রেমিক সত্তার কাছে তাঁর বিদ্রোহী সত্তা চিরকালই পরাজিত। হাবিলদার কবি এক পায়ে ঘাস আর অন্য পায়ে বিচালি বেঁধে কুচকাওয়াজ করছেন। আবার কখনো দেখি হুগলির জেলে বন্দী কবি লাল কালিতে কলম ডুবিয়ে লিখছেন জ¦ালাময়ী কবিতা: ‘আজ সৃষ্টি সুখের উল¬াসে’। আবার গানের আসরে এক বুলবুলি কবিকে যেন আমরা পাই। কবি বহুরূপী, কখনো প্রেমিক কখনো যোদ্ধা। আট আনা দ্রোহ, আট আনা প্রেম। এই হলো ষোল আনা নজরুল।
বিদ্রোহীর কঠিন হিয়াতলে কোথায় কীভাবে লুকিয়ে থাকে গভীর ভালোবাসা, কেন ‘হাজার বছর ঝর্নায় ডুবে রস পায় না’ক নুড়ি’; তারই অনুসন্ধানে নেমেছেন লেখক।
‘প্রেমের কবি নজরুল’ সুখপাঠ্য এই বইটি প্রকাশ করেছেন স্বনামধন্য পুস্তক প্রকাশণী-‘প্রান্ত প্রকাশন’। বইটির অনলাইন পরিবেশক রকমারি.কম। শুভেচ্ছা মূল্য ১৫০ টাকা মাত্র।