শাবনাজ-নাঈম
১৯৯০ সালে প্রয়াত বরেণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা এহতেশামের হাত ধরে ‘চাঁদনী’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে নায়ক হিসেবে যাত্রা শুরু হয় নবাব পরিবারের ছেলে নাঈমের। ওই ছবিতেই তার বিপরীতে নায়িকা হিসেবে অভিষেক ঘটে বিক্রমপুরের মেয়ে শাবনাজের। প্রথম ছবিতেই জুটি হিসেবে ব্যাপক সাড়া ফেলেন নাঈম-শাবনাজ। এরপর জুটি হিসেবে তারা অভিনয় করেন ‘লাভ’, ‘চোখে চোখে’, ‘দিল’, ‘টাকার অহংকার’, ‘ঘরে ঘরে যুদ্ধ’, ‘সোনিয়া’ ও ‘অনুতপ্ত’সহ বেশ কয়েকটি ছবিতে। নব্বইয়ের দশকের বাংলা চলচ্চিত্র আবার মাথা তুলে দাঁড়ায়। চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে গিয়েই ঘনিষ্ঠ হন নাঈম-শাবনাজ। এ প্রসঙ্গে নাঈম বলেন, শুরু থেকেই আমাদের নিয়ে নানা প্রেমকাহিনী মিডিয়ায় প্রচার হয়। তবে সব জল্পনা-কল্পনা ভেঙে ১৯৯৬ সালে আমরা বিয়ে করে ফেলি। কাজ করতে করতে আমাদের সম্পর্ক পরিণত রূপ নেয় বিয়েতে। এখন চলচ্চিত্র থেকে দূরে আমরা। তবে আমাদের দুজনের এখনও সেইসব দিনের কথা মনে পড়ে। ভালোবাসা দিবস আসুক বা না আসুক আমাদের সম্পর্ক আজীবন ভালোবাসার মধ্য দিয়েই কাটবে।
ওমর সানী-মৌসুমী
সময়টা উনিশ শ’ তিরানব্বই। নির্মাতা দিলিপ সোমের ‘দোলা’র সেটে প্রথম দেখা দুজনের। পরিচয়টা সেখানেই জমে ওঠে। শট শেষেই বসতেন মুখোমুখি। চলতো আলাপ-সালাপ। কথায় কথায় মুগ্ধতা বাড়তে থাকে। এরপর দুজনের দেখা হয় না অনেকদিন। কথাও হয় না। তখন সবার মনে একই প্রশ্ন। তারা কি তখন প্রেমে পড়েছেন? উত্তরটা মিলছিল না। এই সম্পর্কটা আসলে কি? না প্রেম, না বন্ধুত্ব। তার মাঝামাঝিতে ঝুলে আছে দুজনা। দুজনেই তখন ঢাকাই সিনেমার উঠতি তারকা। ডেব্যু ফিল্ম ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ দিয়ে মৌসুমী উঠে এসেছেন নতুন আলোয়। আর ‘চাঁদের আলো’তে অনবদ্য অভিনয় করে আলোচনায় ছিলেন ওমর সানী। ছবিটা মুক্তি পেলো। সুপারহিট! হাউসফুল! হুল্লোড় পড়লো দেশজুড়ে। নির্মাতারা নড়েচড়ে বসলেন। ছুটলেন দুজনের কাছে। রায়হান মুজিবের ‘আত্ম অহংকার’সহ বেশ কটি সিনেমায় ফের একসঙ্গে তারা দুজন। ঝুলে থাকা সম্পর্কটারও একটা গতি হলো। এ নতুন সম্পর্কের নাম ‘প্রেম’। ঘটনাটা চাউর হওয়ার আগেই তড়িঘড়ি করে বিয়ে করে ফেললেন ১৯৯৬ সালের ২রা আগস্ট। নতুন জীবন, সংসার। সংসারের মাঠে শুরু হলো নতুন ইনিংস। সুখী এ দম্পতির ঘরে এখন দুসন্তান। সন্তানরাও বড় হয়েছে। কানায় কানায় ভালোবাসায় পূর্ণ তাদের উত্তরার বাড়িটা। এখনও মৌসুমী ওমর সানীর সুখী দাম্পত্য জীবন অনেকের কাছে ঈর্ষণীয়।
জাহিদ হাসান-মৌ
জাহিদ হাসান তখন টেলিভিশনের শীর্ষ অভিনেতা, আর মৌ শ্রেষ্ঠ মডেল ও নৃত্যশিল্পী। হানিফ সংকেত ‘ইত্যাদি’তে হাজির করেন দুজনকে, ‘আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে’ গানে দুজন জমিয়ে পারফর্ম করলেন। শুটিংয়ের সময়ই নাকি তাদের সম্পর্কের সূচনা। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে এক সাক্ষাৎকারে জাহিদ বলেন, ‘যখন এ নিউজগুলো ছাপা হয়, তখন আমাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কই ছিল না। বরং এসব নিউজ আসার পর আমি ভেবেছি, আমাদের একটা রিলেশন হলে কেমন হয়। কারণ তখন সারাক্ষণ এ ব্যাপারটা মাথায় থাকত।’ যা হোক, সম্পর্কটা হয়েই গেল। সেই যে শুরু হলো। এখনও চলছে তাদের দাম্পত্য জীবন। হাতে হাত রেখে সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন। নিজেদের সুখী সংসার প্রসঙ্গে জাহিদ হাসান বলেন, আমরা বিয়ের পর থেকে এখনও বেশ সুখে আছি। ভালো আছি। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
বিপাশা-তৌকীর
একসময়ের জনপ্রিয় টেলিভিশন জুটি তৌকীর আহমেদ এবং বিপাশা হায়াত। তৌকীর আহমেদ অভিনয় ও নির্মাণ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন নিয়মিত। বিপাশা হায়াত ব্যস্ত নাটক লেখা ও ছবি আঁকা নিয়ে। জনপ্রিয় এ নাট্যদম্পতি অনেকের রোল মডেল। পর্দার পাশাাপাশি বাস্তবজীবনে প্রেমের পর বিয়ে করে সংসার করছেন চুটিয়ে। ভালোবাসার ভেলায় ভাসছেন যুগ যুগ ধরে। তাদের দাম্পত্য জীবনে ভালোবাসার ঘাটতি আজও খুঁজে পায়নি কেউ। প্রসঙ্গক্রমে তৌকীর আহমেদ বলেন, আমি বিপাশা যেভাবে শুরুটা করেছিলাম সেভাবেই আছি। দুজনের মধ্যে বোঝাপড়াটা বেশ ভালো। এটাই ধরে রাখতে চাই।
মীর সাব্বির-ফারজানা চুমকি
অভিনয়ের সূত্র ধরেই ভালোলাগা-ভালোবাসা। পারিবারিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০০৪ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তারা। বিয়ের পরে সংসার ও সন্তান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লে ক্যারিয়ারে অনিয়মিত হয়ে পড়েন চুমকি। তবে অভিনয় ও নির্মাণে মীর সাব্বির রয়েছেন জনপ্রিয়তার শীর্ষ তালিকায়। তিনি বলেন, সংসারটা আসলে দুজনের বোঝাপড়ার কারণেই টিকে থাকে। আমার আর চুমকির মধ্যে সেটা সব সময়ই ছিল এবং আছে। ভবিষ্যতেও থাকবে বলে আশা করছি। সবার কাছে দোয়া চাই যেন আমাদের সুখটা সব মসয় ধরে রাখতে পারি।
তিশা-ফারুকী
নাটক কিংবা চলচ্চিত্র- জনপ্রিয় এক দম্পতির নাম তিশা-মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। একজন অভিনেত্রী, অপরজন নির্মাতা। প্রেম করেই বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন তারা। তিশার একটি বিজ্ঞাপন দেখার পর ফারুকী মনে রাখেন তাকে, এরপর নিজের পরিচালিত ‘পারাপার’ টেলিফিল্মে একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে চেনাজানা শুরু দুজনের। ‘সিক্সটি নাইন’ নাটক করতে গিয়ে ভালো বন্ধুত্ব হয়। বন্ধুত্ব থেকে প্রেম। দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্ক পরিণতি পায় বিয়েতে। ২০১৩ সালের ১৬ই জুলাই ফারুকী ও তিশা ঘটা করে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিন বছরের সংসার বেশ জমিয়ে করছেন দুই ক্ষেত্রের এ দুই তারকা। তিশা বলেন, এক কথায় বলবো সুখটা আমরা অর্জন করেছি। আর সেটা দুজনের ভালোবাসার কারণেই সম্ভব হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা যেন থাকে সেজন্য সবার কাছে দোয়া চাই।
তাহসান-মিথিলা
মিডিয়ার অন্যতম ‘সুইট জুটি’ বলা হয় তাহসান ও মিথিলাকে। তাদের প্রেমের শুরুটা হয়েছিল একটু ভিন্নভাবে। ২০০৪ সালে মিথিলা ছিলেন ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়ের ছাত্রী। তার এক বিদেশ ফেরত বান্ধবী ছিল তাহসান ভক্ত। মিথিলা তখন তাহসানের গান শুনলেও তেমন বড় ভক্ত ছিলেন না। কিন্তু বান্ধবী তাহসানের অটোগ্রাফ নেয়ার জন্য বায়না ধরলো মিথিলার কাছে। অবশেষে সেই বান্ধবীর সঙ্গে তাহসানের বাসায় যেতে হলো মিথিলাকে। গিয়ে পরিচয় হওয়ার পরই মিথিলা তাহসানের ব্যান্ড ব্ল্যাকের সমালোচনা করলেন পুরো বিশ মিনিট! চলে গেলেন মিথিলা। কিন্তু তার রেশ রয়ে গেল তাহসানের মাঝে। হঠাৎ করেই যেন কি যে কি হয়ে গেল তার। দেরি না করে তার পরদিনই তাহসান সোজা মিথিলার বাসার সামনে গেলেন, কথা বললেন এবং শেষে প্রেমের চিঠি ধরিয়ে দিলেন। এরপর ধীরে ধীরে শুরু হলো প্রেম। পরে দুই পরিবারের সম্মতিতেই হলো বিয়ে। এখন এক কন্যা নিয়ে দিব্যি সুখের সংসার তাদের। এ বিষয়ে তাহসান বলেন, আমাদের সম্পর্কের শুরুটা খুব ইন্টারেস্টিং ছিল। যে কিনা আমার ও ব্যান্ডের সমালোচনা করলো, তারই প্রেমে পড়ে গেলাম। এখন ভাবতে ভালোই লাগে। অনেক ভালো আছি আমরা আমাদের সন্তান নিয়ে। মিথিলাকে স্ত্রী হিসেবে পেয়ে গর্বিত মনে হয়। মনে হয় জীবন পূর্ণ। মিথিলা বলেন, তাহসানের ব্যক্তিত্বটা আমাকে টানতো। এরপর তার গানও। জীবনসঙ্গী হিসেবে তাহসানকে পাওয়াটা আমার জীবনের সবচেয়ে সুখের বিষয়। আমরা সারা জীবন এভাবেই থাকতে চাই। দোয়া করবেন।