টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টেনে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৩ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। নড়বড়ে শুরুর পর দল ১৫৫ রানের পুঁজি পেয়েছিল মাহমুদউল্লাহর দুর্দান্ত এক ইনিংসে। তাতে লড়াই করা গেছে। কিন্তু আটকানো যায়নি অস্ট্রেলিয়কে, জিতেছে তারা ৯ বল বাকি রেখে।
দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে অস্ট্রেলিয়াকে দারুণ সূচনা এনে দেন উসমান খাওয়াজা (৪৫ বলে ৫৮)। তাসকিন আর আরাফাত সানির অভাবে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়া বাংলাদেশের বোলিংয়ের ফায়দা নিয়ে টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতক তুলে নেন তিনি।
সাব্বির রহমানের দারুণ থ্রোয়ে ভাঙে অস্ট্রেলিয়ার উদ্বোধনী জুটি। শুভাগত হোম চৌধুরীর বল পুল করেই দুই রানের জন্য ছুটেন শেন ওয়াটসন। কিন্তু সাব্বিরের অসাধারণ ফিল্ডিংয়ে দ্বিতীয় রানটি আর হয়নি। নিখুঁত থ্রো গ্লাভসবন্দি করে দ্রুত স্টাম্প ভেঙে ওয়াটসনের ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করেন মুশফিকুর রহিম।
স্টিভেন স্মিথকে (১৩ বলে ১৪ রান) ফেরান মুস্তাফিজুর রহমান। তার ইয়র্কার লেন্থের বল অস্ট্রেলিয়া অধিনায়কের দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে স্টাম্পে লাগে।
বোলিংয়ে ফিরেই আঘাত হানেন আল আমিন হোসেন। এই পেসারের দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড হন উসমান খাওয়াজা (৪৫ বলে ৫৮)।
মুস্তাফিজুর রহমানের স্লোয়ারে বিভ্রান্ত হয়ে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন মিচেল মার্শ। পয়েন্টে খানিকটা পিছিয়ে চমৎকার এক ক্যাচ ধরেন সাকিব আল হাসান।
নিজের শেষ ওভারে আঘাত হানেন সাকিব আল হাসান। তার বলে স্টাম্পড হন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (১৫ বলে ২৬)।
গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের পর জন হেস্টিংসকেও ফেরান সাকিব আল হাসান। তার বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সৌম্য সরকারের তালুবন্দি হন হেস্টিংস।
টসের আগে দলের সেরা ব্যাটসম্যানকে হারানো, আবারও টসে হার এবং শুরু থেকেই ধুঁকতে থাকা। নিয়মিত উইকেট হারিয়ে ইনিংসের অর্ধেক জুড়ে প্রত্যাশিত গতি পেল না বাংলাদেশ। শেষ দিকে আবারও ত্রাতা মাহমুদউল্লাহ। দারুণ ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যানের আরেকটি দারুণ ইনিংসে বাংলাদেশ পেল লড়ার মত রান।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টেনে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৫৬ রান তোলে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪ টি-টোয়েন্টিতে এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান।
বোলিং অ্যাকশনে নিষিদ্ধ দুই বোলারকে হারানোর আঘাত সয়ে ওঠার আগেই আসে আরেকটি বড় ধাক্কা। পেটের পীড়ায় ম্যাচে নেই দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ওপেনার তামিম ইকবাল। চোট কাটিয়ে ফেরা মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে বাংলাদেশ তাই নামিয়ে দেয় দলে সদ্য যোগ দেওয়া সাকলাইন সজিব ও শুভাগত হোমকে।
বাংলাদেশের শুরুটা ছিল যথারীতি সৌম্য সরকারকে হারিয়ে। এই ওপেনারের দু:সময় দীর্ঘায়িত হয়েছে আরও। প্রথম ওভারেই নাথান কোল্টার-নাইল নাড়িয়ে দিয়েছিলেন সৌম্যকে। দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলটি শেন ওয়াটসন করেছিলেন অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে। ছেড়ে দিলে ওয়াইড, সেটিই জায়গায় দাঁড়িয়ে তাড়া করে ম্যাক্সওয়েলকে ক্যাচিং অনুশীলন করালেন সৌম্য (১)।
আরেক পাশে মোহাম্মদ মিঠুন তখনও খোলসবন্দী। শুরুতে ছন্দ পাচ্ছিলেন না সাব্বির রহমানও। জন হেস্টিংসকে দুটি চার মেরে অবশ্য ডানা মেলার চেষ্টা করলেন সাব্বির। কিন্তু তিনিও ওয়াটসনের শিকার। ডাউন দা উইকেটে খেলে ক্যাচ দিলেন মিড অনে।
থিতু হওয়ার পর অবশ্য একটু হাত খোলেন মিঠুন। মিড অফের ওপর দিয়ে ওড়ান মিচের মার্শকে। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে ইনসাইড আউটে চার মারার পরের বলই গ্যালারিতে পাঠান সাকিব।
২৫ বলে ৩৭ রানের সম্ভাবনাময় জুটি বল হাতে নিয়েই ভাঙেন অ্যাডাম জ্যামপা। এই লেগ স্পিনারের শর্ট বল মিড উইকেট ফিল্ডারের হাতে তুলে দেন মিঠুন (২৩)।
আগেরদিন দলেল সঙ্গে যোগ দেওয়া শুভাগত হোমকে বিস্ময়কর ভাবে পাঁচে নামিয়ে দেয় দল। হয়ত উদ্দেশ্য ছিল কিছু বড় শটে ইনিংসটাকে গতি দেওয়া। কিছুটা সময় নিয়ে নিজের কাজ শুরুও করেছিলেন শুভাগত। জ্যামপাকে আকাশ ছোঁয়া ছক্কার পর চার মারলেন দারুণ টাইমিংয়ে। জবাবটাও দ্রুতই দিয়েছেন জ্যামপা। দারুণ ফ্লিপারটির জবাব জানা ছিল না শুভাগতর (১৩)।
তরুণ লেগ স্পিনার পরে ফিরিয়ে দেন দারুণ খেলতে থাকা সাকিবকেও। একটু জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে সাকিব (২৫ বলে ৩৩) পেরে ওঠেননি জ্যামপার চাতুর্যের কাছে।
দিশাহারা দল পথের দেখা পায় মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে। শুধু দলের রানই বাড়াননি, খেলেছেন দৃষ্টিনন্দন সব শট। হেস্টিংসের বাউন্সারের জবাব দিয়েছেন ফ্রন্টফুট পুলে ছক্কায়। স্লগ ওভারের অন্যতম সেরা বোলার জেমস ফকনারকেও ছেড়ে কথা বলেননি। শেষ দিকে সঙ্গটা খারাপ দেননি মুশফিকও। ষষ্ঠ উইকেটে দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটি ২৮ বলে ৫১। শেষ ৩ ওভারে বাংলাদেশ তুলেছে ৪৪।
ইনিংসের শেষ বলে ১ রানের বেশি নিতে না পারায় ফিফটি হলো না মাহমুদউল্লাহর। তবে ২৯ বলে অপরাজিত ৪৯ রানের ইনিংসটি বাংলাদেশকে দিয়েছে বিশ্বাস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৫৬/৫ (মিঠুন ২৩, সৌম্য ১, সাব্বির ১২, সাকিব ৩৩, শুভাগত ১৩, মাহমুদউল্লাহ ৪৯*, মুশফিক ১৫*; জামপা ৩/২৩, ওয়াটসন ২/৩১)
অস্ট্রেলিয়া: ১৮.৩ ওভারে ১৫৭/৭ (খাওয়াজা ৫৮, ওয়াটসন ২১, স্মিথ ১৪, ওয়ার্নার ১৭, ম্যাক্সওয়েল ২৬, মার্শ ৬, ফকনার ৫*, হেস্টিংস ৩, নেভিল ১*; সাকিব ৩/২৭, মুস্তাফিজ ২/৩০, আল আমিন ১/১৪)
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৩ উইকেটে জয়ী
ম্যাচ সেরা: অ্যাডাম জ্যামপা (অস্ট্রেলিয়া)