খুলনা: সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে জ্বলে উঠেছে সোডিয়াম বাতি। আলোর রোশনাইয়ে জ্বল জ্বল করছে চারপাশ। মোহনীয় এক পরিবেশ আচ্ছন্ন করে রেখেছে। শহুরে ব্যস্ততার ঘেরাটোপ পেরিয়ে এ যেন অনন্য এক সৌন্দর্যপুরী।
সৌন্দর্য সম্ভার বুকে নিয়ে ঐশ্বর্যময়ী রূপসা নদী। তার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা খানজাহান আলী (র.) সেতুর (রূপসা সেতু) রাতের চিত্র এটি। হালকা বৃষ্টির মধ্যেও নির্মল আনন্দ উপভোগ করতে বৃহস্পতিবার (১৯ মে) সন্ধ্যার পর এখানে ছুটে এসেছেন অনেক মানুষ।
সেতুটির নাম খানজাহান আলী সেতু হলেও রূপসা সেতু হিসেবেই সবার কাছে পরিচিত। সেতুটির মাঝে দাঁড়ালেই মনে হবে যেন, রূপসার বুকে অসংখ্য তারা জ্বল জ্বল করে জ্বলছে। আসলে তা নয়, বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলছে সেতুতে। যাতায়াত করছে দ্রুতগামী যানবাহন।
সন্ধ্যায় রূপসা সেতুতে দাঁড়ালে এই মনোরম দৃশ্য যেকোনো পর্যটককে আকর্ষণ করবে। বিশেষ করে বাতাসে প্রচণ্ড গতিতে রূপসা নদীর ঢেউগুলো যখন দুই পাড়ে আছড়ে পড়ে, তখনকার সে দৃশ্য যে কারও মন কাড়বে।
যার কারণে নির্মল বায়ু সেবনের আমেজে নানা বয়সী মানুষ প্রতিদিন আড্ডায় মেতে ওঠেন এখানে।
খুলনা শহরের রূপসা থেকে ব্রিজের দূরত্ব ৪.৮০ কিলোমিটার। এই সেতুকে খুলনা শহরের প্রবেশদ্বার বলা যায়। কারণ, সেতুটি খুলনার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর বিশেষত মংলা সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করেছে। সেতুটিতে পথচারী ও অযান্ত্রিক যানবাহনের জন্য বিশেষ লেন রয়েছে।
বর্তমানে সেতুটি খুলনার একটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। রাতে সেতুর ওপর থেকে খুলনা শহরকে অপূর্ব সুন্দর বলে মনে হয়।
সেতুর দুই পাশে নানা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। সবচেয়ে বেশি ফুচকা, চটপটি, ঝালমুড়ি আর চানাচুরের দোকান।
বৃহস্পতিবার রাতে স্ত্রী ও এক ছেলে নিয়ে সেতুতে বেড়াতে এসেছেন আমিনুল ইসলাম। মহানগরীর শিববাড়ি এলাকার এই বাসিন্দা বলেন, ‘সেতুটি দেখতে সত্যিই অসাধারণ। সন্ধ্যার পর সোডিয়াম বাতি জ্বলার পর রাতের আকাশ অন্য রকম মনে হয়। নদীর পাড়ে বিশুদ্ধ বাতাস টানতেই পরিবার নিয়ে এখানে এসেছি। নদী, প্রাকৃতিক বাতাস, এতো মানুষ—সব মিলিয়ে অন্য রকম পরিবেশ, যেন অচেনা কোনো স্থান’।
যদিও হালকা বৃষ্টির মধ্যে কিছুটা ভোগান্তি হয়েছে বলেও জানান তিনি।
কথা হয় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিমেল ও তার বন্ধুদের সঙ্গে। তারা সবাই প্রায় অভিন্ন কণ্ঠে জানান, খুলনায় তেমন কোনো বিনোদনের স্থান না থাকায় তারা প্রায়ই সেতুতে আড্ডা দেন। এখানে না এলে তাদের আড্ডা যেন পূর্ণতা পায় না।
রূপসা সেতুতে টোল আদায়কারী প্রতিষ্ঠান জিএসআইসি-এসইএল জেভি-এর সিস্টেম প্রকৌশলী তৌফিক আহমেদ রনি বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, ঐশ্বর্যময়ী রূপসা নদীর ওপর দাঁড়িয়ে থাকা খানজাহান আলী (র.) সেতুর (রূপসা সেতু) রাতের চিত্র যে কারও মন কাড়ে। তাই তো বিকেল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত নানা শ্রেণীর মানুষ নির্মল আনন্দ উপভোগ করতে এ সেতুতে আসেন।
বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে বৃহস্পতিবার রাতে সেতুতে এসেছেন বলেও জানান তিনি।