দিল্লি পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গোটা দেশে যত সংখ্যক ধর্ষণ হয়, তার মধ্যে ৯০ শতাংশ ঘটনার অভিযুক্ত থাকেন পরিবারের কোন সদস্য বা পরিচিত কোন ব্যক্তি৷ উত্তরাখন্ডের হল্দওয়ানিতে এমনই এক লজ্জাজনক ঘটনা ঘটেছে৷ নিজের ভাগনীকে ধর্ষণ করেছে এক ব্যক্তি৷
শুধু তাই নয়, যৌন লালসা মেটাতে তাকে বিলিয়ে দেওয়া দয়েছে একের পর এক পুরুষের কাছে৷ ফের এক বুড়ো ব্যক্তির কাছে কিছু টাকা লোভে তাকে বিক্রিও করে দেওয়া হয়েছে৷
দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে চরম অত্যাচার সহ্য করতে থাকে এই নাবালিকা মেয়েটি৷ চক্রব্যূহ থেকে কোন রকমে বেরিয়ে শেষমেশ সে তার বাড়িতে পৌঁছায়৷ মায়ের কাছে সমস্ত ঘটনা খুলে বলার পর এলাকার এসএসপির দ্বারস্থ হয়৷ নাবালিকার একটাই দাবি৷ তার একমাত্র দাবি, ন্যায় চাই আর জীবনে বেঁচে থাকার দিশা চাই৷ এসএসপির সামনে নাবালিকা ওই পাঁচ বছরের ঘটানা পর পর তুলে ধরলে এসএসপি নিজেও তার চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না৷
নাবালিকা তার বয়ানে জানায়, ২০০৯ সালে সে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত, তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর৷ সম্পর্কে মামা হরিশ একদিন তাদের বাড়িতে আসে ও জানায় তার স্ত্রী খুব অসুস্থ এবং নাবালিকাকে তার সঙ্গে নিয়ে যায়৷
বাড়ি ফিরে হরিশ নাবালিকাকে তরকারি আর দই খেতে দেয় যা খেয়ে নাবালিকা অজ্ঞান হয়ে যায়৷ এরপর হরিশের ছোট ভাই মহেশ তাকে গাড়িতে বসিয়ে জোর করে দিল্লি নিয়ে যায়৷ জ্ঞান ফিরলে নাবালিকা কোথাও যেতে অস্বীকার করে৷ মহেশ তাকে জোর করে মেহরাবা জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে তার হাত পা বেঁধে তাকে ধর্ষণ করে৷ এর পর তাকে নিয়ে গাজিয়াবাদ আসে মহেশ৷
সেখানে এসে মহেশ নাবালিকাকে তার এক বন্ধুর কাছে বিক্রি করে দেয়৷ ওই ব্যাক্তিরও নাবালিকার হাত পা বেঁধে তাকে মেশাজাতীয় ইনজেকশন দেয় ও বেশ কয়েকদিন ধরে তাকে ধর্ষণ করে৷ এরপর ওই ব্যক্তি তাকে অশোক নামে এক দাম্পার চালকের কাছে ১০ হাজার টাকার বিক্রি করে দেয়৷ অশোকের বয়স প্রায় ৬০ বছর৷ এরপর অশোক নাবালিকাকে বিয়ে করে৷
নাবালিকা জানায় অশোকের এক পরিচিত জিতেন্দ্রও তাকে ধর্ষণ করে৷ অভিযোগ করলে অশোকের মা তাকে মারধর করত৷ অশোকের সঙ্গে বিয়ে পর নাবালিকা একটি পুত্র সন্তানেরও জন্ম দেয়৷
নাবালিকার এই অবস্থা দেখার পর এক প্রতিবেশি তাকে বোরখা পরে পালানোর বুদ্ধি দেয়৷ সেইমত নাবালিকা একদিন অশোকেরা বাড়ি থেকে পালিয়ে আসে৷
নিজের বাড়ি এসে নাবালিকা তার মায়ের সঙ্গে এসএসপি’র কাছে অভিযোগ দায়ের করে৷ অ্যান্টি হিউম্যান ট্রাফিকিং সেলে মামলা দায়ের করার পর নাবালিকার মামা হরিশকে গ্রেফতার করা হয়৷ মহেশ, অশোক, জিতেন্দ্রর বিরুদ্ধেও ধর্ষণের মামলা ও অশোকের গ্রামের গ্রাম প্রধান দিগ্বিজয় সিং ও অশোকের মায়ের বিরুদ্ধে নাবালিকাকে জোর করে আটকে রাখার মামলা দায়ের করা হয়েছে৷ এই মামলার সমস্ত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পাস্কো আইনের বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে৷
অন্য দিকে, নাবালিকা নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পরই তার মা থানায় অভিযোগ দায়ের করে৷ হরিশকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে কিন্তু নাবালিকার খোঁজ পাওয়া যায়নি৷ পুলিশ মামলা দায়ের করলেও তদন্ত না করেই এই মামলায় ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করে দেয়৷ অভিযোগ পাওয়ার পরই পুলিশ কড়া পদক্ষেপ নিয়ে নাবিলাকাকে এভাবে নির্যাতিত হতে হত না৷