আরিফ উদ্দিন, গাইবান্ধা থেকেঃ সন্ত্রাসীদের নাশকতায় কুন্দেরপাড়া গণ উন্নয়ন একাডেমি আগুনে ভস্মিভুত করার প্রতিবাদে শনিবার গাইবান্ধার প্রত্যন্ত কুন্দেরপাড়া চরের বিদ্যালয় মাঠে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসির উদ্যোগে এক সোচ্চার প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সালামের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদের হুইপ মাহাবুব আরা বেগম গিনি এমপি, বিদ্যালয়ের সভাপতি গণ উন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী প্রধান এম আব্দুস সালাম, উপাধ্যক্ষ জহুরুল কাইয়ুম, সাবেক ইউপি সদস্য ছকমল হোসেন, শাহিনা বেগমসহ ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
হুইপ মাহাবুব আরা বেগম গিনি বলেন, নাশকতা ও সন্ত্রাসী তৎপরতার মাধ্যমে যে সন্ত্রাসী চক্র এদেশের উন্নয়ন ও নারী শিক্ষাকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়, তারাই সুপরিকল্পিতভাবে প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের শিক্ষার উন্নয়নে নিয়োজিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে আগুনে ভূস্মিভুত করেছে। সর্বস্তরের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে নাশকতাকারি এবং মৌলবাদি এই অশুভ চক্রকে অবশ্যই দমন করবে। দেশকে অস্থিতিশীল করে উন্নয়ন এবং নারী শিক্ষাকে ব্যাহত করার এই অপতৎপরতা কখনই বাস্তবায়িত হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
নাশকতাকারিরা বিদ্যালয়ে পেট্টোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় ঃ
কুন্দেরপাড়া গণ উন্নয়ন একাডেমি বিদ্যালয় ভবনটিতে প্রথমে পেট্টোল ছিটিয়ে তাতে একসাথে আগুন দেয়া হয়। ফলে আগুন লাগানোর সাথে সাথেই মুহুর্তে আগুনের লেলিহান শিখায় গোটা ভবনটি ভস্মিভুত হয়ে যায়। গাইবান্ধা থেকে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল আগুনে পোড়া বিদ্যালয় এলাকা পরিদর্শন করে এমন আশংকাই করছেন। উল্লেখ্য, চরাঞ্চলের মৌলবাদি একটি সন্ত্রাসী চক্র দীর্ঘদিন থেকেই ওই এলাকায় নারী, শিক্ষা এবং উন্নয়নের বিপক্ষে নানা অপতৎরতা চালিয়ে আসছিল। স্থানীয় লোকজন মনে করছেন তারাই এই বিদ্যালয়টিকে সুপরিকল্পিত ধ্বংস করে দেয়ার উদ্যোগ নেয়। সরেজমিনে এলাকা পরিদর্শন করে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং চরাঞ্চলের সর্বস্তরের মানুষ ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। তারা বলছেন শিক্ষার বিকাশ ঘটায় এখন কুন্দেরপাড়া এবং পার্শ্ববর্তী সিধাই, চিথুলিয়া দিগর, মোল্লারচর, মৌলবীর চর, রসুলপুরসহ চরাঞ্চলগুলোতে বাল্য বিবাহ, বহু বিবাহ, যৌতুক প্রথা বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। তদুপরি নারী শিক্ষাও উল্লেখযোগ্য হারে বিকশিত হচ্ছে। এ জন্যই মৌলবাদি সন্ত্রাসী চক্ররা বিদ্যালয়কেই দায়ী করে তাকে ধ্বংসের পরিকল্পনা করে বলে জানা গেছে।
সদর থানায় নাশকতা সৃষ্টির দায়ে মামলা ঃ
কুন্দেরপাড়া গণ উন্নয়ন একাডেমি আগুনে পুড়ে দেয়ার ঘটনায় ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামান বাদি হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় আসামীদের কথা উল্লেখ করে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। এব্যাপারে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ একেএম মেহেদী হাসান বলেন, নাশকতার উদ্দেশ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে ক্ষতিসাধন করা সংশ্লিষ্ট ধারায় এই মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব না হলেও পুলিশ এব্যাপারে সর্বাত্মক গুরুত্ব নিয়ে বিষয়টি তদন্ত করছে এবং তারা নিশ্চিত যে, এটি একটি সুপরিকল্পিত অগ্নিকান্ড। তবে এব্যাপারে পুলিশ সন্ত্রাসী তৎপরতা, নাশকতা, শত্র“তার জের, একই এলাকায় নতুন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাসহ সবগুলো বিষয়ের উপরেই গুরুত্ব দিয়েই তদন্ত চালাচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রের শেল্টারগুলোতে এবং খোলা মাঠে পাঠদান অব্যাহত ঃ
আগুনে পুড়ে গোটা বিদ্যালয় ভবনটি বিধ্বস্থ হলেও উদ্যম হারায়নি বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। শনিবার থেকেই যথারীতি পুড়ে যাওয়া বিদ্যালয়ের পাশে, গাছতলায় এবং পার্শ্ববর্তী বন্যায় আশ্রয় কেন্দ্রের ষ্টীলের শেল্টার তাবুগুলোতেই যথারীতি বিদ্যালয়ের পাঠদান অব্যাহত রাখা হয়েছে। সবার দৃঢ় প্রত্যয় আবার তারা ঐক্যবদ্ধভাবে তিল তিল করে গড়ে তুলবেন স্বপ্নের এই কুন্দেরপাড়া গণ উন্নয়ন একাডেমি বিদ্যালয়টি।