কয়েকদিন ধরে এফডিসিতে একটা কথাই আলোচনা হচ্ছে। সেটা হলো বেশ কিছু চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে গিয়ে যৌথ প্রযোজনার নামে যৌথ প্রতারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে আসন্ন ঈদে দেশীয় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া থেকে মুক্তি পেতে যাওয়া ‘বস-টু’ ও ‘নবাব’ ছবি দুটি প্রসঙ্গে এ কথাটি বেশি আলোচিত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ছবি দুটি যেন মুক্তি দেয়া না হয় সেজন্য এফডিসির প্রিভিউ কমিটিকে চিঠি দেয়ার পাশাপাশি গতকাল দুপুর ১২টায় চলচ্চিত্রের শিল্পী, পরিচালক, প্রযোজকসহ অনান্য সংগঠনের নেতা কর্মীরা এফডিসির ভেতরে ও প্রধান ফটকে অবস্থান ধর্মঘট করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, মহাসচিব বদিউল আলম খোকন, পরিচালক মনতাজুর রহমান আকবর, মালেক আফসারী, সোহানুর রহমান সোহান, মোহাম্মদ হোসেন জেমি, শাহীন সুমন, বজলুর রশীদসহ আরো অনেকে। সমাবেশে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ফারুক, অঞ্জনা, রুবেল, মিশা সওদাগর, ডিপজল, রিয়াজ, পপি, জায়েদ খান, সাইমন, ইমন, পরীমনি, বাপ্পী, শিমুল খান, আরজু, শিপন মিত্র, অমৃতা, নিঝুম রুবিনা, মৌমিতা, জেসমিনসহ আরো অনেকে। এ সময় শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া এফডিসিতে কোনো অনিয়ম চলবে না। এটা আমরা হতে দেব না। জায়েদ খান বলেন, যৌথ প্রযোজনার নামে যৌথ প্রতারণার ছবি বন্ধ করতে হবে। শিল্পী সমিতির সহসভাপতি রিয়াজ বলেন, যৌথ প্রযোজনার নামে যারা প্রতারণা করছে তারা চলচ্চিত্রের রাজাকার। তাদের ছবি এদেশে চলবে না। সমাবেশে চলচ্চিত্র প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু ও শামসুল আলম উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে খোরশেদ আলম খসরু বলেন, আজ শিল্পী, পরিচালক ও প্রযোজক এক হয়ে মাঠে নেমেছি আমরা। আমাদের উদ্দেশ্য একটাই, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে বাঁচাতে হবে। কারণ চার থেকে পাঁচ লাখ মানুষ এ চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত। তাদের বাঁচাতে হলে এই অনিয়মের যৌথ প্রযোজনা বন্ধ করতে হবে। এই অনিয়ম কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এরপর দুপুর একটার দিকে ধর্মঘটকারীরা এফডিসির গেট থেকে মিছিল নিয়ে ইস্কাটনস্থ সেন্সর বোর্ডের সামনে অবস্থান নেন। এরপর সেখান থেকেই একটি দল তথ্য মন্ত্রণালয়ে যায়। এ সময় পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে এক শ্রেণির মানুষ চলচ্চিত্রকে ধ্বংস করতে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠা করা এই এফডিসি বাঁচাতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও চিত্রনায়িকা পপি বলেন, আমরা যৌথ প্রযোজনায় ছবি চাই না। যদি যৌথ প্রযোজনায় ছবি হয় তবে নীতিমালা অনুসারে হতে হবে। পরিচালক মনতাজুর রহমান আকবর জানান, সরকার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবেন। তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পর মিশা সওদাগর বলেন, আমরা যৌথ প্রযোজনার বিপক্ষে না। তবে সঠিক নীতিমালা অনুযায়ী এসব ছবি হওয়ার জন্য মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে দাবি জানিয়েছি আমরা। তথ্যমন্ত্রী আমাদের সব কথা শুনেছেন এবং এ বিষয়গুলো লিখিত আকারে চেয়েছেন। আগামীকাল (আজ) আমরা লিখিত আকারে তথ্য মন্ত্রণালয়ে আমাদের দাবিগুলো জমা দেবো। অন্যদিকে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আবদুল আজিজ, চিত্রনায়ক শাকিব খান, অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া, প্রযোজক মোহাম্মদ হোসেন তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বিকালের দিকে আলাদাভাবে সাক্ষাৎ করেন। এ প্রসঙ্গে আবদুল আজিজ বলেন, সিনেমা হল বুকিং এজেন্ট, প্রদর্শক সমিতিসহ আমরা প্রযোজকরা তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বলেছি যে, ঈদে ‘বস টু’ ও ‘নবাব’ মুক্তি না পেলে অনেক সিনেমা হল মালিক এবারের ঈদে বেশিরভাগ সিনেমা হল বন্ধ রাখবে। কারণ তারা ছবি দুটির মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। ছবি দুটি অন্য সব ছবি থেকে ভালো মেকিং এবং ভালো বাজেটের। আর আমরা নীতিমালার বাইরে কিছু করি নাই। এরইমধ্যে ‘বস টু’ প্রিভিউ কমিটি থেকে পাস হয়ে সেন্সরে গিয়েছে। যৌথ প্রযোজনার নীতিমালার সঙ্গে সেন্সরবোর্ডের কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ ছবির স্ক্রিপ্ট পাস হবার পর সিনেমার শুটিং শুরু হয়েছিল। আর শাকিবের ‘নবাব’ও পাস হয়ে যাবে আগামীকাল (আজ) প্রিভিউ কমিটি থেকে। তথ্যমন্ত্রী আমাদের কথাগুলো শুনেছেন এবং নোট করেছেন। আশা করছি, ‘বস টু’ এবং ‘নবাব’ এবারের ঈদেই মুক্তি পাবে।