গত বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেকের দুই টেস্টে উইকেট পেয়েছিলেন মাত্র একটি। ব্যাট হাতেও তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারেননি। ৩ ইনিংসে শূন্য রানে আউট হওয়ার পর ৪র্থ ইনিংসে করেন ৭ রান। কিন্তু পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বির ওপর আস্থা রাখে দল। তৃতীয় টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েলিংটনে তিন উইকেট। ১০ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ৬ রানে অপরাজিত থাকেন ২১ বল খেলে। তবে ক্রাইস্টচার্স টেস্টে খুঁজে পাওয়া গেল অন্য এক রাব্বিকে। দলীয় ১১৫ রানে ৮ উইকেট পতনের পর ক্রিজে আসেন এই বোলার। প্রথমে তাসকিন আহমেদ ও পরে রুবেলের হোসেনের সঙ্গে ৯ম ও ১০ম উইকেটে জুটি গড়ে তোলেন। দুই জুটিতেই রান আসে ১৬ করে। কিন্তু এখানে রাব্বির অবদান মাত্র ২ তাও ৬৩ বল খেলে। এই ছোট্ট একটি ইনিংস খেলে ঢুকে পড়েন ক্রিকেটের একটি বিরল রেকর্ডেও। পরের ইনিংসে অবশ্য একটু ভিন্ন রূপ দেখালেন এই পেসার। এবার দলের প্রয়োজনে খেললেন ২৯ বলে ২৫ রানের ঝড়ো ইনিংস। নিজের খেলা ৫ম ও শেষ টেস্টে হায়দরাবাদে খেলেন ৭০ বলে ৩ রানের একটি ইনিংস।
বোলার হিসেবে সব মিলিয়ে পাঁচ টেস্টে উইকেটের সংখ্যা ৭ হলেও তার ব্যাটিং ক্ষমতা তাকে একটু আলাদা ভাবেই পরিচয় করে দিয়েছে। যদিও তিনি পেস বোলিং অলরাউন্ডার নন। তাই এবার বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংয়ে মনোযোগ দিচ্ছেন বরিশালের ২৫ বছর বয়সী এই তরুণ। কারণ দলে এখন তার প্রতিযোগী হতে পারেন আরেক পেস বোলিং অলরাউন্ডার সাইফুদ্দিন। কন্ডিশনিং ক্যাম্পে ফিটনেস উন্নতির পর বোলিংয়ের সঙ্গে ব্যাটিং নিয়েও কাজ করতে চান তিনি। রাব্বি বলেন, ‘আমার ওপর কোচের আস্থা জন্মেছে। তার বিশ্বাস জন্মেছে যে, নাইটওয়াচম্যান হিসেবে আমাকে ব্যাটিংয়ে নামালে আমি কিছু করতে পারবো। এই বিষয়গুলো আমাকে আরো আত্মবিশ্বাসী করেছে। তাই আমি ব্যাটিং নিয়ে আরো কাজ করতে চাই।’
রাব্বির এই ব্যাটিং করার পেছনে রয়েছে পূর্ব অভিজ্ঞতাও। ক্রিকেট খেলার শুরুতে বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংটাও করেছেন। তবে পেসার হওয়াতে সব সময় ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেতেন না। তবে জাতীয় দলে এসে তিনি তার সামর্থ্যের পরিচয় দিয়েছেন। গতকাল সংবাদমাধ্যমের সামনে রাব্বি বলেন, ‘খেলাধুলা যখন শুরু করি, তখন ব্যাটিং ভালোই করতাম। কিন্তু ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেতাম না, আর পেলেও সেটা ছিল শেষের দিকে। এখন ব্যাটিং করতে নামলেই আত্মবিশ্বাস ফিরে পাই। দলের সবাই জানে আমি ব্যাটিং করতে পারি।’ তার এই আত্মবিশ্বাসের কারণে জাতীয় দলের প্রধান কোচ হাথুরুসিংহের ক্লাসেও তার ব্যাটিং নিয়ে কাজ করতে হয়। এমনকি নেটেও সেভাবে তাকে বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংয়ে প্রস্তুতি নিতে হয় বলে জানালেন এই পেসার। তিনি বলেন, ‘নেটে আমাকে অনেক শর্ট বল খেলতে হয়। কীভাবে বল ছাড়তে হবে, কীভাবে সোজা ব্যাটে খেলতে হবে- সেইসব কোচ খুব ভালো ভাবে বুঝিয়ে দেন। সবমিলিয়ে কোচের সঙ্গে ব্যাটিং নিয়ে অনেক কাজ হয়েছে। আশা করছি ভবিষ্যতেও হবে।’
ব্যাটিং যতই ভালো হোক না কেন কামরুল ইসলাম রাব্বির দলে জায়গা হয়েছে পেসার হিসেবেই। পেসার হান্ট থেকে আসা এই বোলার দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন নিজেকে মেলে ধরতে। কিন্তু বোলার হিসেবে টেস্টে জায়গা করে নিলেও ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দলে এখনো অভিষেক হয়নি তার। যে কারণে ফিটনেস ক্যাম্পের বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশের সঙ্গে বোলিং নিয়েও কাজ করছেন তিনি। ওয়ালশের সেই বিশেষ ক্লাসে আপাতত স্পট বোলিং নিয়েই কাজ শুরু করেছেন রাব্বি। তিনি বলেন, ‘তিনি (ওয়ালশ) এখন আমাদের স্পট পাশাপাশি বোলিং নিয়ে কাজ করছেন। তাই কন্ডিশন ক্যাম্পের পর পুরো ছন্দে এখনো বোলিং শুরু করা হয়নি। আশাকরি বোলিং নিয়ে আরো অনেক বেশি কাজ করার সুযোগ পাবো।’ কোর্টলি ওয়ালশের প্রশিক্ষণ সম্পর্কে রাব্বি বলেন, ‘আমাদের কৌশলগত বলেন, মানসিকভাবে বলেন- সব ক্ষেত্রেই তার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। নির্দিষ্ট করে বললে আমার বোলিংয়ে ভারসাম্য এসেছে। আমি আগে ইনসুইং পারতাম না, এখন সেটা পারি।’ অল্প দিনের মধ্যেই শুরু হচ্ছে পেস বোলিং ক্যাম্প। সেখানেই খেলার লক্ষ্যটা ঠিক করে রেখেছেন এই বোলার। তিনি বলেন, ‘আমি এখন যে বিষয়গুলো জানি সেসব আরো নিখুঁত করতে চাই। আপাতত আমার লক্ষ্য সেটাই।