৪৫ মিনিটের বৈঠক হতে পারে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। পশ্চিমবঙ্গের বিশ্ব ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের ফাঁকে তাদের মধ্যে এই বৈঠক হবে। বিশ্ব ভারতী সমাবর্তনের সময় শেখ হাসিনার সঙ্গে শুক্রবার সাক্ষাত করবেন নরেন্দ্র মোদি। এ সময় তাদের মধ্যে তিস্তার পানি বন্টন, আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস, মিয়ানমার থেকে দলে দলে রোহিঙ্গাদের দেশ ত্যাগ করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার মতো ইস্যু এতে থাকতে পারে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইন্যু ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে ঢাকা থেকে বলেছেন, শেখ হাসিনার সফরে প্রধান এজেন্ডা হলো সাংস্কৃতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি।তবে যখন দুই প্রধানমন্ত্রী সমাবর্তনের পাশাপাশি এক টেবিলে বসবেন তখন স্বাভাবিকভাবেই দু’দেশের মধ্যকার বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কথা হবে। সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ওই বৈঠক হতে পারে ৪৫ মিনিটের। তবে তিস্তার পানি বন্টন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিতে আসার পক্ষে নন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলছেন, এমন চুক্তি করা হলে তার রাজ্য পানি সংকটে ভুগতে পারে। প্রেসিডেন্সি কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল অমল মুখোপাধ্যায় বলেছেন, হাসিনা-মোদির আলোচনার সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত থাকবেন কিনা তা আমি নিশ্চিত নই। তিস্তার পানি বন্টনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হতে পারে। তবে পর্যাপ্ত পানি বন্টনের চুক্তিতে আসতে না পারার জন্য ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া শুভকর নয়। এটা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। উল্লেখ্য সিকিম থেকে পশ্চিমবঙ্গের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে আসা তিস্তা নদীর পানির সমবন্টন দাবি করছে বাংলাদেশ। ২০১১ সালে অন্তর্বর্তী একটি চুক্তি করা হয়। তাতে ভারতকে এই নদীর পানির শতকরা ৪২.৫ ভাগ ও বাংলাদেশকে ৩৭.৫ ভাগ পনি দেয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু ওই চুক্তি স্বাক্ষর করা হয় নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতার কারণে। বিকল্প হিসেবে তিনি তোরসা নদীর মতো নদীর পানি বন্টনের প্রস্তাব দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামনেই জাতীয় নির্বাচন। তাই এ বিষয়ে একটি চুক্তি শেখ হাসিনার জন্য খুবই গুরুত্ব বহন করে। বিদ্যাসাগর ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রফেসর শিবাজি প্রতীম বসুর মতে, বাংলাদেশ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কট্টরপন্থিরা এরই মধ্যে চাপ সৃষ্টি করছে এবং প্রশ্ন তুলছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতের কাছ থেকে কি পেলেন। এখনও গুরুত্বপূর্ণ তিস্তা নদীর পানি বন্টন চুক্তি বাস্তবায়িত হয় নি। তিনি আরো বলেন, দেশের কেন্দ্রীয় কাঠামোর দিকে লক্ষ্য রেখে দৃষ্টিভঙ্গি নিতে মমতাকে অনুমোদন দিয়েছেন মোদি। তার ভাষায়, নরেন্দ্র মোদি ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উভয়ের কাছে এটি একটি রাজনৈতিক প্রশ্ন। যদি মমতা আরো পানি বন্টনে সম্মত হন তাহলে তা রাজনীতিতে তার ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে। মনে রাখতে হবে যে, আগামী বছরেই লোকসভা নির্বাচন হওয়ার কথা।
শেখ হাসিনা শুক্রবার বোলপুরে শান্তিনিকেতনে বিশ্ব ভারতী ক্যাম্পসে উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ ভবন। সেখানে থাকবে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের ওপর একটি জাদুগর ও লাইব্রেরি। কাজী নজরুল ইসলাম ইউনিভার্সিটির সমাবর্তনের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে তার সাক্ষাত হওয়ার কথা রয়েছে। এখানেই শেখ হাসিনাকে শনিবার ডি-লিট উপাধিতে ভূষিত করার কথা রয়েছে। ওই সমাবর্তনে প্রধান অতিথি থাকবেন মমতা।