ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিদের ওপর মার্কিন বিমান হামলার পরিধি ইরাক থেকে প্রতিবেশী সিরিয়ায় সম্প্রসারণের ঘটনা প্রমাণ করে, একাধারে পাশ্চাত্য ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর কাছে বিষয়টি কতটা জরুরি। পাঁচটি আরব দেশও সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে সোমবার রাতে চালানো মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিমান হামলায়। যদিও আইএসের কাছে দেশের সীমানা অর্থহীন। তারা সব সীমানা ভেঙে কথিত ‘খেলাফত’ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
মধ্যপ্রাচ্যে আগের ইরাক যুদ্ধের সঙ্গে এবার আইএসবিরোধী লড়াইয়ের একটি ‘ইতিবাচক’ দিক হলো, শত্রু নির্মূল করতে যুক্তরাষ্ট্র এবার একা নয়, আরবের মিত্রদেশগুলোও সহযোগিতা দিচ্ছে তাকে।
বেশ কিছুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র এবং এর মিত্রদেশগুলো আইএস জঙ্গিদের বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে আসছে। এসব তথ্যের ভিত্তিতেই মার্কিন সেনাবাহিনী ও সহযোগী দেশগুলোর বাহিনী সোমবার রাতে সিরিয়ায় আইএস জঙ্গিদের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা শুরু করে। এতে যুদ্ধ ও বোমারু বিমান এবং শক্তিশালী টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্র আর ড্রোন ব্যবহার করা হয়। সিরিয়ায় বড় ধরনের টানা বিমান হামলা চলে সেদিন। শুধু বিমান হামলার মধ্য দিয়ে আইএসকে হয়তো নির্মূল করা সম্ভব নয়। তবে এই হামলার কৌশলগত উদ্দেশ্যটা স্পষ্ট। আইএস জঙ্গিদের ভারসাম্য বিনষ্ট করা এবং তাদের নেতৃত্ব ও সমর্থকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা।
কথা হলো, এরপর কী ঘটতে যাচ্ছে? হয়তো বিমান হামলা নিয়মিত কিছুদিন ধরে চলবে। এতে আরও গতি আনা হবে। আর এর মধ্য দিয়ে আইএসবিরোধী স্থলযুদ্ধের জন্য ক্ষেত্র তৈরি হবে।
প্রকৃত প্রশ্নগুলো হলো: মার্কিন রণকৌশলের অন্য উপাদানগুলো কি সমানভাবে কার্যকর হবে? স্থলযুদ্ধে আইএস জঙ্গিদের পরাজিত করার মতো অনুকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে কি? আইএসই বা এই জোটবদ্ধ শক্তিকে কতটুকু প্রতিরোধ করতে পারবে?
ইরাকের কথাই ধরা যাক। সেখানে মার্কিন বিমান হামলায় আইএসের ক্রমে এগিয়ে চলা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে, উত্তর ইরাকের কুর্দি-অধ্যুষিত এলাকায় বড় ধরনের প্রতিরোধের মুখে পড়েছে জঙ্গিরা। কিন্তু ইরাকে আইএস জঙ্গি নির্মূলে প্রকৃত অর্থে মার্কিন বিমান হামলা এখনো শুরুই হয়নি। দুটি বিষয়ের ওপর তা নির্ভর করবে।
প্রথমত, বিভিন্ন এলাকায় আইএস জঙ্গিদের মুখোমুখি স্থলযুদ্ধে পরাজিত করতে সুপ্রশিক্ষিত ও স্বতঃপ্রণোদিত যোদ্ধার প্রাপ্যতা। যেমন, কুর্দি যোদ্ধাদের আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সমৃদ্ধ করা। আইএস জঙ্গিদের মুখোমুখি হয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়া অন্তত কিছু ইরাকি সেনার মনোবল বৃদ্ধির চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো রাজনীতি। ইরাকে মতৈক্যের সরকার গঠনের আগ পর্যন্ত দেশটিকে আইএসবিরোধী লড়াইয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
ইরাক ও সিরিয়া সংকট রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করাটা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সামরিক শক্তি দিয়ে জঙ্গিদের আপাতত পরাজিত করা সম্ভব হলেও হয়তো আবারও আইএসের মতো অন্য কোনো শক্তির উত্থান ঘটবে।