নরসিংদীর রায়পুরা এলাকায় সালেহা বেগম (২২) নামের এক গৃহবধূকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার রাত ১১টার দিকে উপজেলার উত্তর বাখননগর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে আজ বৃহস্পতিবার বেলা তিনটার দিকে শ্বশুরবাড়ি থেকে ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
সালেহা বেগম বাহাদুর গ্রামের হেফজু মিয়ার স্ত্রী। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর গ্রামের সুরুজ মিয়ার মেয়ে।
পুলিশ ও ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, দুই বছর আগে বাহাদুরপুর এলাকার বাতেন মিয়ার ছেলে হেফজু মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় সালেহার। বিয়ের সময় শর্ত অনুযায়ী নগদ ৬০ হাজার টাকা যৌতুক গুনতে হয়েছিল সালেহার বাবা সুরুজ মিয়াকে। বিয়ের পর পর স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ির শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে বাধ্য হয়ে বাবার বাড়ি থেকে একাধিকবার ১০ বা ২০ হাজার টাকা এনে দেন সালেহা। সম্প্রতি টাকার অঙ্ক বাড়িয়ে ৫০ হাজার করে শুরু হয় তাঁর (সালেহা) ওপর শারীরিক নির্যাতন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল রাত ১১টার দিকে শ্বশুর বাতেন মিয়ার উপস্থিতিতে স্বামী হেফজু মিয়া গায়ে কেরোসিন ঢেলে সালেহাকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করে একটি ঘরে অবরুদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে সালেহার বাবা-মা ও ভাই পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে আজ বেলা তিনটায় ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করেন।
মোবাইল ফোনে সালেহার ছোট ভাই আব্দুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে ৬০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। পরে অনেকবার টাকা নিয়েছে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এখন আবার ৫০ হাজার টাকার জন্য আমার বোনকে তাঁর স্বামী ও শ্বশুর মিলে পিটিয়ে আহত করে কেরোসিন ঢেলে হত্যা করতে চেয়েছিল। পরে একটি ঘরে আটকে রাখে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা পাশের বাড়ির লোকজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশের সহযোগিতায় তাঁকে উদ্ধার করি।’
চিকিৎসকের বরাত দিয়ে আব্দুল্লাহ বলেন, সালেহা বেগমের গলা, বুকসহ শরীরের ১৪ শতাংশ অগ্নিদগ্ধ হয়েছে। এখন অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক।
রায়পুরা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মুজিবুর রহমান বলেন, ‘সালেহা বেগমের অবস্থা খুব আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারি নাই। তাঁর বাবা-মা যৌতুকের জন্য শ্বশুর ও স্বামী তাঁকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টার করেছেন বলে দাবি করেছে। তবে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নির্যাতনের কারণে সালেহা বেগম নিজে আত্মহত্যার চেষ্টাও করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে কোনো লোকজন পাওয়া যায়নি। সবাই পালিয়ে গেছে। বিষয়টি অধিকতর তদন্ত ছাড়া সুনিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে লিখিত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।