বাংলাদেশে অনলাইন মার্কেটপ্লেস খ্যাত ‘বিক্রয়.কম’ ও মোবাইল ব্যাংকিং প্রোভাইডার ‘বিকাশ’ ব্যবহার করে একটি চক্র প্রতারণামূলক টেলিকম ব্যবসা শুরু করেছে। এতে একটি সিমকার্ডে মিলছে দুটি নম্বর। যার একটি নম্বর দিয়ে আউটগোয়িং কল করা গেলেও ইনকামিং কল ঢুকে না। এমনকি এসএমএস আদান প্রদান চলে না। অথচ ওইসব নম্বর ট্র্যাকিং করা যাবে না। অদ্ভুত এই কানেকশন সর্বত্র ব্যাপক আলোড়ন সৃস্টি করলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দারা রয়েছে অন্ধকারে। এমনকি বিটিআরসিও এ ব্যাপারে খোঁজখবর রাখে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিক্রয় ডটকমের ওয়েবসাইটে ঢুকে ঢাকা বিভাগে ক্লিক করার পর চাকরি ও সার্ভিসের পোস্টে গিয়ে দেখা যায় ‘২৪ ঘণ্টা ৫০ পয়সা’ শিরোনামে একটি বিজ্ঞাপনেই পাওয়া যায় এ টেলিকম ব্যবসার খোঁজ। দৈনিক ভোরের কাগজ এ খবর জানাচ্ছে।
পত্রিকাটি বলছে, বিটিএস সংযোগ নামের এই টেলিকম ব্যবসায় ডিবি ফাউন্ডেশন নামের অনলাইনভিত্তিক একটি ব্লুগ ওয়েবসাইট হিসেবে কাজ করছে সক্রিয়ভাবে। বাংলাদেশের যে কোনো মোবাইল ফোন কোম্পানির গ্রাহক এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বিটিএস সংযোগ নিতে পারেন। বিটিএস সংযোগ কেনার ক্ষেত্রে গ্রাহককে কোনো আলাদা সিম কিনতে হয় না। গ্রাহক তার নিজস্ব বাংলালিংক, এয়ারটেল, গ্রামীণ, সিটিসেল এবং রবি সিমেই অন্য আরেকটি নম্বর অ্যাকটিভ করতে পারেন। সিমকার্ডে বিটিএস সংযোগ গ্রহণের ফলে মূল যে নম্বরটি আছে সেটি থাকলেও সঙ্গে আরো একটি নম্বর যোগ হচ্ছে। এক কথায় এক সিমকার্ডে দুইটি নম্বর। এই সংযোগের নম্বর ক্যাটাগরি হলো +৮৮০৯৬০১- এই প্রকৃতির। এই সংযোগে আউটগোয়িং আছে কিন্তু ইনকামিং নেই। ফলে যে কেউ অসৎ উদ্দেশে এই নম্বর ব্যবহার করতে পারে।
এদিকে এই সংযোগ ট্র্যাক করে গ্রাহকের অবস্থান নির্ণয় করা সম্ভব নয়। সংযোগটি পেতে কোনো দোকানে যেতে হয় না। ‘ডিবি ফাউন্ডেশন‘ নামে একটি কথিত প্রতিষ্ঠান এর এজেন্ট। সেখানে যোগাযোগ করতে হয় +৮৮০১৮৫৫৮৭৭১৯৫ নম্বরে। ওই নম্বরে যোগাযোগ করে বিকাশের মাধ্যমে প্রথমে ৩৫০ টাকা পরিশোধ করে সংযোগ পাওয়া যায়। রিচার্জ করতে হয় ৫০ টাকা থেকে যতো ইচ্ছে ততো। মূলত এর পুরো প্রক্রিয়া চলছে অনলাইনে। ডিবি ফাউন্ডেশন তাদের এই তৎপরতা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে চালাচ্ছে বলে দাবি করলেও এর পক্ষে কোনো প্রমাণ মেলেনি।
সূত্র মতে, ব্লুগ সাইটে ঢোকার পর জানা যায় তাদের প্রতারণামূলক ব্যবসার জাল সম্পর্কে। ডিবি ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে উল্লিখিত সার্ভিসগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ফেসবুক, ইয়াহু এবং জিমেইল এর ফিশিং সাইট তৈরি করা এবং ফেইক লাইক কেনার মতো অবৈধ সব ব্যবসার।
এ ধরনের টেলিকম ব্যবসা সম্পর্কে ডিবি ফাউন্ডেশনের এজেন্টে নাঈমের সঙ্গে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই ব্যবসা সম্পর্কে আমিও অনলাইনে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে অবগত হয়ে পরে এজেন্ট হই। বিষয়টি অনেকটা ডেসটিনির এমএলএম ব্যবসার মতো। ডিবি ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের প্রধান কার্যালয় সিলেটে অবস্থিত। তিনি বলেন, আমি যে লোকের মাধ্যমে এই ব্যবসায় আসি তার নাম নাবিল। নাবিলের (+৮৮০১৭৩০০৬০২৫৮) নম্বরে যোগাযোগ করে আপনি এর বৈধতা সম্পর্কে জানতে পারেন। পরে ওই নাবিলের ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের স্পেশাল সুপার আশরাফ বলেন, আমরা এ বিষয়ে লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি এবং বিষয়টি আমরা অবগত নই। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান সুনিল কান্তি বোস বলেন, আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। এ বিষয়টি সম্পর্কে আমার তেমন কোনো ধারণা নেই। বিটিআরসির সহকারী পরিচালক তাইফুর রহমানও এ বিষয়ে একই কথা বলেন।