বিনামূল্যের ফরম ১০ থেকে ১০০ টাকা, ফরম পূরণ করা ৫০ থেকে ১০০ টাকা, ব্যাংকের ২০০ টাকার ফি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা আর ফরম জমা দেওয়ার সিরিয়ালও পাওয়া যায় ১০০ থেকে ৩০০ টাকায়। এর কোনোটিই প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কিংবা জনশক্তি রপ্তানি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) নিয়ন্ত্রণে নয়।
মন্ত্রণালয় থেকে নিবন্ধনের ঘোষণা দিয়েও পর্যাপ্ত সুবিধা ও ডেস্ক না খোলায় সুযোগ কাজে লাগিয়ে ফরম তোলা, পূরণ করা, জমা দেওয়া, ব্যাংকের ফিসহ সব কিছুই চলে গেছে দালালদের খপ্পরে। হাজার হাজার লোক নিবন্ধন করতে আসায় ও মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি না থাকায় সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করছে তারা। আর দর্শকের ভূমিকায় রয়েছে মন্ত্রণালয় ও বিএমইটি।
বুধবার সকাল থেকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে স্থাপিত নিবন্ধের প্যাভিলিয়ন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বিএমইটি ও জেলা জনশক্তি অফিসের প্রতিটা কার্যালয়ে দেখা গেছে এমন চিত্র।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের প্যাভিলিয়নে দেখা যায়, মাত্র একটি ডেস্কের বিপরীতে হাজার হাজার লোকের ভিড়।কয়েক ঘণ্টার ধাক্কাধাক্কি পেরিয়ে ডেস্ক পর্যন্ত পৌঁছতে পারলে পাওয়া যাবে কাঙ্ক্ষিত ফরম। তবে ঝামেলা থেকে বাঁচতে দালালদের শরণাপন্ন হচ্ছেন অধিকাংশ মানুষ। ২০ থেকে ১০০ টাকায় ফরম বিক্রি করছেন এসব দালাল।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে রঙ্গিন প্রিন্টিং কপি ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে বলে জানান একজন নিবন্ধন ইচ্ছুক।
ব্যাংক ফি ও ফরম জমা দেওয়ার স্থান ইস্কাটনের বোরাক টাওয়ার দালালদের মূল আস্তানা। এখানে ঘুরে দেখা হয় কয়েক শ দালালের সঙ্গে। সবাই ফরম বিক্রি করছেন ২০ থেকে ১০০ টাকায়, অশিক্ষিত ও স্বল্প শিক্ষিতদের ফরম পূরণ করে দিচ্ছেন ৫০ থেকে ১০০ টাকায়। আর ভিড় ঠেলে ব্যাংক ফি ও ফরম দেওয়ার ঝামেলা থেকে রক্ষা পেতে দালালদের হাতে টাকা তুলে দিচ্ছেন অসহায় মানুষরা।
দালালদের মাধ্যমে ব্যাংক ফি ফরম জমা দেওয়া ফার্মগেটের আবুল বাশার জানান, সকালে এসে দেখি কোনো ফরম নেই। তাই বাধ্য হয়ে দালাদের নিকট থেকে কিনেছি। আর ৩ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও কখন জমা দিতে পারবো তার নিশ্চয়তা না থাকায় ৪০০ টাকা দিয়ে দালালদের মাধ্যমে জমা দিয়েছি।
দালালদের এরূপ কার্যক্রম প্রকাশ্যে ঘটলেও নিশ্চুপ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি মন্ত্রী কিংবা সচিবকে। উপসচিব আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, মন্ত্রী সরকারি কাজে ব্যস্ত আর সচিব সৌদি ডেলিগেটকে বিদায় জানাতে সকাল থেকে তাদের সঙ্গে রয়েছেন।
তিনি বলেন, সৌদি আরবের জন্য নতুন করে নিবন্ধন করা হচ্ছে- এটি সম্পূর্নই গুজব। নিবন্ধন একটি চলমান প্রক্রিয়া হওয়ায় আমরা আলাদা কোনো প্রস্তুতি নেইনি। আর হঠাৎ করে প্রস্তুতি নেওয়ার মতো অবস্থাও মন্ত্রণালয়ের নেই।
দালালদের দৌরাত্মের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা যেহেতু আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেইনি তাই হঠাৎ চলে আসা বিপুল মানুষকে ফরম কিংবা সার্ভিস দেওয়া সম্ভব নয়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বারবার ঘোষণা দিয়ে বলা হচ্ছে শুধু এখন নয়; যে কোনো সময় এ নিবন্ধন করা যাবে।
বিনামূল্যের ফরম ৫০ টাকায় বিক্রি করা নারায়ণগঞ্জের আবুল কাশেম বলেন, আমি দালাল নই। গতকাল ফরম তুলতে এসে অনেক ভোগান্তির শিকার হয়েছি। বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্র থেকে ১০০ টাকায় ফরম কিনেছি। আর ফটোকপি করে সেটি আজ ৫০ টাকায় বিক্রি করছি। এতে যারা নিবন্ধন করতে আসছেন তাদেরও ‘উপকার’ হচ্ছে আমারও উপকার হচ্ছে।
এটি দোষের কিছু নয় উল্লেখ করে অন্যারাও এটি করছে বলে জানান তিনি।