বাংলাদেশের টেলিকম সেক্টর নিয়ে আবারো সরব হতে শুরু করেছে বাংলাদেশের মিডিয়া। বিশেষ করে নতুন মন্ত্রী কাজ যোগদান করে নতুন নতুন পদক্ষেপ নেয়ার পর থেকেই পুরো শিল্পটি আবারো আলোচনায় আসে।
সম্প্রতি টেলিকম সেক্টরে তেমনি একটি চমকপ্রদ সংবাদ প্রকাশিত হয় বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে। দৈনিক ইত্তফাক সহ দেশের অনেকগুলো জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় যে, টেলিটকের ৪ লক্ষ সিমকার্ডের মাধ্যমে অবৈধ ভিওআইপি কল টার্মিনেশন করা হয়, ফলে দেশ কোটি কোটি টাকা হারাচ্ছে।
“অবৈধ ভিআইপির কেন্দ্রে রাষ্ট্রীয় মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা বন্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ বাস্তবায়নে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠান। বিটিআরসির এক অভিযানে এর দালিলিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। অবৈধ ভিওআইপির বিরুদ্ধে গত সোম এবং বৃহস্পতিবার অভিযান পরিচালনা করে বিটিআরসি। এতে দেখা যায়, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায় ব্যবহূত হয় টেলিটকের এমন সিমের সংখ্যা সাড়ে চার লাখ। যার ফলে দৈনিক তিন কোটি মিনিট অবৈধভাবে ভিওআইপি করা হচ্ছে। এ অনিয়ম দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান বিটিআরসির কর্মকর্তারা। তারা এ অনিয়মের ব্যাপারে টেলিটকের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদও করেন। তবে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।” (দৈনিক ইত্তেফাক, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৫)
ইত্তেফাকের একই রিপোর্টে বলা হয়, “গড় হিসাবে দেখা যায়, প্রতিদিন টেলিটক ব্যবহার করে অবৈধ ভিওআইপি কলের জন্য রাষ্ট্রের ক্ষতি হচ্ছে এক কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এ হিসাবে মাসে ক্ষতি হচ্ছে ৫৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা। বছরে ক্ষতি হচ্ছে ৬৯৫ কোটি টাকা।”
বিষয়টির নতুন মাত্রা যোগ হওয়ায়, প্রিয়.কম এর অনুসন্ধান শুরু করে। সেখানে দেখা যায়, রিপোর্টটিতে কিছু তথ্য ইচ্ছে করেই বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছে। বিটিআরসি’র যে দল সেদিন টেলিটক অডিট করেছিল, সেখানে দেখা গিয়েছিল যে, গড়ে ৩ মিনিটের বেশি কথা বলা হয়েছে এমন সিমের সংখ্যা ৪ লক্ষের মতো। এবং এটাকেই বলা হচ্ছে, এই সিমকার্ডগুলো দিয়ে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা করা হচ্ছে। এই একই দল গ্রামীণফোন এবং রবি’র নেটওয়ার্কও পরিদর্শন করেছিল। সেখানে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, গ্রামীণফোনে ২ মিনিটের উপর কথা বলা হয় ৭০ লক্ষ সিমকার্ড দিয়ে, ৩ মিনিটের উপর কথা বলা হয় ৪০ লক্ষ সিমকার্ড দিয়ে, এবং ৫ মিনিটের উপর কথা বলা হয় ১৭ লক্ষ সিমকার্ড দিয়ে। রবি’র ৩ মিনিটের উপর কথা বলে এমন সিমকার্ডের সংখ্যা ১৮ লক্ষ ৭০ হাজার, এবং ৫ মিনিটের উপর কথা বলে এমন সিমকার্ডের সংখ্যা ৮ লক্ষ।
যে হিসাবে টেলিটককে অবৈধ ভিওআইপি বলা হচ্ছে, সেই একই হিসাবে গ্রামীণফোনের ৪০ লক্ষ সিমকার্ড অবৈধ ভিওআইপি’র সাথে জড়িত। এবং একই হিসাবে বছরে ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা।
এই বিষয়ে গ্রামীণফোনের সাথে যোগাযোগ করা হলে, প্রতিষ্ঠানটির চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মাহমুদ হোসেন প্রিয়.কম-কে জানান, “প্রকৃতপক্ষে বিটিআরসি’র নির্ধারিত ছয়টি যুক্তির উপর ভিত্তি করে কোন সিমকে অবৈধ ভিওআইপির অভিযোগে চিহ্নিত করা হয়, যার মধ্যে ৩ মিনিটের বেশি কথা বলা একটি মাত্র যুক্তি। গ্রামীণফোন এই সব যুক্তির ভিত্তিতে দৈনিক প্রতি ঘন্টায় তার নেটওয়ার্ক নিরিক্ষা করে এবং সব গুলো যুক্তি প্রমাণিত হলে সন্দেহজনক সিম বন্ধ করে বিটিআরসিকে জানায়। একইভাবে অন্য নেটওয়ার্কের সন্দেহজনক সিম-এর তথ্যও বিটিআরসিকে জানানো হয়। এর বাইরেও গ্রামীণফোন হ্যান্ডসেট এবং বিভিন্ন ভিওআইপি যন্ত্র ব্যবহার করে যে কল করা হচ্ছে সেটাও পর্যবেক্ষণ করে এবং সন্দেহজনক মনে হলে ওইসব সিম বন্ধ করে দেয়। এখানে উল্লেখ্য অবৈধ ভিওআইপি বন্ধে অপারেটেরদের মধ্যে সবার আগে গ্রামীণফোন বিটিআরসির সাথে কাজ শুরু করে। এবং এখন পর্যন্ত সন্তোষজনকভাবে বিটিআরসিকে প্রতিবেদন দিয়ে আসছে।“
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টেলিটকের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রিয়.কম-কে জানান যে, আমরা যেহেতু সরকারী প্রতিষ্ঠান তাই যাবতীয় দোষ নন্দঘোষের মতো আমাদের উপর এসে পড়ে। সরকার এবং রেগুলেটরী কর্তৃপক্ষকে আরো নিরপেক্ষভাবে কাজ করার অনুরোধ জানান তিনি।