অবৈধ অভিবাসী ও ভঙ্গুর অর্থনীতির সঙ্কটের মধ্যেই আজ রোববার ইতালিতে সাধারণ নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচন পূর্ব আভাসে কোনো একজন প্রার্থীর সুস্পষ্ট জয়ের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাই এবারের নির্বাচনে কে জয়ী হবেন, সেটি নিশ্চিত করে বলা খুব মুশকিল। ফাইভ স্টার মুভমেন্ট, ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বেরলুসকোনির ডানপন্থি জোট সবাই নির্বাচনের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।
তবে কর প্রতারণার মামলায় অভিযুক্ত হওয়ায় আগামী বছরের আগে প্রধানমন্ত্রী পদে বসতে পারবেন না ৮১ বছর বয়সী বেরলুসকোনি।অভিবাসীবিরোধী পার্টির সঙ্গে জোট বাধা চারবারের প্রধানমন্ত্রী বেরলুসকোনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট অ্যান্তোনিও তাজানিকে মনোনীত করেছেন।ইতালির নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে মতামত জরিপ চালানো নিষিদ্ধ কিন্তু এর আগের জরিপে দেখা গেছে বেরলুসকোনির জোট এগিয়ে। কিন্তু সরকার গঠনের জন্য একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না তারা।এদিকে ফাইভ স্টার পার্টি এককভাবে দল হিসেবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আলোচনায় অভিবাসীরা
২০১৩ সাল থেকে লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগরের ভয়াবহ পথ পাড়ি দিয়ে ছয় লাখের বেশি অভিবাসী ইতালিতে আশ্রয় নেয়।এটি ইতালির জনগণ ও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।বেরলুসকোনি এ অবৈধ অভিবাসীদের ‘সোশ্যাল টাইম-বম্ব’ হিসেবে বর্ণনা করে তাদের গণবিতাড়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ভঙ্গুর অর্থনীতি
ইতালির অর্থনীতি আবারও ডানা মেলতে শুরু করেছে। প্রায় দশ বছর বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে ইতালির ঘুরে দাঁড়ানোর এ চেষ্টা দৃশ্যমান হচ্ছে। কিন্তু দেশটির জিডিপি এখনও ৫ দশমিক ৭ শতাংশের নিচে অবস্থান করছে।২০১৬ সালে দেশটির এক কোটি ৮০ লাখ মানুষ দরিদ্রতা ঝুঁকিতে পড়ে। সেসময় বেকারত্বের হার ছিল ১১ ভাগ।তাই নির্বাচনে তরুণ-তরুণদের উপস্থিতি কম হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে
এ নির্বাচন কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ইতালি ইউরোপীয় ইউনিয়নের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। দেশটিতে পপুলিস্ট ও চরম-ডানপন্থি দলগুলোর উত্থান ইউরোপের বিভিন্ন দেশের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দেখা দিচ্ছে। তবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীরা ইতালির অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে না পারার ব্যর্থতা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ওপর চাপিয়েছেন।ফাইভ স্টার ও চরম-ডানপন্থি লিগ ইউরো থেকে বেরিয়ে যেতে গণভোট আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কিন্তু শেষপর্যন্ত সেখান থেকে সরে আসে তারা।মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউজে যেতে সাহায্য করা স্টিভ ব্যানন নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, ইতালির নির্বাচন হচ্ছে ‘পিওর পপুলিজম।’ এটি এমন রাজনৈতিক দর্শন যেখানে সুবিধাভোগী এলিট শ্রেণির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের অধিকার ও ক্ষমতায়নের কথা বলে।এদিকে গেলো সাত দশকের বেশি সময়ের মধ্যে ৬৫ বার সরকার বদল হয়েছে দেশটিতে। তাই আজ যে জাতীয় ও আঞ্চলিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেটি দেশটির জন্য একটি পরীক্ষাও বটে। কিন্তু সব বাধা দূরে ঠেলে শেষপর্যন্ত কী ঘুরে দাঁড়াতে পারবে দেশটি?