রাশিয়ার সাবেক গোয়েন্দা সের্গেই স্ক্রিপাল ও তার মেয়ে ইয়ুলিয়াকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে দুই জনকে অভিযুক্ত করেছে বৃটেনের ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস (সিপিএস)। অভিযুক্তদের নাম আলেকজান্ডার পেত্রভ ও রুসলান বশিরভ। তারা উভয়েই রাশিয়ার নাগরিক। সংস্থাটি দাবি করেছে, তাদেরকে অভিযুক্ত করার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ তাদের কাছে রয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
খবরে বলা হয়েছে, অভিযুক্তদের ফিরিয়ে দিতে রাশিয়ার কাছে আবেদন করবে না বৃটেন। দেশটির সঙ্গে বহিঃসমর্পণ চুক্তি না থাকায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে, সমগ্র ইউরোপজুড়ে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। সংস্থাটি ধারণা করছে অভিযুক্তরা তাদের ছদ্মনাম ব্যবহার করেছে।তাদের বয়স আনুমানিক ৪০ বছর। মার্চ মাসে তারা সাবেক রাশিয়ার গোয়েন্দা স্ক্রিপাল (৬৬) ও তার মেয়ে ইয়ুলিয়া (৩৩) এর উপরে নার্ভ গ্যাস হামলা চালিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। তবে পরবর্তীতে চিকিৎসার পরে তারা সুস্থ হয়ে ওঠেন।
এর আগে পুলিশ জানিয়েছিল, তারা দুইজনকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরা মস্কো থেকেই লন্ডনে এসেছিল। তারা ছিলেন রাশিয়ার পাসপোর্টধারী। বৃটেনের এরকম দাবির জবাবে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা সংবাদ সংস্থা তাসকে বলেছেন, অভিযুক্তদের নাম ও ছবি দিয়ে প্রমাণ করা যায় না এ হামলার সঙ্গে মস্কো যুক্ত রয়েছে। লন্ডনের কাছে এ নিয়ে আমাদের আরো অনেক প্রশ্ন রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা আবারো বৃটেনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি এ বিষয়ে তথ্যের কোনো পরিবর্তন করবেন না। আমাদের সঙ্গে কাজ করুন, আপনাদের যেধরনের সহায়তা দরকার আমরা দিতে প্রস্তুত। রাশিয়া এ অভিযোগকে ধাপ্পাবাজি বলে অভিহিত করেছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে সরাসরি প্রহসন বলে দাবি করেছে। বৃটেন কী প্রমাণ পেয়েছে তাও হস্তান্তর করতে বলেছে দেশটি। এ অভিযোগকে রাশিয়া তার ভাবমূর্তি নষ্টে পশ্চিমাদের নোংরা প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছে বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়।
মার্চে স্ক্রিপালের উপর হামলার অভিযোগে রাশিয়ার সঙ্গে বৃটেনের সমপর্ক খারাপ হতে শুরু করে। প্রথম থেকেই বৃটেন সরকার এ ঘটনার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করে আসছে। মস্কো এখন পর্যন্ত এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এ ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার উপরে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশ থেকে রাশিয়ার কূটনীতিক বহিষ্কারের ঘটনাও ঘটে সেসময়। এসবের কঠোর জবাবও দিয়েছিল মস্কো। মস্কো বলেছে যে, বৃটিশ পুলিশ রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার বিষয়টি ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে গেছে। নোংরা রাজনৈতিক খেলায় না জড়ানোর জন্য বৃটিশ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতি আহ্বান জানায় মস্কো। লন্ডনে কোনো কোনো শক্তি এ খেলা শুরু করে দিয়েছে বলেও সাবধান করেছিল দেশটি।
বৃটেনের গোয়েন্দারা এখন এ হামলার সঙ্গে ৩০শে জুন আমেসবারিতে হওয়া নার্ভ গ্যাস হামলার যোগসূত্র বের করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সালিসবারি থেকে মাত্র ৮ মাইল দূরে এ হামলার ঘটনা ঘটেছিল। হামলার শিকার দুইজন ২০শে জুলাই সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। তবে তাদের অতীত ঘেঁটে এ ধরনের হামলার শিকার হওয়ার কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। পুলিশ জানিয়েছে, তারা এ হামলার পেছনের সবকিছু উদঘাটনে কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে দুইজনকে শনাক্ত করা গেছে, যেটা একটি দারুণ অগ্রগতি। এখনো তদন্ত চলছে। বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে রাশিয়াকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, মস্কো যদি এখনো যথাযথ সাড়া না দেয় তবে এর মোক্ষম জবাব দেবে তার দেশ। ইতিমধ্যে লন্ডন রাশিয়ার বিরুদ্ধে তার পশ্চিমা মিত্রদের নিয়ে সম্মিলিত পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।