বাঁশের ঝাড়ু বিক্রি করেই চার সদস্যের সংসার চালায় আবদুল মান্নান। দুই মেয়ে তার। একজনের বয়স ১৪ আর অন্যজনের ৫। বড় মেয়ে দেখতে বেশ সুন্দর, আবার ঝাড়ু বিক্রেতা গরিব মানুষের মেয়ে। এ কারণে লোভের দৃষ্টি ফেলে প্রতিবেশী জসিমের ছেলে মোহন। সুযোগ বুঝে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ধর্ষণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। প্রভাবশালী জসিম ছেলের অপকর্ম স্থানীয়ভাবে ঢাকার চেষ্টা করে।কিন্তু মান্নানের স্ত্রী তাতে রাজি হয় না। থানায় মামলা করলে মোহনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। মোহনের বয়স ১৬ হওয়ায় তাকে আদালতের নির্দেশে পাঠানো হয় যশোর কিশোর সংশোধনাগারে। আর এ কারণেই জসিম ক্ষুব্ধ হয় ওই পরিবারের ওপর। তারাও বিষয়টি বুঝতে পেরে মেয়েকে পাঠিয়ে দেয় তার নানার বাড়িতে। এদিকে মোহনের বাবা জসিম মান্নানের স্ত্রী আফরোজাকে খুন করার জন্য শলাপরামর্শ করে একই গ্রামের বাচ্চু ওরফে পাইতা, আমিনুর ওরফে আনু এবং আতিকুরের সঙ্গে। আফরোজাকে খুন করতে পারলে প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে দিতে চায় মোহনের বাবা জসিম। ধর্ষণের চেষ্টা মামলার প্রধান সাক্ষী ছিল বাচ্চু ওরফে পাইতা। বাচ্চুর ছিল মান্নানের বাড়িতে অবাধ যাতায়াত। তাকে বিশ্বাস করতো আফরোজা ও তার স্বামী। মান্নানের অনুপস্থিতিতে তার পরিবারের দেখভাল করতো বাচ্চু ওরফে পাইতা। কিন্তু এক লাখ টাকার লোভে পাইতা হাত মেলায় জসিমের সঙ্গে। আফরোজাকে খুন করার পরিকল্পনায় সায় দেয়।
গত বুধবার ১২ই সেপ্টেম্বর রাতেও ঘরে ফেরেনি মান্নান। পাশের গ্রামে ঝাড়ু তৈরির উপকরণ সংগ্রহে ব্যস্ত ছিলেন। আফরোজা ছোট মেয়েকে নিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন। রাত ১১টার পর চারজন ঘরের দরজার টিন কেটে ভেতরে ঢুকে। এরপর বাচ্চু ওরফে পাইতা আফরোজার পা শক্ত করে ধরে। জসিম মাথা চেপে ধরে। আতিকুর মুখ চেপে ধরে। আর আমিনুর ধারালো ছুরি দিয়ে আফরোজাকে জবাই করে। পরদিন সকালে মেয়ে প্রতিবেশীদের ডেকে বলে তার মা’র গলা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।
তারা খবর দেয় পুলিশে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। ৫ বছরের মেয়ে ছাড়া আর কেউ ছিল না ঘটনার সাক্ষী। মেয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী শুক্রবার ১৪ই সেপ্টেম্বর রাতে পুলিশ বাচ্চু ওরফে পাইতাকে গ্রেপ্তার করে। অকপটে স্বীকার করে খুনের ঘটনা। পরে গ্রেপ্তার করা হয় জসিমকে। এরমধ্যে খবর পেয়ে আত্মগোপন করে অপর দুইজন। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য দেয় তারা দুজন।
বগুড়ার পুুলিশ সুপার আশরাফ আলী ভূঁইয়া জানান, গ্রেপ্তাররা জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে খুনের দায় স্বীকার করেছে। ঘটনার সময় আফরোজার ছোট মেয়ের ঘুম ভেঙে যায়। কিন্তু খুনিরা তাকে হত্যা করেনি। শিগগিরই খুনের সঙ্গে জড়িত অপর দুজন গ্রেপ্তার হবে।