পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনে বর্তমান সাংসদ রুস্তম আলী ফরাজী। তিনি তিনবারের নির্বাচিত সাংসদ। বিএনপি ও জাতীয় পার্টি থেকে দুবার নির্বাচিত এই সাংসদ সর্বশেষ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন। এরপর জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে রুস্তম আলী ফরাজী হবেন মহাজোটের প্রার্থী।
তবে আওয়ামী লীগের স্থানীয় একটি অংশ চাইছে দলীয় প্রার্থী। এ আসনে আওয়ামী লীগের ১৯ জন নেতা-দলীয় মনোনয়ন চাইছেন।
অন্যদিকে বিএনপির আটজন নেতা দলীয় মনোনয়নের আবেদন করলেও আলোচনায় রয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন ওরফে দুলাল। বিএনপির নেতা-কর্মীরা চান দলের ত্যাগী ও তৃণমূলের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি যেন মনোনয়ন পান।
পিরোজপুর-৩ আসনে চারবার আওয়ামী লীগ, তিনবার জাতীয় পার্টি ও দুবার বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হন। বর্তমান সাংসদ রুস্তম আলী ফরাজী ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের মহিউদ্দিন আহমেদকে হারিয়ে প্রথম সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে রুস্তম আলী ফরাজী বিএনপির প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের মাহামুদা সওগাতকে হারান। ২০০৮ সালে রুস্তম আলী ফরাজী বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে হেরে যান। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আনোয়ার হোসেন বিজয়ী হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ফরাজী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আনোয়ার হোসেনকে পরাজিত করে সাংসদ নির্বাচিত হন।
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে রুস্তম আলী ফরাজী জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। তিনি মহাজোটের প্রার্থী হচ্ছেন, এটা অনেকটা নিশ্চিত। তবে এ আসনে ফরাজী মনোনয়ন পেলে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও মঠবাড়িয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তাঁর অনুসারীরা এ ধরনের প্রচারণা চালাচ্ছেন।
আশরাফুরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর সমর্থক উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আরিফ উল হক বলেন, মহাজোট থেকে রুস্তম আলী ফরাজীকে মনোনয়ন দেওয়া হলে আশরাফুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন।
রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে নির্বাচিত হয়েছি। জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে আমি মহাজোটের প্রার্থী হব।’
জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে জাতীয় পর্টির বর্তমান সাংসদ রুস্তম আলী ফরাজী হবেন মহাজোটের প্রার্থী।
বিএনপির প্রার্থীরা মঠবাড়িয়া আসনে সুবিধা করতে পারেননি। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চেয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন, উপজেলা বিএনপির সদস্য শাহজাহান মিয়া ও জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রফিকুল ইসলামসহ আট নেতা।
তবে রুহুল আমিন ছাড়া অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় নিষ্ক্রিয়। বিএনপির নেতা-কর্মীরা মনে করেন, ২০০৮ সালে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী নির্বাচনে ভুল করায় বিএনপির প্রার্থী হেরেছেন। যোগ্য প্রার্থী দেওয়া হলে বিএনপি ভালো ফলাফল করবে।
যোগ্য প্রার্থী কে? এর জবাবে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের ৩৪ জন নেতা-কর্মী বলেন, রুহুল আমিনের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আন্দোলন সংগ্রামে তাঁকে কাছে পাওয়া যায়।
উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক ও যুবদলের আহ্বায়ক মাসুম বিল্লাহ বলেন, রুহুল আমিন দলের দুঃসময়ে নেতা-কর্মীদের ছেড়ে যাননি। শাহজাহান দীর্ঘদিন ধরে দলে নিষ্ক্রিয়।
রুহুল আমিন বলেন, ‘দল আমাকে প্রার্থী করলে আমার নির্বাচন করার মতো প্রস্তুতি রয়েছে।’
শাহাজাহান মিয়া বলেন, ‘এলাকায় আমার চেয়ে বেশি সক্রিয় কেউ নেই।’
উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে মঠবাড়িয়ায় বিএনপি এখন রুহুল অমিনের নেতৃত্বে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী। দলের যাঁরা মনোনয়ন চাইছেন, রুহুল আমিন ছাড়া অন্যদের তাঁরা আন্দোলন সংগ্রামে পাশে পাননি।