টানা তিন হার নিয়ে মুখোমুখি হয়েছিল ঢাকা ডায়নামাইটস ও চিটাগং ভাইকিংস। শেষচারে ওঠার চরম উত্তেজনার ম্যাচে সাকিব আল হাসানদের হার উপহার দেয় মুশফিকুর রহীমের দল। নিজেদের ঘরের মাঠে অবশেষে ঘুরে দাঁড়িয়ে তৃতীয় দল হিসেবে নিশ্চিত করে শেষ চারে খেলা। অন্যদিকে টানা চার ম্যাচ জিতে বিপিএলের ৬ষ্ঠ আসর শুরু করেছিল আসরের অন্যতম শক্তিশালী দল ঢাকা। কিন্তু লীগ পর্বের শেষে এসে টানা চার পরাজয়ে দেখছে মুদ্রার উল্টা পিঠ। দশ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে এখন তাদের সামনে বিপদ। শেষ দুই ম্যাচে জিতলেই মিলবে চতুর্থ দল হিসেবে শেষ চারে খেলার সুযোগ। দলটির পরাজয়ের এই যাত্রা শুরু হয়েছিল চিটাগংয়ের সঙ্গে হেরে।
তাই গতকাল প্রতিশোধ নিতে ঢাকার সামনে লক্ষ্য ছিল চিটাগংয়ের ছুড়ে দেয়া ১৭৫ রান। জবাব দিতে নেমে ২৩ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে দল। কিন্তু সেখান থেকে অধিনায়ক সাকিব একাই লড়াই করেন। ফিফটি হাঁকিয়ে দলকে জয়ের পথও দেখান। কিন্তু অন্যপ্রান্তে আসা যাওয়ার চলে মিছিল। সেই সঙ্গে ভাইকিংসের দারুণ বোলিংয়ে শেষ ২ ওভারে জমে ওঠে দারুণ উত্তেজনা। ১২ বলে প্রয়োজন ছিল ২৬ রান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১৬৩ রানে হারায় সবক’টি উইকেট। অন্যদিকে ঢাকার ক্যারিবীয় বোলার আন্দ্রে রাসেলের হ্যাটট্রিক দিনে ম্যাচ সেরা ভাইকিংসের ব্যাটসম্যান ক্যামেরন ডেলপোর্ট। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৫৭ বলে ৭১ রানের জয়সূচক ইনিংস।
১১ ম্যাচে ৭ জয়ে পাওয়া চিটাগংয়ে এখন ১৪ পয়েন্ট। একই সমান পয়েন্ট হলেও রান রেটে এগিয়ে থেকে শীর্ষে রংপুর রাইডার্স। পরেই আছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। হঠাৎ করেই খেই হারানো ঢাকার সামনে গতকাল ছিল ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ। তবে সেই সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দলের ১ রানের সময় ০ তেই ফিরে যান ওপেনার সুনীল নারিন। এরপর আউট হন আগের ম্যাচে ফিফটি হাঁকানো দেশি ব্যাটসম্যান রনি তালুকদার। আরেক ওপেনার মিজানুর রহমানকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন সাকিব। কিন্তু মিজানুর ফিরে যান ১১ রানে। এরপর দলের বড় এই ধাক্কা সামলে উঠেন উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান নূরুল হাসান সোহানকে নিয়ে। দু’জনের ব্যাটে দলের স্কোর বোর্ডে যোগ হয় ৭৩ রান। ঝড় তুলেছিলেন সোহান। ২৩ বলে দুটি করে চার ও ছয়ের মারে ৩৩ রান করেন। কিন্তু তখনই ডেলপোর্টের বলে আউট হন এই তরুণ। কিন্তু সেই ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই দলের স্কোর বোর্ডে কোনো রান যোগ না করেই আউট হন কাইরন পোলার্ড। কিন্তু অধিনায়ক সাকিব তখন অবিচল। দলের আরেক ক্যারিবীয় রাসেলকে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন। ঝড় তোলেন ব্যাটে ৪টি চারের সঙ্গে হাঁকান ২টি ছয়ের মারে ২৩ বলে ৩৯ রান করেন।
দলের জয়ের জন্য ২৪ বলে ৩৬ রান প্রয়োজন ঠিক তখনই ভাঙে সাকিব ও রাসেলের জুটি। ভাইকিংসের লঙ্কান বোলার সানাকার বলে ফিরে যান বল হাতেও বিপিএলের তৃতীয় হ্যাটট্রিক করা রাসেল। সেই ওভারেই একবার জীবন পেয়েছিলেন সাকিব। এবার শুভাগতকে নিয়ে চেষ্টা করেন। কিন্তু এক ওভারে দুই বার জীবন পেয়ে নাইমের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে আউট হন শুভাগত। পরের ওভারে সানাকার বলে ৪ হাঁকিয়ে ঢাকার অধিনায়ক ফিফটি তুলে নেন। সেই ওভারেই প্রয়োজন ছিল ১২ বলে ২৬ রান। কিন্তু বাজে এক শটে ৫৩ রান করে আউট হন সাকিব। ৪২ বলের ইনিংসে ছিল ৬টি চারের মার। শেষ দুই ওভারের দারুণ প্রভাব বিস্তার করে ভাইকিংস বোলাররা। তাতেই জয়ের বন্দরে দলকে নিতে পারেনি ঢাকার লেজের ব্যাটসম্যানরা। বল হাতে ভাইকিংসের হয়ে ৩ উইকেট নেন পেসার খালেদ আহমেদ। এ ছাড়াও দুটি উইকেট পেয়েছেন সানাকা। একটি করে উইকেট পেয়েছেন তরুণ অফ স্পিনার নাঈম ও সানাকা।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে ভাইকিংসকে দারুণ শুরু এনে দেন দুই বিদেশি ওপেনার। আগের ম্যাচে কুমিল্লার বিপক্ষে ১১৬ রানে গুটিয়ে যাওয়ার লজ্জা যেন ভীষণ তাতিয়ে দিয়েছিল দু’জনকে। তবে আফগান ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ শেহজাদ ১৫ বলে ২১ রান করে আউট হওয়ার পর ভাঙে ডেলপোর্টের সঙ্গে ৪২ রানের জুটি। এরপর ইয়াসির আলী ১৯ রান করে ডেলপোর্টকে সঙ্গ দেন। দলের ৮৮ রানের সময় আউট হন ইয়াসির। সেখান থেকে অধিনায়ক মুশফিক খেলেন আরো একটি দায়িত্বশীল ইনিংস। মাত্র ২৪ বলে ৪টি চার ও ২ ছয়ে ৪৩ রান। অন্যদিকে ৫৭ বলে ৫ চার ও ৪ ছয়ে ডেলপোর্ট করেছেন ৭১ রান। দু’জনের জুটিতে তখন স্কোর বোর্ডে ১৯ ওভারে ১৬৭ রান। ঠিক তখনই বিপিএলের চলতি আসরের তৃতীয় হ্যাটট্রিক করেন রাসেল। শুরু মুশফিককে দিয়ে। পরের বলেই ডেলপোর্ট ও তৃতীয় শিকার সানাকা। শেষ পর্যন্ত ভাইকিংসের ইনিংস থামে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৭৪ রানে।