ডিবি পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর নিখোঁজ যশোর শহর শাখা ছাত্রশিবিবের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম দুই লাখ টাকার বিনিময়ে প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। ‘ক্রস ফায়ার’ থেকে রক্ষা পেতে হলে দুই লাখ টাকা দিতে হবে- এসআই খায়েরের এমন দাবির প্রেক্ষিতে ওই টাকা দেওয়া হয়। টাকা দেওয়ার পর মঙ্গলবার গভীর রাতে পায়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় জাহিদকে উদ্ধার দেখানো হয়। জেলা জামায়াত ও শিবিবের একাধিক নেতা টাকা দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
জানা গেছে, শিবিরের যশোর শহর শাখার সভাপতি জাহিদুল ইসলাম মন্ডল মঙ্গলবার ফজরের নামাজের পর মোটরসাইকেল নিয়ে সাংগঠনিক কাজে বের হন। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে শহরতলীর পালবাড়ী-চুড়ামনকাটি ভাস্কর্যের মোড় থেকে ডিবি পুলিশের হাতে আটক হন তিনি। এসআই আবুল খায়েরের নেতৃত্বে একটি টিম তাকে আটক করে ডিবি পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে যান। কিন্তু ওই দিন ডিবি পুলিশসহ যশোরের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জাহিদের আটকের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
ওইদিন সকালেই জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাস্টার নুরুন্নবী জানিয়েছিলেন, সাংগঠনিক কাজে বের হলে ভোরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জাহিদকে আটক করে। জাহিদ ডিবি পুলিশের হাতে আটক হয়ে তাদের হেফাজতে ডিবি অফিসেই ছিলেন বলেও মাস্টার নুরুন্নবী দাবি করেন।
ছাত্রশিবিরের যশোর জেলা পশ্চিম শাখার একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জাহিদুল ইসলামকে ডিবি পুলিশ আটক করে তাদের কার্যালয়ে রেখেছিল এ বিষয়ে তারা নিশ্চত ছিলেন। তাদের আশঙ্কা ছিল এভাবে বর্তমানে যাদেরকে আটক করা হচ্ছে তাদের বেশিরভাগ মানুষের দুইএকদিন পর লাশ মেলে অথবা গুম হয়ে যায়। এমন আশঙ্কা থেকেই তারা জাহিদকে রক্ষার বিষয় নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করতে থাকে। জাহিদকে ‘ক্রসফায়ার’ দেওয়া হতে পারে এমন ইঙ্গিতও দিয়েছিল পুলিশ। এরপর থেকে তারা আরো জোরালো চেষ্টা করতে থাকেন। এ চেষ্টায় শিবিরের থেকেও জামায়াতের অবদান বেশি ছিল বলে এ শিবির নেতার দাবি’।
তিনি বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত পুলিশকে দুই লাখ টাকায় ম্যানেজ করা হয়। দুই লাখ টাকার বিনিময়ে জাহিদের বড় ধরনের কোনো ক্ষতি করা হবে না বলেও পুলিশ নিশ্চিত করে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত দুই লাখ টাকা নিয়ে পুলিশ নিশ্চুপ ছিলো। আর এ টাকা জাহিদের পরিবার নয়, সাংগঠনিকভাবেই ম্যানেজ করা হয়’।
কথা হয় ছাত্রশিবির যশোর শহর শাখার সেক্রেটারি আজহারুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘টাকা লেনদেনের বিষয়টি মুরব্বিরা (জামায়াত নেতারা) জানেন। তারাই বিষয়টি দেখেছেন। এ বিষয়ে আমি আর কী বলবো?।
যশোর জেলা জামায়াতের একজন শূরা সদস্য বলেন, ‘রাত সাড়ে ১০টার পর পুলিশের পক্ষ থেকে জামায়াতের দেওয়া টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য ডাকা হয়। ওই সময় পুলিশ বলেছিল জাহিদকে রক্ষা করা তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু জামায়াত পুলিশের কথায় কর্ণপাত না করে নীরবতা পালন করে। টাকার পরিমাণ বাড়ানোর জন্য এটা পুলিশের কৌশল ছিলো বলেও এ জামায়াত নেতা দাবি করেন। এ দুই লাখ টাকার বেশির ভাগই এসআই খায়েরের পকেটে গেছে বলে জামায়াত-শিবির নেতারা দাবি করেছেন।
শিবির নেতা জাহিদের পিতা আবুল খায়ের এ বিষয়ে বলেন, ‘কীভাবে জাহিদকে প্রাণে রক্ষা করা হয়েছে সেটা বড় কথা নয়। আমার ছেলে বেঁচে আছে সেটাই বড় কথা।
তিনি বলেন, ‘পুলিশকে টাকা দেওয়ার কথা আমি শুনেছি। ওই বিষয়টি সংগঠন (শিবির) নিয়ন্ত্রণ করেছে। টাকা দেওয়া থেকে শুরু করে যা কিছুই হয়েছে তা করেছে সংগঠনের লোকজন’।
মঙ্গলবার রাত একটার দিকে জাহিদুল ইসলামকে যশোর সদর উপজেলার শ্যামনগরে নিয়ে পায়ের মাংসপেশীতে গুলি করা হয়। অস্ত্র ও বোমা উদ্ধার দেখানো হয়। রাতেই তাকে আটক দেখিয়ে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার তার পায়ে অস্ত্রপাচার করা হয়েছে। জাহিদের নামে এসআই আবুল খায়ের বাদী হয়ে যশোর কোতয়ালী থানায় একটি মামলাও করেছেন।
জাহিদকে সকালে আটক করা এবং টাকা দেওয়ার বিষয়টি এখন জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীসহ অনেকের কাছে স্পষ্ট বলেও সরকারি এমএম কলেজ শাখা ছাত্র শিবিরের এক নেতার দাবি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক জামায়াত-শিবির নেতা বলেছেন, এসআই খায়ের এমন ধুরন্দর পুলিশ কর্মকর্তা যার বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার বিষয়টি সরাসরি অভিযোগ করা কঠিন। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে গেলে তাকেও জাহিদের মতো অবস্থা বরণ করতে হতে পারে।
এ বিষয়ে কথা হয় যশোর ডিবি পুলিশের এসআই আবুল খায়েরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘টাকা লেনদের বিষয়ে আমার সঙ্গে কারো কথা হয়নি। আর মঙ্গলবার সকালে জাহিদকে আটকের বিষয়টিও তিনি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, সকালে আটক নয়, গভীর রাতে অস্ত্র উদ্ধারের সময় জাহিদ গুলিবিদ্ধ হলে তাকে আটক করা হয়।’
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক শেখ বলেন, ‘টাকা লেনদেনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। অস্ত্র উদ্ধারের সময় ডিবি পুলিশ আমার সহযোগিতা চেয়েছিল’।
যশোর পুলিশের মুখপাত্র ও এএসপি রেশমা শারমিন শীর্ষ নিউজকে বলেন, ‘টাকা লেনদেনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এটি মিথ্যা অভিযোগ’। সূত্র: শীর্ষ নিউজ ডটকম