চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৪৫০০ কোটি টাকা। দেশে বর্তমানে বড় কোন বিনিয়োগ না থাকায় উদ্যোক্তারা সঞ্চয়পত্র ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগে ঝুঁকছেন। জানা গেছে, চলমান পরিস্থিতিতে স্থবির হয়ে পড়েছে সামগ্রিক বিনিয়োগ। আমানতকারীদের টাকা খাটাতে পারছে না ব্যাংকগুলো। এ পরিস্থিতিতে পরিচালনব্যয় কমাতে আমানতকারীদের নিরুৎসাহিত করতে কমানো হচ্ছে সুদের হার। এদিকে পুঁজিবাজারেও দোদুল্যমান পরিস্থিতি। কিছুদিন বাড়ে। আবার কিছুদিন পতনমুখী বাজার। এসব পরিস্থিতিতে আমানতকারীদের শেষ ভরসা এখন সঞ্চয়পত্র। অনেকেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছে। আর এ সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকার চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসেই (জুলাই-আগস্ট) মুদ্রাবাজার থেকে উত্তোলন করেছে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, চলমান পরিস্থিতিতে দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ নেই। নতুন বিনিয়োগ আসছে না। চলতি বিনিয়োগও থমকে গেছে। এ পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর লোকসান কমাতে হলে পরিচালনব্যয় কমানোর কোন বিকল্প নেই। আর পরিচালনব্যয় কমানোর জন্য আমানতের সুদের হার কমানো হচ্ছে। দেশের প্রথম প্রজন্মের একটি ব্যাংকের এমডি জানিয়েছেন, আমানতকারীরা যেমন সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছে, ব্যাংকগুলোও বিকল্প পথ খুঁজছে। অপেক্ষাকৃত বেশি সুদে আমানত নিয়ে কম সুদে সরকারকে ঋণের যোগান দিতে হচ্ছে। জানা গেছে, সরকার বাজেটঘাটতি অর্থায়নে মূলত প্রধান দু’টি খাত থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। একটি অভ্যন্তরীণ, অন্যটি বৈদেশিক খাত। অভ্যন্তরীণ খাতের মধ্যে একটি ব্যাংকিং খাত, অন্যটি ব্যাংকবহির্ভূত খাত। ব্যাংকবহির্ভূত খাতের মধ্যে অন্যতম উৎস হলো সঞ্চয়পত্র। সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকার বাজেটঘাটতি অর্থায়নের সংস্থান করে থাকে। বাজেটঘাটতি অর্থায়নে প্রায় দুই বছর ধরে সঞ্চয়পত্র থেকে কাঙ্ক্ষিত সাড়া মেলেনি; কিন্তু চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই আমানতাকারীরা সঞ্চয়পত্রমুখী হয়ে পড়েছে। এর অন্যতম কারণ হলো ব্যাংকের আমানতের সুদের হার কমে যাওয়া। বিনিয়োগ মন্দার কারণে ব্যাংকগুলো আমানতের সুদের হার কমিয়ে দিয়েছে। বর্তমান বেশির ভাগ ব্যাংক আমানতের সুদের হার ১০ শতাংশের নিচে অবস্থান করছে। কিন্তু সঞ্চয়পত্রের সুদের হার এখনও ১২ শতাংশের ওপরে রয়েছে। আমানতকারীরা বেশি মুনাফার আসায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যায়, শুধু গত দুই মাসে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ হয়েছে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল এক হাজার ৩১৬ কোটি টাকা। দুই মাসে এ খাত থেকে সরকারের ঋণ বেড়েছে প্রায় ২২ গুণ। ব্যাংকাররা বলছেন, আমানতের সুদের হার কমানো ছাড়া তাদের সামনে আর কোন বিকল্প নেই। কারণ দেশে বিনিয়োগ শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে। ব্যাংকগুলোর হাতে সরকারের বিপুল অঙ্কের ঋণ নেয়ার পরও হাতে উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য ১০০ টাকা আমানত সংগ্রহ করলে ব্যাংকগুলোকে ১৯ টাকা বাধ্যতামূলকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সংরক্ষণ করতে হয়। সে হিসাবে ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ আমানত সংগ্রহ করেছে তার বিপরীতে ৭৩ হাজার কোটি টাকা বাধ্যতামূলক সংরক্ষণ করার কথা ছিল। কিন্তু ব্যাংকগুলোর হাতে রয়েছে দুই লাখ সাড়ে ২৪ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোর হাতে উদ্বৃত্ত রয়েছে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। যদিও এর বেশির ভাগ অংশই সরকার ঋণ হিসেবে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে তুলে নিয়েছে। এদিকে আমানতের সুদের হার কমে যাওয়ায় সামগ্রিক আমানতের পরিমাণও কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত জুলাই মাসে আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ১৫%, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৭%। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে সামনে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সঙ্কট দেখা দেবে। বিনিয়োগ করার মতো তহবিল তাদের হাতে থাকবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।