জিসান আহমেদ, চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি(২৭.১০.১৪) আশিকুর রহমান জীবন। রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পীরগাজা গ্রামের অধিবাসি। পেশায় একজন এনজিও কর্মী। চাকুরির সুবাদে বাস করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের পলাশ পাড়ায়। গতকাল রাতে সিমান্ত একপ্রেস ট্রেনে করে বাড়িতে যাওয়ার জন্য রাত দশ টায় চুয়াডাঙ্গা রেল ষ্টেশনে আসেন তিনি।
প্রচন্ড শীতের মাঝে ষ্টেশনের প্লাটফর্মে দাড়িয়ে থাকতে কষ্ট হওয়ায় হাটতে শুরু করেন উল্লেখিত ষ্টেশনের বিশ্রামাগারের দিকে।
প্রথম শ্রেণির বিশ্রামাগারে তালা লাগানো দেখে যান দ্বিতীয় শ্রেনীর বিশ্রামাগারে। দ্বিতীয় শ্রেনীর বিশ্রামাগারে গিয়ে দেখেন, বিশ্রামাগারে রাখা চেয়ারগুলো কোন ভাবেই বসার উপযুক্ত নয়। কোন চেয়ার অর্ধেকটা কোনটা আবার সম্পুর্ন ভাঙ্গা। আর টেবিলের অব¯’াতো অবর্ননীয়। সমগ্র বিশ্রামাগারের পরিবেশ দেখলে মনে হয় গত এক বছর ধরে কেউ এটাকে পরিস্কারের চেষ্টাটা পর্যন্ত করেনি।
বিশ্রামাগারের টয়লেটের কথাতো না বললেই নয়। টয়লেটের প্যান থেকে শুরু করে টয়লেটের ফোর পর্যন্ত আ”ছাদিত রয়েছে মানুষের মলে। প্রচন্ড দূগন্ধ ও স্যাতস্যাতে পরিবেশ সমৃদ্ধ বিশ্রামাগার থেকে বের হয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে শেষ রক্ষা হয় তার।
বাধ্য হয়ে ষ্টেশনে অব¯’ানরত পাটি ব্যবসায়ির থেকে দশ টাকা ভাড়ার বিনিময়ে একটি পাটি ভাড়া করে ট্রেন আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে থাকেন তিনি। এভাবেই প্রচন্ড আক্ষেপের সাথে ভ্রমনপূর্ব তীক্ত অভিজ্ঞতার কথাগুলো বলেন তিনি।
১৮৫৭ সালে বাংলাদেশে ¯’াপিত প্রথম সারির রেলওয়ে ষ্টেশনগুলোর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে ষ্টেশন অন্যতম। যখন চুয়াডাঙ্গার পাশ্ববর্তী জেলার মানুষ গাড়ি ভাড়া করে চুয়াডাঙ্গায় আসতো ট্রেন দেখতে তখন চুয়াডাঙ্গার মানুষ ভ্রমন করতেন ট্রেনের মাধ্যমে। এক শতাব্দিরও বেশি পুরাতন এই চুয়াডাঙ্গা রেল ষ্টেশনের আজ করুন দশা। যেন দেখার কেউই নেই।
নাম প্রকাশে অনি”ছুক ষ্টেশন প্লাটফর্মে অব¯’ানরত কিছু টি ষ্টলের মালিক বলেন, বিশ্রামাগার ঠিক করলে পাটির রমরমা ব্যবসা চলবে কিভাবে? এখন শীতের মৌসুম, পাটির ভাড়া দশ টাকা সাথে কম্বল নিলে আরো দশ টাকা। পাটিতে অব¯’ানকারী এক একজনের থেকে যদি বিশ টাকা করে নেওয়া হয় তবে সারাদিনে ষ্টেশনে অব¯’ানকারী যাত্রিদের কাছ থেকে পাটি বিক্রেতার আয় কয়েক হাজার টাকা! বিনা পরিশ্রমে কাঁচা টাকা আয়ের লোভ কি কেউ সামলাতে পারে?
পাটির ভাড়া ব্যবসার সাথে বিশ্রামাগার মেরামত না হওয়ার সাথে একটি অদৃশ্য সম্পর্ক দেখতে পান অনেকেই।
চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে ষ্টেশনের প্লাটফর্ম ও বিশ্রামাগার পরিস্কারের জন্য একজন সুইপারের পদায়ন থাকলেও তিনি নাকি চুয়াডাঙ্গা ও দর্শনা উভয় ষ্টেশন একাই পরিস্কার করে থাকেন। ফলে সঠিক সময়মত দায়িত্বপ্রাপ্ত সুইপার ষ্টেশনের প্লাটফর্ম ও বিশ্রামাগার পরিস্কার করার যথাযথ সময় পাননা।
অথচ সর্বশেষ কবে সেই সুইপার ষ্টেশন পরিস্কার করেছিল তা ষ্টেশনের আশে পাশে অব¯’ানকারী কেউ বলতে পারেনা।
জরাজীর্ন এই বিশ্রামাগারটির মেরামত ও আধুনিকায়ন করাটা এখন সময়ের দাবি হয়ে দাড়িয়েছে। প্রচন্ড শীত সঙ্গে হাড় কাপানো শৈত প্রবাহের কারনে ষ্টেশনে অব¯’ানরত যাত্রিদেও পোহাতে হয় নিদারুন কষ্ট।
প্রচন্ড শীত থেকে রক্ষা পেতে ষ্টেশনে অব¯’ানরত যাত্রিরা বাধ্য হয়ে পাটি ও কম্বল ভাড়া করেন। কেউবা আবার ষ্টেশন সংলগ্ন দোকানগুলোতে ভিড় করেন। কেউবা আবার যত্রতত্র পায়চারি করতে গিয়ে ছিনতাইয়ের কবলে পরেন। যার ফলে আইনশৃঙ্খলা ব্য¯’ার চরম অবনতি ঘটছে উল্লেখিত ¯’ানসহ পাশ্ববর্তী এলাকাগুলোতে। সঙ্ঘবদ্ধ একটি উঠতি বয়সি চক্র আছে যারা ষ্টেশনের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করে এবং সুযোগ বুঝে অপরিচিত কোন লোক পেলেই ছিনতাই করে পালিয়ে যায়।
রেলওয়ে যাত্রি সাধারনের ভ্রমনপূর্ব নিরাপত্তা, নিরাপদ বিচরন ও প্লাটফর্মে নিরাপদে অব¯’ানের লক্ষ্যে চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে ষ্টেশনের বিশ্রামারটি মেরামত, পয়নিস্কাশন ব্যব¯’ার মান উন্নয়ন ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করছে সবাই।